Ajker Patrika

কিসের ভয়ে জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কিত ২৫টি বই নিষিদ্ধ করল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৫৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত ২৫টি বই নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুধু ভারতীয় লেখক নয়, বিদেশি লেখকদের লেখা বইও আছে এই তালিকায়। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে বিভ্রান্তিকর বলছেন ব্রিটিশ লেখিকা ভিক্টোরিয়া শোফিল্ড। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারে এ নিয়ে তাঁর লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে তিনি লিখেছেন, বাক্‌স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আর সাহিত্য তার এক সুপ্রতিষ্ঠিত স্তম্ভ, যা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে একটা কণ্ঠস্বর দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, জম্মু ও কাশ্মীর বিষয়ক আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় লেখকদের লেখা ২৫টি বই নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে তা ভারতের সংবিধানের পরিপন্থী। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার ছয় বছর পরে, সেই জায়গাটির বিষয়ে নতুন নিয়মকানুন ও নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হচ্ছে, যা সত্যিই বিভ্রান্তিকর।

তিনি আরও বলেন, গত ছয় বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, পর্যটকেরা ফিরে আসছেন এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা কমছে (এই বছরের এপ্রিল মাসে পেহেলগামে হওয়া নির্মম সন্ত্রাসী হামলা বাদে)। রাস্তা এবং রেললাইন নির্মাণের ফলে যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। তাহলে, হঠাৎ করে কেন এই নিষেধাজ্ঞা?—প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নিষিদ্ধ হওয়া ২৫টি বইয়ের মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়া শোফিল্ডের লেখা ‘কাশ্মীর ইন কনফ্লিক্ট’। ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ বই অত্যন্ত সম্মানিত ও উঁচু মানের লেখকদের লেখা। তাঁদের কাজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ভারত সরকার কেন এখন এই বইগুলোর ব্যাপারে এত বেশি উদ্বিগ্ন? ১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চরম সময়েও এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন এমন কী ঘটেছে যে সরকার নিজেকে এত অনিরাপদ মনে করছে?

মুহাম্মদ ইউসুফ সরাফের ‘কাশ্মীরিজ ফাইট ফর ফ্রিডম’-এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এটি ১৯৭০-এর দশকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম খণ্ডে ১৮১৯-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজা শাসিত অঞ্চলের ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি জম্মু ও কাশ্মীরের ঐতিহাসিক দলিল অংশ। দ্বিতীয় খণ্ডটি ১৯৪৭-১৯৭৮ সালের ঘটনাগুলোর ওপর আলোকপাত করে। এতে ১৯২৩ সালে বারামুল্লায় জন্ম নেওয়া একজন মুসলিম কাশ্মীরির পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে (যিনি পরে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (পিওকে)-এর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হয়েছিলেন), তবে এই বইটিরও জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।

প্রয়াত এ.কে. নুরানির লেখা ‘দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট ১৯৪৭-২০১০’-এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী, একজন নেতৃস্থানীয় সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার ছিলেন। বইটির মূল অংশ হলো ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি যেসব প্রবন্ধ লিখেছিলেন সেগুলোর সংগ্রহ, যেখানে তিনি সমসাময়িক উৎস থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে পাঠকরা বিতর্কের জটিলতা সম্পর্কে নিজেদের মতামত তৈরি করতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. ক্রিস্টোফার স্নেডেনের লেখা ‘ইন্ডিপেনডেন্ট কাশ্মীর?’ নামের বইটিতে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে কাশ্মীরের ইতিহাস এবং কাশ্মীরিদের দৃঢ় মনোবল ও সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। হয়তো ভারত সরকার বইটির ভাবনাকে পছন্দ নাও করতে পারে, কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় ওই রাজ্য কিছুদিনের জন্য স্বাধীন ছিল—এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি বোঝা খুবই জরুরি।

তিনি প্রশ্ন করেন, এই ধরনের তথ্য ও ব্যাখ্যা না থাকলে ভবিষ্যতের মানুষেরা কীভাবে বুঝবে যে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত সরকারের সঙ্গে একত্রিত করা কেন এত কঠিন কাজ?

