Ajker Patrika

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৩
গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে তিন গ্রাম। গত সোমবার অজ্ঞাত ৭০০ জনের নামে এই মামলা করা হয়। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে ওই ইউনিয়নের ঘিডব, হাবিবপুর, সিটঘিডব গ্রামের পুরুষেরা বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন।

এদিকে খনগাঁও ইউপি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় বিজিবির গুলিতে আহত চারজনের মধ্যে রহিমা বেগম নামের আরও একজন মারা যাওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। সোমবার রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহিমার মৃত্যু হয়। তিনি খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোবপুরের আব্দুল বাকির স্ত্রী। অন্য নিহতরা হলেন শাহাবুদ্দিন ওরফে সাহাবুলি, মো. মুজা ও পরাগ আলী।

গতকাল বুধবার ঘিডোব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে গুলি ও রক্তের চিহ্ন লেগে আছে। এই বিদ্যালয়টি এবার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। কেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নেই কোনো মানুষের জটলা। স্থানীয় দোকানপাটও বন্ধ। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে সরে যাচ্ছেন ওই এলাকার নারীসহ বৃদ্ধরা। কিন্তু সেখানে কোনো পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নারী বলেন, ঘিডোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম। কিন্তু ভোটের সঠিক ফলাফলের দাবি করাই আমাদের হয়তো ভুল হয়েছে। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এ নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মতো এসেছে। আমরা নারীরাও ভয় পাচ্ছি এবং গ্রেপ্তারের শঙ্কায় আছি। তবে ভিটার মায়া থাকায় যেতে পারিনি।

তাঁরা আরও বলেন, আমরাই মরলাম আবার আমরাই মামলার শিকার হলাম। মামলাটি করা হয়েছে হয়রানি করার জন্য। একদিকে স্বজন হারানোর ব্যথা, অন্যদিকে গ্রেপ্তারের ভয়ে আমাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আহত স্বজনের চিকিৎসার খরচ আমাদের নিম্ন আয়ে সম্ভব নয়। উপরন্তু পালিয়ে থাকার কারণে খাবারের জন্য অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা এই মামলা প্রত্যাহার দাবি করেছেন।

খনগাঁও ইউনিয়নে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মহসিনা বেগম বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। এর আগে নির্বাচনে এরকম ঘটনা ঘটেনি। ঘিডোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম। এখানে হিন্দু মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করি।’

এলাকাবাসী বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র বহিরাগতদের বিশৃঙ্খলার কারণে এ সহিংসতার ঘটনাটি ঘটে।’

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নির্বাচনের রাতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত