অরুণ কর্মকার

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
০৫ অক্টোবর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
০৫ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
০৫ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
০৫ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