তিনি বলেন, ভারতীয় লেখক অধ্যাপক সুমন্ত্র বসুর বই, ‘কনটেস্টেড ল্যান্ডস’ এবং ‘কাশ্মীর অ্যাট দ্য ক্রসরোডস: ইনসাইড অ্যা টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি কনফ্লিক্ট’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াও অপ্রত্যাশিত। তিনি সুভাষ চন্দ্র বসুর বংশধর সুমন্ত্র বসু। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে ২০ বছর অধ্যাপনার পর, বসু বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশের ক্রেয়া ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক এবং তুলনামূলক অধ্যয়নের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৯৩ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ভিক্টোরিয়া বলেন, সুমন্ত্র বসু এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞেরা, যারা এই সংঘাত শেষ হতে চান, তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য এসব বইয়ের মাধ্যমে শান্তির পথ দেখানো, যাতে সব ধরনের হিংসা বন্ধ হয়।

সন্ত্রাসবাদকে বীরত্ব হিসেবে দেখানো, ভুক্তভোগী মানসিকতা উসকে দেওয়া এবং অভিযোগের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে—এসব অভিযোগ তুলে বইগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে ভারতের বিজেপি সরকার। কিন্তু তা সত্য নয় বলে দাবি করছেন ভিক্টোরিয়া। তাঁর ভাষ্য—বইগুলো কেবল এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে কেন এই ধরনের মানসিকতা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, আমার নিজের বই ‘কাশ্মীর ইন কনফ্লিক্ট’ (১৯৯৬ সালে প্রথম প্রকাশিত এবং এখন পঞ্চম সংস্করণে এসেছে) সন্ত্রাসবাদের কোনো প্রশংসা করে না। বরং এতে জম্মু ও কাশ্মীরের অসন্তোষের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। বইটি ইতিহাস বিকৃত করে না, বরং বিভিন্ন পক্ষের কথা তুলে ধরে। কেন এই সমস্যা শুরু হলো, কেন এখনো সমাধান হয়নি তা তুলে ধরা হয়েছে। এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যে সবার মধ্যে আলোচনা জরুরি তা-ই বলা হয়েছে বইটিতে।

ভারতের যেসব লেখকের বই নিষিদ্ধ হয়েছে তাদের ব্যাপারে উদ্বেগও জানিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। তিনি বলেন, অনুরাধা ভাসিন ও অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ প্রচারের অভিযোগে মামলা হওয়ার ভয় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বহু দেশে বহুবার বই নিষিদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই বিতর্কিত পন্থা কখনোই তেমন কাজে লাগেনি। বরং কেন এত কড়াকড়ি তা পাঠকের মনে আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ কাজাখস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মধ্য এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কাজাখস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। আর এই লক্ষ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গঠিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডে’ যোগ দিচ্ছে কাজাখস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প জানিয়েছেন—তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমারত তোকায়েভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেব। এই শক্তিশালী জোটে আরও অনেক দেশ যোগ দিতে চাচ্ছে।’

কাজাখ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিষয়টি আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আব্রাহাম চুক্তিতে আমাদের যোগদান কাজাখস্তানের বৈদেশিক নীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ধারাবাহিকতা—যা সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে।’

কাজাখস্তান ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। ফলে এ উদ্যোগটি মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, বিষয়টি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের সীমায় আটকে নেই। তিনি বলেন, ‘এটা আরও উন্নত ধরনের সম্পর্ক, যা চুক্তিতে থাকা সব দেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করে। এর মাধ্যমে তারা নানা অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।’

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভসহ মধ্য এশিয়ার আরও চার দেশের নেতা—কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন রাশিয়ার প্রভাবাধীন ও বর্তমানে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকা এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে উপস্থিত কিছু দেশও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে...আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এসব ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফ্লোরিডায় এক ব্যবসায়ী ফোরামে বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার জন্য। যদিও তিনি তখন কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম জানায়, দেশটি হলো কাজাখস্তান।

বিষয়টি নিয়ে অবগত আরেক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে কাজাখস্তানের যোগদান আব্রাহাম চুক্তিকে নতুন গতি দেবে, যা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্থবির হয়ে আছে। ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে যেভাবে চুক্তিটি মধ্যস্থ করেছিলেন, সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান।

এর আগে, ২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই বছরের শেষে মরক্কোও চুক্তিতে যোগ দেয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবও অবশেষে এই চুক্তিতে যোগ দেবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে রিয়াদ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তত কোনো রূপরেখা ছাড়া এগোতে রাজি হয়নি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগামী ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউস সফর করবেন বলে জানা গেছে। মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ—যেমন আজারবাইজান ও উজবেকিস্তান, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে—তাদেরও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্য দেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই চুক্তিটিকেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক নীতি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কাজাখস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম (৬৯ দশমিক ৩), তারপরে খ্রিষ্টান (১৭ দশমিক ২ শতাংশ)। জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো ধর্ম মানে না বলে জানিয়েছে এবং ১১ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। অল্পসংখ্যক মানুষ অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করে এবং একটি ছোট অংশ (২ দশমিক ২৫ম শতাংশ) নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরানে ইসরায়েলি শক্তিশালী হামলার পুরো দায়িত্বে ছিলাম আমি: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রথম ধাপের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইসরায়েল একাই হামলা চালিয়েছিল—যুক্তরাষ্ট্রের আগের এই দাবি অস্বীকার করলেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পুরো বিষয়টির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। খবর আল–জাজিরার।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল প্রথমে হামলা করেছিল। সেই হামলা ছিল ভীষণ শক্তিশালী। আমি পুরোপুরি বিষয়টির দায়িত্বে ছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন ইসরায়েল প্রথম ইরানে হামলা চালায়, সেটি ছিল ইসরায়েলের জন্য দারুণ এক দিন। ওই হামলায় যত ক্ষতি হয়েছে, বাকি সব হামলার মিলেও তত হয়নি।’

এই মন্তব্যের সময় ট্রাম্প রিপাবলিকানদের আহ্বান জানান, সিনেটে আইন পাসের নিয়ম পরিবর্তন করে যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আইন পাস করা যায়—এমন পরিবর্তন আনা হয়। তিনি যুক্তি দেন, দলকে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক যেভাবে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন। জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে। পরে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হয় এবং ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে।

যুদ্ধের প্রথম দিকেই ওয়াশিংটন জানায়, ইসরায়েল একাই এই হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে তেহরানকে সতর্ক করা হয় যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও আঞ্চলিক স্বার্থের ওপর পাল্টা হামলা না চালায়। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে কোনো হামলায় অংশ নেয়নি। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা।’

পরে ইরান কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। এরপর থেকে ট্রাম্প যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে গর্ব করতে থাকেন। তিনি বারবার দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।’

তবে বৃহস্পতিবার তিনি আরও এগিয়ে বললেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই তিনিই পুরো বিষয়টি পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে তেহরান এখনো প্রকাশ্যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির বিস্তারিত দেয়নি। তবে ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, বহু বছরের অর্জিত জ্ঞানের কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনো টিকে আছে। ইরানের মজুত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।

ট্রাম্প সব সময় নিজেক ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন এবং নতুন যুদ্ধ শুরু না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে তার নিজ দলের ভেতরের অনেকেই চাপ দিচ্ছিলেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে না জড়ায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করতে চান, যার মাধ্যমে তেহরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে।

দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন এবং বারবার বলেন, তিনি তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা চান। তবে বর্তমানে সেই আলোচনায় কোনো গতি নেই। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে এখন ইরান ইস্যুতে তেমন কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। জুন মাসে দুই দেশের কর্মকর্তাদের এক দফা আলোচনায় বসার কথা ছিল, কিন্তু তার কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তেহরানে হামলা চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোয়াড প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সুদানের আরএসএফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি

সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত মধ্যস্থতাকারী জোট ‘কোয়াড’ প্রস্তাবিত মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আরএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা শুধু যুদ্ধবিরতিতে নয়, বরং সুদানে শত্রুতার অবসান ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।

আরএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এই চুক্তি বাস্তবায়ন ও অবিলম্বে আলোচনায় বসার অপেক্ষায় আছে, যাতে সুদানের সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান হয় এবং জনগণের দুর্ভোগের ইতি ঘটে। এ ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে, যখন আরএসএফ সম্প্রতি দখল নিয়েছে এল-ফাশের শহরের, যা গত দেড় বছর ধরে অবরুদ্ধ ছিল এবং পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।

তবে সুদানি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী তখনই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে, যদি আরএসএফ সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক এলাকা থেকে সরে যায় এবং পূর্ববর্তী শান্তিচুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র সমর্পণ করে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকাবিষয়ক উপদেষ্টা মাসাদ বোলস জানান, যুক্তরাষ্ট্র সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফ—উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে দ্রুত একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা গত প্রায় ১০ দিন ধরে দুই পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি, বিস্তারিত চূড়ান্ত করার আশায়।’ বোলসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, এরপর নয় মাসের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুক্ত আছে। এই চার দেশকে সম্মিলিতভাবে ‘কোয়াড’ বলা হয়।

দেশটিতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নামায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, অতিরিক্ত মানুষের আগমনে আশ্রয়শিবিরগুলো ভয়াবহ চাপের মুখে পড়েছে।

