Ajker Patrika

বিলাসবহুল জুয়েলারি মালিকের ২৭৯৫ কোটি টাকার প্রতারণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ০৩
জুয়েলারি ব্র্যান্ড ভাশি-এর পলাতক মালিক ভাশি ডোমিঙ্গেজ। ছবি: বিবিসি
জুয়েলারি ব্র্যান্ড ভাশি-এর পলাতক মালিক ভাশি ডোমিঙ্গেজ। ছবি: বিবিসি

যুক্তরাজ্যে এক অভূতপূর্ব হিরা কেলেঙ্কারির নায়ক ভাশি ডোমিঙ্গেজ। বিবিসি প্যানোরামার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গহনার দোকানে কর্মচারীদেরই মিথ্যা ক্রেতা সাজিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতেন ভাশি। এই কৌশলে নতুন বিনিয়োগ টেনে আনা সম্ভব হলেও ব্যবসা ধসে পড়ে ২০২৩ সালে, ১৭ কোটি পাউন্ড (২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকারও বেশি) দেনা রেখে।

ভাশি ডোমিঙ্গেজ বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কোম্পানির কাছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড মূল্যের হিরা মজুত আছে। কিন্তু আসলে মজুত সেই হিরার দাম ছিল মাত্র এক লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি। এমন মিথ্যা আশ্বাসে শত শত বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হন।

গ্ল্যামার আর প্রতারণার সমন্বয়

স্পেনের নাগরিক ভাশি ডোমিঙ্গেজ প্রথমে ধনি গ্রাহকদের কাছে হিরা সরবরাহ করতেন। পরে তিনি লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে ‘ভাশি’ নামে চেইন জুয়েলারি স্টোর খুলে ব্র্যান্ড গড়ে তোলেন। ক্রেতাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো—তাঁরা নিজেরাই ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং দোকানেই গয়না তৈরি হতে দেখবেন। কম দামে সেরা হিরা—এই প্রলোভনে অনেকেই আকৃষ্ট হন।

মিডিয়ায় উপস্থিতি, বিলাসবহুল শো-রুম আর ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব দিয়ে ডোমিঙ্গেজ দ্রুত আস্থা অর্জন করেন। এর ফলে ‘প্রেট অ্যা মাঞ্জার’-এর সাবেক প্রধান নির্বাহী ক্লাইভ শ্লি থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী বিলিয়নিয়ার জন কডওয়েল—এমন অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীও তার ফাঁদে পড়েন। এমনকি জিবি নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক শ্নাইডারও প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেন।

ভুয়া বিক্রি আর সাজানো দৃশ্য

বাইরের চাকচিক্যের ভেতরে ছিল ভিন্ন ছবি। ব্যস্ততম লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেনের ফ্ল্যাগশিপ স্টোরে প্রতিদিন হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা আসতেন। তবু দোকানকে সরগরম দেখাতে কর্মীদের বলা হতো ক্রেতা সেজে কেনাকাটা করতে। কেউ আবার জুয়েলারি তৈরির অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই ভূমিকায় অভিনয় করতেন।

ডোমিঙ্গেজের নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্মীদের পাঠানো এক ই-মেইলে লেখা ছিল—বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ আসতে পারেন, তাই দোকানকে ব্যস্ত দেখাতে হবে। এমনকি গ্রাহকদেরও প্রতারিত করা হতো—নিম্নমানের হিরা কিনে তাদের আসল পরিচয় নম্বর (জিআইএ) মুছে ফেলার মাধ্যমে।

জাল হিসাব আর ভুয়া সম্পদ

২০২১ সালে এই কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি দেখানো হয় ১০ কোটি পাউন্ডের বেশি। অথচ প্রকৃত বিক্রি ছিল মাত্র ৫০ লাখ পাউন্ড। এই ভুয়া হিসাবপত্রের পেছনে ছিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট রজনীকান্ত প্যাটেল। তিনি দাবি করেছেন, ভুল অঙ্কের কথা জানলে তিনি কখনোই নথিতে স্বাক্ষর দিতেন না।

লন্ডনে ভাশি-এর একটি জুয়েলারি দোকান। ছবি: বিবিসি
লন্ডনে ভাশি-এর একটি জুয়েলারি দোকান। ছবি: বিবিসি

বিলাসবহুল জীবন আর রহস্যময় অন্তর্ধান

কোম্পানি যখন আর্থিক সংকটে, তখনো ডোমিঙ্গেজ ল্যাম্বারগিনি গাড়ি ও মেফেয়ারের ফ্ল্যাটে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছিলেন। অবশেষে ২০২৩ সালের এপ্রিলে কোম্পানি পুরোপুরি ধসে পড়ে। আদালত কোম্পানি বন্ধের আদেশ দেওয়ার দিন তিনি দুবাইয়ে পালিয়ে যান। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই।

লিকুইডেটর বেনজি ডাইমেন্ট জানিয়েছেন, কোম্পানিটির দেনা বর্তমানে ১৭ কোটি পাউন্ড, যার মধ্যে ১০ কোটিরও বেশি পাউন্ড বিনিয়োগকারীদের। তবে ব্যাংক নথি ঘেঁটে বিপুল অর্থ বিদেশি অ্যাকাউন্টে সরানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা

সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো—এত বড় প্রতারণার পরও মেট্রোপলিটন পুলিশ কিংবা সিরিয়াস ফ্রড অফিস কোনো তদন্ত শুরু করেনি। বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ, কারণ তাদের মতে—যুক্তরাজ্যে এত বড় প্রতারণা হয়ে গেল, অথচ কেউ দায় নিচ্ছে না।

শেষ পর্যন্ত ভাশি ডোমিঙ্গেজ গ্ল্যামার আর মিথ্যার মোহে শত কোটি পাউন্ড হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা আজও খুঁজে ফিরছেন—এটা কি শুরু থেকেই পরিকল্পিত প্রতারণা ছিল, নাকি এটি ছিল ব্যর্থ ব্যবসার ভরাডুবিতে মরিয়া হয়ে ধাপ্পাবাজি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত