Ajker Patrika

ধান ও সবজিখেত প্লাবিত

লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও উলিপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৫৮
ধান ও সবজিখেত প্লাবিত

ভারত থেকে আসা ঢলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলের অনেক ধান ও সবজিখেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া তিস্তায় ভাঙন শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তীরের মানুষ।

লালমনিরহাট: গতকাল শনিবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যারাজের ১১টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩০০ কিউসেকে।

তিস্তার পানি বেড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তার চর এলাকায় মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, কাউন, মিষ্টিকুমড়া, গম, তামাক ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের কয়েক হাজার বিঘা ফসল ডুবে গেছে। এতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষ পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

অসময়ে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ডুবে গেছে।

জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা গোবধন এলাকার কৃষক ভুট্টো মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর চরে বোরো ধান, কাউন, পেঁয়াজ, রসুন চাষ করি। এবারও ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ‘উজানের ঢলে ও বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বাড়লেও গতকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে ১২ হাজার ৩০০ কিউসেক পানি রয়েছে। পানি বাড়ায় কৃষকেরা ক্ষতিতে পড়েছেন।’

কুড়িগ্রাম: উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ধরলার সেতু পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার কমেছে।

জেলার রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা আবারও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গতিয়াশাম সরিষাবাড়ী এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খিতাবখা বড় দরগা এলাকায় কয়েক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তীরের বাসিন্দারা। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থানীয় অনেকের বসতঘর ও শত শত হেক্টর আবাদি জমি।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় স্থানীয় কৃষকদের ফসলহানি ঘটেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ-রসুনসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। নদী থেকে মাত্র ১০ গজ দূরত্বে বিলীনের অপেক্ষায় গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক এবং মাত্র ৫০-৬০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে নামাভরট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় পাউবোর ফেলা জিও ব্যাগ দেবে যাওয়ায় যেকোনো সময় প্রতিষ্ঠান দুটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। অনুমোদন পেলে ব্যবস্থা নেব।’

উলিপুর: কুড়িগ্রামের উলিপুরে চলতি বছর তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রর বিভিন্ন চরে ১৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। অসময়ে পানি বাড়ায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমির বোরোখেত তলিয়ে গেছে।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর বাগুয়া অনন্তপুরে কৃষক শামসুল হক, অছিমুদ্দিন ও জহুরুল বলেন, ‘এখন নদের পানি বাড়ার কথা না। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এখনো ধানগাছে শিষ হয়নি। তবুও গাছগুলো কেটে নিচ্ছি। এগুলো খড় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।’

উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আফতাবগঞ্জ এলাকার কৃষক নজর আলী বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় খেত তলিয়ে গেছে। আর কয়েকটা দিন থাকলে ধান পাওয়া যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...