আজ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামিক রিলিফ এক বিবৃতিতে জানায়, যেসব কমিউনিটি রান্নাঘর ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোর শেষ ভরসা, সেগুলো এখন ধসে পড়ার পথে। সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, সুদানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ৮৩ শতাংশ পরিবার এখন পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল বুধবার সুদানের ডাক্তার্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, এল-ফাশেরের পশ্চিমের বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলো—বিশেষত তাওইলা, কুরমা ও গলো এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ এসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এল-ফাশের দখলের পর আরএসএফ ওই অঞ্চলের একটি হাসপাতালে হামলা চালায়, যাতে ৪৫০ জনের বেশি নিহত হয়। এ ছাড়া আরএসএফ বাহিনী ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ও যৌন সহিংসতার ঘটনাও ঘটিয়েছে।

সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালে। দুপক্ষই মূলত একসময় মিত্র ছিল, যারা ২০১৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তরপ্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে ছিল। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এরচেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্যমতে, বর্তমানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, শুধু এক সপ্তাহেই এল-ফাশের থেকে ৭০ হাজার মানুষ পালিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে পৌঁছেছে নর্দান স্টেটের আল-আফফাদ বাস্তুচ্যুত শিবিরে, যা রাজধানী খার্তুম থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে।

পালিয়ে আসা শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান মোহাম্মদ বলেন, ‘এল-ফাশের ছাড়ার পথে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। অনেকে ক্লান্তিতে ও নির্যাতনে মারা গেছেন।’

আরও একজন বাস্তুচ্যুত নারী রাওদা মোহাম্মদ বলেন, এল-ফাশেরে আকাশে সারাক্ষণ ড্রোন ঘোরে। কখন যে হামলা হয়, বুঝতেই পারা যায় না। খাবার বলতে কিছুই ছিল না—মানুষ শুধু বাদাম তেলের অবশিষ্ট অংশ খেয়ে বেঁচে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি অবসরে যাচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি

২০২০ সালে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ডায়াসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন স্পিকারের আসনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী শক্ত মুখে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। দৃশ্যত এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ঘটনাটি রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নেয়।

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার। আজ এই ডেমোক্র্যাট নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। চার দশকের বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবন শেষে তিনি কংগ্রেস থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন।

৮৫ বছর বয়সী পেলোসি জানিয়েছেন, তাঁর বর্তমান মেয়াদ (২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) শেষ হলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে।

ভিডিওবার্তায় পেলোসি বলেন, ‘আমরা ইতিহাস গড়েছি, অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছি আর এখন আমাদের গণতন্ত্রের সক্রিয় অংশীদার হয়ে থাকতে হবে এবং আমেরিকান আদর্শ রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

পেলোসির উত্থান ও ক্ষমতা

১৯৮৭ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো থেকে পেলোসি প্রথমবার কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং দ্রুতই তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির শীর্ষ সারিতে উঠে আসেন।

২০০৭ সালে পেলোসি ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব পান। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। পরে দল পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ২০১৯ সালে পেলোসি আবারও স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্টের পর প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারক্রমে স্পিকার তৃতীয় স্থানে থাকেন। এ পদে থেকেই পেলোসি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিক প্রেসিডেন্টের নীতি-কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কিংবা বাধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ বা স্বাস্থ্যসেবা আইন পাসে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় পেলোসি পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিল পাসেও বড় ভূমিকা রাখেন।

তবে পেলোসি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে। ২০২০ সালে ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে পেলোসি প্রকাশ্যে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এ ঘটনা আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই দফা অভিশংসনপ্রক্রিয়া (ইমপিচমেন্ট) পরিচালনায়ও পেলোসি ছিলেন অগ্রভাগে। প্রথমবার ২০১৯ সালে ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া ও সামরিক সহায়তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে। দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার অভিযোগে। তবে প্রতিবারই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ট্রাম্প রক্ষা পান।

বাইডেনের শাসনামলে পেলোসি সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও ডেমোক্র্যাটদের বেশ কয়েকটি বড় আইন পাস করাতে সক্ষম হন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি পরিষদ দুই বছরের কম সময়ে কোভিড-১৯ ত্রাণ প্যাকেজ, অবকাঠামো খাতে দ্বিদলীয় ব্যয় বিল, বহু ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু ও সামাজিক খরচ কর্মসূচি এবং সমকামী বিবাহ সুরক্ষা আইন পাস করে।

২০২২ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি হাকিম জেফ্রিস পেলোসির স্থলাভিষিক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাট দলের হাউস নেতা হন। পেলোসি কংগ্রেসের বাইরেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘প্রপোজিশন-৫০’-এর পক্ষে কাজ করেছেন। এর লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে অন্তত পাঁচটি আসন পুনরুদ্ধার করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত