Ajker Patrika

ভিজিএফের চাল চাওয়ায় মজুরকে মেম্বারের মারধর

তারাগঞ্জ প্রতিনিধি
ভিজিএফের চাল চাওয়ায় মজুরকে মেম্বারের মারধর

তারাগঞ্জে ভিজিএফের চাল চাওয়ায় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মজুমদার রহমানের বিরুদ্ধে দিনমজুরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আহত তারাজুল ইসলাম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ ঘটনায় তারাজুলের স্ত্রী বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মজুমদার ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভিজিএফের ১০ কেজি চাল দেওয়ার জন্য খলেয়া নন্দরাম প্রামাণিকপাড়া গ্রামের তারাজুলের কাছ থেকে ১০০ টাকা নেন ইউপি সদস্য মজুমদার।

কিন্তু তারাজুল ১৭ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তাঁকে চাল দেওয়া হয়নি। তিনি ইউপি সদস্যের কাছে ১০০ টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে পরিষদ থেকে গালিগালাজ করে বের করে দেন। এরপর খিয়ারজুম্মা কবরস্থান পাকার মাথায় তারাজুলকে ডেকে হুমকি দেন। তারাজুল হুমকির কারণ জানতে চাইলে মজুমদার কিল, ঘুষি মারা শুরু করেন। সেই সঙ্গে মজুমদারের ছেলে সুজন গাছের ডাল ভেঙে মারধর করেন। এতে তারাজুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মজুমদার তাঁর আরেক ছেলে সুমনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তারাজুলকে ধান খেতে ফেলে রাখে চলে যান।

লোকমুখে খবর পেয়ে তারাজুলের স্ত্রী ও প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানকার চিকিৎসকের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

তারাজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেয়াল আর জরাজীর্ণ টিনের জং ধরা একটি মাত্র ঘর। টিনে বড় বড় ছিদ্র। সেই ঘরে দুই সন্তানকে নিয়ে তারাজুল ও তাঁর স্ত্রী আক্তারা বেগম বসবাস করেন।

আক্তারা বলেন, ‘আমার ঘরোত আধ সের চাল ছাড়া কিছু নাই। ভাঙা ঘরোত থাকি। ঘরোত খাবার আছলো না, এ জন্যে মেম্বারেটে সরকারি ১০ কেজি চাল চাছি। স্বামীক ডাংগে মারি মেম্বর আর ওর বেটা ধান খেতো ফেলে থুইছে। সেটে থাকি স্বামীক নিয়া উপজেলা হাসপাতালোত নিছনু তাক ঘুরি রংপুর পাঠাইছে। বড় ডাক্তার কইছে মাথা রক্ত জমাট হইছে। খাইম কী সেই চিন্তা বাচুছুং না। স্বামীক বাচাইম কেমন করি, চিকিৎসা করিম কী দিয়া! তোমরা মোর স্বামীক বাচান। বিনা দোষে মেম্বার আর ওর বেটারা মোর স্বামীক মারি ফেরার ধরছে ওই এর সঠিক বিচার চাও।’

তারাজুলের বৃদ্ধা মা শাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘পেটের ভোকে ছাওয়াটা সরকারি চাল চাইছে। তাক মারি ফেলার ধরছেলো। অ্যালা হাসপাতালোত আধা মরা হয়া আছে। যায় ছাওয়াটাক মোর এমতোন করছে তার বিচার চাও।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মজুমদার বলেন, ‘ভিজিএফের চাল দিতে আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। কাউকে মারধরও করিনি। তারাজুল ভালো মানুষ না। সে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করছে, ঘুষি মেরেছে। আমার শার্টের কলার ধরছিল। আমি ওর কলার ধরি পরিষদে নিয়ে যাব বলে। এতে একটু হুড়োহুড়ি হয়েছে। মারধর করি নাই।’

যোগাযোগ করা হলে হাড়িয়ারকুঠি ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, ‘বিষয়টি তারাজুলের পরিবার আমাকে জানিয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাকে আমি ৫০০ টাকা দিয়েছি।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোহাকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তারাজুলের স্ত্রী থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত