Ajker Patrika

বৃষ্টি ও শ্রমিক-সংকটে বিপত্তি

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৮: ১০
বৃষ্টি ও শ্রমিক-সংকটে বিপত্তি

পীরগাছায় কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে ধান ও ভুট্টা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অনেকে পাকা শস্য খেত থেকে বাড়িতে এনে না পারছেন মাড়াই করতে, না পারছেন রোদে শুকাতে। ফলে কাঁচা অবস্থায় স্তূপ করে রাখায় চারা গজিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে মাঠজুড়ে পাকা ধান থাকলেও কৃষকেরা শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না। অতিরিক্ত মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার লোক।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানে ভরপুর। ভুট্টার জমিতে শুকাচ্ছে ভুট্টা। কিন্তু ধান কাটা ও ভুট্টা উত্তোলনের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও মিলছে কিন্তু অতিরিক্ত মজুরির কারণে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, পীরগাছার ৯ ইউনিয়নে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এসব ধানের অধিকাংশ পেকে গেলে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৫ ভাগ কাটা হয়েছে। শ্রমিক-সংকটে বাকি ধান কাটা যাচ্ছে না।

ঝিনিয়া ও পানসিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল হক ও আইনুদ্দি মিয়া জানান, এ বছর ধান চাষে বড় ধরনের লোকসান হচ্ছে। প্রতি ২২ শতাংশ জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কেটে বাড়িতে আনা পর্যন্ত খরচ পড়ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আবার মাড়াই খরচ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পড়ছে। সব মিলয়ে জমিতে আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম নেই।

অনন্তরাম গ্রামের কৃষক সামাদ সরকার বলেন, প্রতি ২২ শতাংশ জমিতে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। বাজারে প্রতি মণ ধান ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খরচের টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর আবার কয়েক দিন থেকে রাতে ও দিনে বৃষ্টি হচ্ছে। মাড়াই করা ধান ও ভুট্টা রোদে শুকাতে না পেরে স্তূপ করে রাখায় তাতে চারা গজাচ্ছে।

এদিকে উপজেলার কৃষকেরা শ্রমিক-সংকটের কথা বললেও এখানকার খেটে খাওয়া লোকজন প্রতিদিন কাজের সন্ধানে দক্ষিণাঞ্চলে ছুটছেন। তাঁদের দাবি, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য উপজেলায় ১০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন থাকায় তাঁরা অন্য এলাকায় কাজে যাচ্ছেন।

পীরগাছা রেলস্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা কৃষিশ্রমিক আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে কাজ করা যাচ্ছে না। তাই দক্ষিণের জেলাগুলোতে আমরা দল বেঁধে যাচ্ছি কাজের সন্ধানে।’

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি দপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘মাড়াই করা ধান ও ভুট্টা শুকাতে না পারলে ফ্যানের বাতাস দিয়ে রাখতে হবে। গরমের ভাপ কমে গেলে ক্ষতি কম হবে।’

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এমনটা হয়েছে। আর শ্রমিক-সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, নিজ এলাকার কাজ রেখে বাইরে যাওয়া দুঃখজনক। এসব শ্রমিকদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করলেও ভালো হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত