Ajker Patrika

জিও ব্যাগে মরণফাঁদ কুয়াকাটা সৈকতে

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
জিও ব্যাগে মরণফাঁদ কুয়াকাটা সৈকতে

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষার নামে বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব। এগুলোর জন্য বালু তোলায় বড় বড় গর্ত (কুয়া) সৃষ্টি হয়েছে। এতে সৈকতের জিরোপয়েন্ট এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় সৈকতে গোসল করতে নামতে সাহস পাচ্ছেন না পর্যটকেরা।

জানা যায়, গত এক মাসে অন্তত তিনজন পর্যটকের সলিলসমাধি হয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রে। এ কারণে পর্যটকেরা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা।

গত ২২ জুলাই সমুদ্রে গোসল করতে নেমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের ফাঁকের কুয়ার পানিতে ডুবে মারা যায় ঢাকার বংশাল থেকে আসা কিশোর নাহিয়ান মাহাদী নাফী (১৫)। গত ২১ আগস্ট তিন বন্ধুর সঙ্গে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক মাহবুবুর রহমান পারভেজ (২৯)। প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা পারভেজের লাশ উদ্ধার করেন।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট বগুড়ার শাজাহানপুর থেকে আসা মো. সবুজ (২৭) নামের এক পর্যটক দুপুরে সহকর্মীদের সঙ্গে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন। ২০ ঘণ্টা পর জেলেদের জালে আটকা পড়া অবস্থায় মেলে ওই পর্যটকের লাশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুলাই ও আগস্ট মাসে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নেমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের সঙ্গে ঢেউয়ের ঝাপটায় আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

ঢাকার সাভার থেকে আসা পর্যটক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে  শুনলাম জিও টিউবের ফাঁকে পড়ে এক পর্যটক মারা গেছেন। এটা কুয়াকাটার জন্য অশনিসংকেত। জিও ব্যাগ ও জিও টিউব পর্যটকদের জন্য বিপজ্জনক। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ 
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে আসা পর্যটক বাদল রায় সাজিদ বলেন, ‘সৈকতের বালু দিয়ে যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এটা তো ক্ষণস্থায়ী। কিছুদিন পর সমুদ্রে মিশে যাবে এই বাঁধ। এটা অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে।’

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ‘সৈকত রক্ষার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড যা করছে তা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সৈকতে গোসলে নেমে এ পর্যন্ত যেকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে তা ওই জিও ব্যাগের কারণেই।’

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতে কোনো চোরাবালি নেই এবং নেই তেমন স্রোতের তীব্রতাও। আমার মনে হচ্ছে, ঢেউয়ের ঝাপটায় পাউবোর জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের সঙ্গে প্রচণ্ড আঘাত লেগে অজ্ঞান হয়ে এসব পর্যটক ভেসে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।’

ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ‘সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের জন্য বালু উত্তোলন করায় সেখানে বড় বড় গর্ত (কুয়া) হয়ে গেছে। পর্যটকেরা ওই গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে কেউ মারা যাচ্ছেন, আবার কেউ আহত হচ্ছেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘সৈকত উন্নয়নের জন্য পাউবোর ডিজাইনেই রয়েছে জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের জন্য সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করে কাজ করার। যেখানে বিপজ্জনক গর্ত রয়েছে, সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকেরা একটু সচেতন ও সাবধান হলেই দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, তেহরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত