Ajker Patrika

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙছে শত শত বিঘা জমি

শাহীন রহমান, পাবনা 
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙছে শত শত বিঘা জমি

পাবনা শহর থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর এপারে বাংলাবাজার আর ওপারে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট। নদীর পাবনা পাশ ধরে এক কিলোমিটার সামনে এগোলেই চোখে পড়ে ভয়াবহ ভাঙন। বিঘার পর বিঘা কলাবাগান বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। আরও শত শত বিঘা জমি ও চরের বাসিন্দারা রয়েছেন হুমকির মুখে। এর অন্যতম কারণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কুষ্টিয়া থেকে এসে নদীর পাবনা অংশে এই বালু উত্তোলন করছেন আতিকুজ্জামান বিটু নামের এক প্রভাবশালী। তিনি কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের ভাগনে হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

বালু তোলার কারণে পাবনা সদর উপজেলার চরভবানীপুর, জয়েনপুর, খাস জয়েনপুর, চরকুরুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
সম্প্রতি বাংলাবাজার, চরকোষাখালী ও শিলাইদহ ঘাট থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশত ছোট, মাঝারি ও বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাঝনদী ও তীরের কাছাকাছি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনের পর বালু বড় বড় বাল্কহেড দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মাঝনদীতে থাকা বালুবোঝাই বাল্কহেডের মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পাবনা সদরের ভবানীপুরে পদ্মা নদীর পয়েন্ট থেকে বালুবোঝাই করে তাঁরা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মজুতের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নৌপথে এই বালু পৌঁছে দিচ্ছেন বিক্রেতার কাছে। কে বালু কাটছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, মূলত এই বালু বিক্রির মূলে আছেন আতিকুজ্জামান বিটু।

ভবানীপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে কথা হয় কলাচাষি ইসমাইল মণ্ডল ও আসলাম প্রামাণিকের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, কলা হচ্ছে এই চরের প্রধান ফসল। অব্যাহত বালু কাটার কারণে প্রতিদিন কলার বাগান ও ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে।

বাদামচাষি আব্দুল কুদ্দুস ও শাকিল মালিথা জানান, বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যায় না। মারধর ও বাড়িঘর তছনছ করে শাসিয়ে চলে যায়।পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথা বলেন, কুষ্টিয়ার প্রভাবশালীদের কাছে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি শুনেছেন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ভাগনে পরিচয় দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন আতিকুজ্জামান বিটু নামের এক ব্যক্তি।

অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আতিকুজ্জামান ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। 
যোগাযোগ করা হলে নৌ পুলিশের ঈশ্বরদী অংশ দেখভালে নিয়োজিত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার ৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। অবৈধভাবে যেখানেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করা হচ্ছে।

পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওছার হাবীব বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। জরিমানা করা হয় ১ লাখ টাকা। তবে নৌপথে অভিযান চালানোর কারণে প্রশাসন যাওয়ার আগেই বালুদস্যুরা সটকে পড়েন। ফলে আমাদের অভিযান সফল করতে পারি না।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যেই সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। বালুদস্যুদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড করা হচ্ছে।

আত্মীয় পরিচয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবৃৃৃ উল আলম হানিফ বলেন, ‘সেটা বৈধ, কী অবৈধ প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করুন। আমার পরিচয় দিয়ে যদি কেউ কোনো সুযোগ নেয়, আমার কী করার আছে? আমি বা আমার পক্ষ থেকে কখনো কি প্রশাসনকে তদবির করেছি? মাঠের লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে ফোন দেওয়া ঠিক হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত