পাভেল পার্থ
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (২০২৩) সর্বশেষ জরিপে জানাচ্ছে, দেশে সবচেয়ে বেশি নদী আছে সুনামগঞ্জ জেলায়, প্রায় ৯৭টি।
কেবল নদী নয়, বৃহত্তর সিলেটজুড়ে লক্ষাধিক ছড়ার অস্তিত্ব ছিল। এত ছড়া, নালা, হাওর ও নদীর মূল কাজ কী? উজান থেকে ভাটিতে পানির প্রাকৃতিক প্রবাহকে অক্ষুণ্ন রাখা। এই অঞ্চলের মতো এত বেশি পানির আধার দেশে অন্য কোথাও নেই। তাহলে এমন একটি অঞ্চলে পরপর ভোগান্তির বন্যা হচ্ছে কেন? কোনোভাবেই এটি মৌসুমি বন্যা নয়, ‘জলাবদ্ধ বন্যা’।
সিলেট, সুনামগঞ্জ কিংবা বান্দরবানের সাম্প্রতিক জলাবদ্ধ বন্যা পরিস্থিতি বুঝতে হলে ‘বন্যা বিশেষজ্ঞ’ হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জারি থাকা প্রবল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বোঝাই যথেষ্ট। পাশাপাশি এই উভয় অঞ্চলের গ্রামীণ নিম্নবর্গ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন, তা বোঝা জরুরি। একই সঙ্গে এসব জনভাষ্য আন্দাজে নিতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে।
২০০৬ সাল থেকে যখন পদ্ধতিগতভাবে উল্লিখিত অঞ্চলে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই গ্রামীণ নিম্নবর্গের বহু ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শুনেছি। প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়নকেই বারবার তাঁরা সর্বনাশের মূলে দাঁড় করিয়েছেন। পরিবেশগত ক্ষয়কে নানাভাবে মূল্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশে বিদ্যায়তনিক, গণমাধ্যম কিংবা উন্নয়ন পরিসরে সেই সব আলোচনা তখনো কেউ শুরু করেনি। প্রায় ২০ বছর ধরে দেখছি প্রবল উন্নয়নচিন্তাগুলো প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন প্রসঙ্গকে পাত্তাই দেয়নি।
তবে খুব সম্প্রতি বিদ্যায়তনে ও গণমাধ্যমে নিতান্তই স্বল্পপরিসরে পরিবেশগত ক্ষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যার চল শুরু হয়েছে। যদিও কেউ স্বীকার করছেন না এই বিশ্লেষণ বৃহত্তর সিলেটের গ্রামীণ নিম্নবর্গের।
২০২২ কিংবা ২০২৪ সালের সিলেট ও সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ জন্য মূলত প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দায়ী। নিঃসন্দেহে জলবায়ুসংকটের কারণে একেক সময়ে হওয়া অতিবর্ষণ এই যন্ত্রণাকে আরও জটিল ও দুঃসহ করে তুলছে। কিন্তু সবকিছু জলবায়ুর ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় উন্নয়ন-বাহাদুরিকে কোনোভাবেই আড়াল করে ফেলা যাবে না। রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত জীবনের আহাজারি আগলে দাঁড়াতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের রক্তক্ষত সারিয়ে তোলার ভেতর দিয়েই কেবল এই জলাবদ্ধ-বন্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব। যেকোনো ধরনের ভুয়া সমাধান ভবিষ্যতের যন্ত্রণা ও জটিলতাকে দুঃসহ করে তুলবে।
চলতি আলাপটিতে আমরা আবারও মনে করিয়ে দেব বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যা ঘটছে, যার নিদারুণ আঘাত তৈরি হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। উল্লিখিত অঞ্চল দুটি বৃষ্টিপ্রবণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। উভয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বৃষ্টিকে ধারণ করতে জানে, বৃষ্টির পানি সঞ্চয় ও প্রবাহিত করার বাস্তুতন্ত্র এখানে আছে। কিন্তু উভয় অঞ্চলে আদি প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলো ভেঙেচুরে দখল ও দূষিত করা হয়েছে।
অনাবৃষ্টি বা অতিবর্ষণ সবকিছুই এই অঞ্চলের নদীতীরের প্রাণপ্রকৃতি ও জনজীবনকে প্রভাবিত করে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে আছে, সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক এবং ১৯০৪ সালে সেখানে প্রায় ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সুনামগঞ্জে বছরে ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের কথা ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারেও আছে।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড় ছিল প্রাকৃতিক জঙ্গলে ভরপুর এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। বর্ষার ঢল পাহাড়ি বনভূমির ভেতর দিয়ে এক প্রতিবেশীয় স্বরলিপি মেনে গড়িয়ে নামত হাওর ভাটিতে।
হাওরপারের মানুষেরা আন্দাজ করতে পারতেন উজানের পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ার কত সময় বাদে এই ঢল নেমে আসবে ভাটিতে। কিন্তু এখন এসব আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মেঘালয় পাহাড় আজ বনশূন্য। বর্তমানে বৃষ্টি হলে তা প্রবাহের কোনো নিয়ম ও গতি না মেনে ছড়া বা নালা দিয়ে প্রবল তোড়ে নামছে হাওর ভাটিতে। তৈরি হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের সংকট এবং তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের একমাত্র ধানের মৌসুম বোরো ধান।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জাহাজভাঙা বালুতে তলিয়ে যাচ্ছে বসত, কৃষিজমি ও জলাশয়। কুশিয়ারা, সুরমা, বৌলাই, সারি-গোয়াইন, লালাখাল, কালনী, যাদুকাটা, রক্তি যেসব নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, প্রায় আন্তসীমান্ত নদীতেই ভারত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সিলেটের বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুতন্ত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
পাহাড়-টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। বনভূমি বিনাশ। ছড়া, নালা ও হাওর দখল করে ভরাট। পানিপ্রবাহের রাস্তা মানুষ দখল করেছে বলে আজ বৃষ্টির পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গড়িয়ে যাওয়ার জায়গা খুঁজছে অনবরত। আটকে থাকা বন্দী পানিপ্রবাহের এই যন্ত্রণা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না। আমাদের কাছে কেবল মানুষের জলাবদ্ধতার কষ্টকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উজান থেকে ভাটি বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার প্রাকৃতিক পথগুলোকে উন্মুক্ত ও দখলমুক্ত রাখলে সিলেট-সুনামগঞ্জ কোনোভাবেই জলাবদ্ধ হবে না।
২০২২ সালে সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ ভাগ আর সিলেটের ৮০ ভাগ তলিয়ে যায়। বাজার, দোকান, হাসপাতাল, শিক্ষালয় সব কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটে ১৭ জুন ২০২২ তারিখে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন ৩৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১৯ জুন ৩৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
২০২২ সালের জুনে তিন দিনে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২৪৫৮ মিলিমিটার, যা বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানায়, ১৭ জুন ২০২২ চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের পর জুন মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে ১৫৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একই বছরের ১৫ জুন বৃষ্টি হয়েছিল ৯৩০ মিলিমিটার। ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
চলতি বছর, ২০২৪ সালের ২৯ মে চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সিলেটের বহু এলাকা এক দিনেই তখন প্লাবিত হয়ে যায়। ৯ জুন সিলেটে কয়েক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ২২০ মিলিমিটার। ১৩ জুন ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। ঈদুল আজহার সময়ে অবিরাম বৃষ্টি হয় সিলেটে। সিলেটের লালাখালে ৩৩৩, জাফলংয়ে ৩২৭ এবং সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড়ে ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে ২০২২ সালের মতোই আবারও জলাবদ্ধ-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য পানি জমে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে হাওর ও নদীতে মিশে যায়। কিন্তু এখন পানি সরতে পারছে না। পানি আটকে থাকছে। কারণ পানি প্রবাহের সব পথ ও আধার উন্নয়নের নামে দখল করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের বিন্যাস ও পঞ্জিকা এবং একক সময়ে অতিবর্ষণের মতো প্রবণতাগুলো সম্প্রতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ১৭৮৭, ১৮৪২, ১৮৫৮, ১৮৭১, ১৮৭৫, ১৮৮৫, ১৮৯২, ১৯৩১, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ সালের বন্যার পাশাপাশি বছর বছর পাহাড়ি ঢলে হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু ২০২২ এবং ২০২৪ সালের জলাবদ্ধ বন্যা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়নের বার্তা দেয়। এই বার্তা পাঠ না করলে সামনে আরও দুঃসহ জটিল পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (২০২৩) সর্বশেষ জরিপে জানাচ্ছে, দেশে সবচেয়ে বেশি নদী আছে সুনামগঞ্জ জেলায়, প্রায় ৯৭টি।
কেবল নদী নয়, বৃহত্তর সিলেটজুড়ে লক্ষাধিক ছড়ার অস্তিত্ব ছিল। এত ছড়া, নালা, হাওর ও নদীর মূল কাজ কী? উজান থেকে ভাটিতে পানির প্রাকৃতিক প্রবাহকে অক্ষুণ্ন রাখা। এই অঞ্চলের মতো এত বেশি পানির আধার দেশে অন্য কোথাও নেই। তাহলে এমন একটি অঞ্চলে পরপর ভোগান্তির বন্যা হচ্ছে কেন? কোনোভাবেই এটি মৌসুমি বন্যা নয়, ‘জলাবদ্ধ বন্যা’।
সিলেট, সুনামগঞ্জ কিংবা বান্দরবানের সাম্প্রতিক জলাবদ্ধ বন্যা পরিস্থিতি বুঝতে হলে ‘বন্যা বিশেষজ্ঞ’ হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জারি থাকা প্রবল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বোঝাই যথেষ্ট। পাশাপাশি এই উভয় অঞ্চলের গ্রামীণ নিম্নবর্গ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন, তা বোঝা জরুরি। একই সঙ্গে এসব জনভাষ্য আন্দাজে নিতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে।
২০০৬ সাল থেকে যখন পদ্ধতিগতভাবে উল্লিখিত অঞ্চলে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই গ্রামীণ নিম্নবর্গের বহু ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শুনেছি। প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়নকেই বারবার তাঁরা সর্বনাশের মূলে দাঁড় করিয়েছেন। পরিবেশগত ক্ষয়কে নানাভাবে মূল্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশে বিদ্যায়তনিক, গণমাধ্যম কিংবা উন্নয়ন পরিসরে সেই সব আলোচনা তখনো কেউ শুরু করেনি। প্রায় ২০ বছর ধরে দেখছি প্রবল উন্নয়নচিন্তাগুলো প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন প্রসঙ্গকে পাত্তাই দেয়নি।
তবে খুব সম্প্রতি বিদ্যায়তনে ও গণমাধ্যমে নিতান্তই স্বল্পপরিসরে পরিবেশগত ক্ষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যার চল শুরু হয়েছে। যদিও কেউ স্বীকার করছেন না এই বিশ্লেষণ বৃহত্তর সিলেটের গ্রামীণ নিম্নবর্গের।
২০২২ কিংবা ২০২৪ সালের সিলেট ও সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ জন্য মূলত প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দায়ী। নিঃসন্দেহে জলবায়ুসংকটের কারণে একেক সময়ে হওয়া অতিবর্ষণ এই যন্ত্রণাকে আরও জটিল ও দুঃসহ করে তুলছে। কিন্তু সবকিছু জলবায়ুর ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় উন্নয়ন-বাহাদুরিকে কোনোভাবেই আড়াল করে ফেলা যাবে না। রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত জীবনের আহাজারি আগলে দাঁড়াতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের রক্তক্ষত সারিয়ে তোলার ভেতর দিয়েই কেবল এই জলাবদ্ধ-বন্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব। যেকোনো ধরনের ভুয়া সমাধান ভবিষ্যতের যন্ত্রণা ও জটিলতাকে দুঃসহ করে তুলবে।
চলতি আলাপটিতে আমরা আবারও মনে করিয়ে দেব বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যা ঘটছে, যার নিদারুণ আঘাত তৈরি হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। উল্লিখিত অঞ্চল দুটি বৃষ্টিপ্রবণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। উভয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বৃষ্টিকে ধারণ করতে জানে, বৃষ্টির পানি সঞ্চয় ও প্রবাহিত করার বাস্তুতন্ত্র এখানে আছে। কিন্তু উভয় অঞ্চলে আদি প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলো ভেঙেচুরে দখল ও দূষিত করা হয়েছে।
অনাবৃষ্টি বা অতিবর্ষণ সবকিছুই এই অঞ্চলের নদীতীরের প্রাণপ্রকৃতি ও জনজীবনকে প্রভাবিত করে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে আছে, সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক এবং ১৯০৪ সালে সেখানে প্রায় ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সুনামগঞ্জে বছরে ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের কথা ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারেও আছে।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড় ছিল প্রাকৃতিক জঙ্গলে ভরপুর এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। বর্ষার ঢল পাহাড়ি বনভূমির ভেতর দিয়ে এক প্রতিবেশীয় স্বরলিপি মেনে গড়িয়ে নামত হাওর ভাটিতে।
হাওরপারের মানুষেরা আন্দাজ করতে পারতেন উজানের পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ার কত সময় বাদে এই ঢল নেমে আসবে ভাটিতে। কিন্তু এখন এসব আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মেঘালয় পাহাড় আজ বনশূন্য। বর্তমানে বৃষ্টি হলে তা প্রবাহের কোনো নিয়ম ও গতি না মেনে ছড়া বা নালা দিয়ে প্রবল তোড়ে নামছে হাওর ভাটিতে। তৈরি হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের সংকট এবং তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের একমাত্র ধানের মৌসুম বোরো ধান।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জাহাজভাঙা বালুতে তলিয়ে যাচ্ছে বসত, কৃষিজমি ও জলাশয়। কুশিয়ারা, সুরমা, বৌলাই, সারি-গোয়াইন, লালাখাল, কালনী, যাদুকাটা, রক্তি যেসব নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, প্রায় আন্তসীমান্ত নদীতেই ভারত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সিলেটের বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুতন্ত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
পাহাড়-টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। বনভূমি বিনাশ। ছড়া, নালা ও হাওর দখল করে ভরাট। পানিপ্রবাহের রাস্তা মানুষ দখল করেছে বলে আজ বৃষ্টির পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গড়িয়ে যাওয়ার জায়গা খুঁজছে অনবরত। আটকে থাকা বন্দী পানিপ্রবাহের এই যন্ত্রণা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না। আমাদের কাছে কেবল মানুষের জলাবদ্ধতার কষ্টকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উজান থেকে ভাটি বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার প্রাকৃতিক পথগুলোকে উন্মুক্ত ও দখলমুক্ত রাখলে সিলেট-সুনামগঞ্জ কোনোভাবেই জলাবদ্ধ হবে না।
২০২২ সালে সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ ভাগ আর সিলেটের ৮০ ভাগ তলিয়ে যায়। বাজার, দোকান, হাসপাতাল, শিক্ষালয় সব কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটে ১৭ জুন ২০২২ তারিখে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন ৩৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১৯ জুন ৩৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
২০২২ সালের জুনে তিন দিনে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২৪৫৮ মিলিমিটার, যা বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানায়, ১৭ জুন ২০২২ চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের পর জুন মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে ১৫৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একই বছরের ১৫ জুন বৃষ্টি হয়েছিল ৯৩০ মিলিমিটার। ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
চলতি বছর, ২০২৪ সালের ২৯ মে চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সিলেটের বহু এলাকা এক দিনেই তখন প্লাবিত হয়ে যায়। ৯ জুন সিলেটে কয়েক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ২২০ মিলিমিটার। ১৩ জুন ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। ঈদুল আজহার সময়ে অবিরাম বৃষ্টি হয় সিলেটে। সিলেটের লালাখালে ৩৩৩, জাফলংয়ে ৩২৭ এবং সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড়ে ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে ২০২২ সালের মতোই আবারও জলাবদ্ধ-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য পানি জমে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে হাওর ও নদীতে মিশে যায়। কিন্তু এখন পানি সরতে পারছে না। পানি আটকে থাকছে। কারণ পানি প্রবাহের সব পথ ও আধার উন্নয়নের নামে দখল করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের বিন্যাস ও পঞ্জিকা এবং একক সময়ে অতিবর্ষণের মতো প্রবণতাগুলো সম্প্রতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ১৭৮৭, ১৮৪২, ১৮৫৮, ১৮৭১, ১৮৭৫, ১৮৮৫, ১৮৯২, ১৯৩১, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ সালের বন্যার পাশাপাশি বছর বছর পাহাড়ি ঢলে হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু ২০২২ এবং ২০২৪ সালের জলাবদ্ধ বন্যা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়নের বার্তা দেয়। এই বার্তা পাঠ না করলে সামনে আরও দুঃসহ জটিল পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক
পাভেল পার্থ
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (২০২৩) সর্বশেষ জরিপে জানাচ্ছে, দেশে সবচেয়ে বেশি নদী আছে সুনামগঞ্জ জেলায়, প্রায় ৯৭টি।
কেবল নদী নয়, বৃহত্তর সিলেটজুড়ে লক্ষাধিক ছড়ার অস্তিত্ব ছিল। এত ছড়া, নালা, হাওর ও নদীর মূল কাজ কী? উজান থেকে ভাটিতে পানির প্রাকৃতিক প্রবাহকে অক্ষুণ্ন রাখা। এই অঞ্চলের মতো এত বেশি পানির আধার দেশে অন্য কোথাও নেই। তাহলে এমন একটি অঞ্চলে পরপর ভোগান্তির বন্যা হচ্ছে কেন? কোনোভাবেই এটি মৌসুমি বন্যা নয়, ‘জলাবদ্ধ বন্যা’।
সিলেট, সুনামগঞ্জ কিংবা বান্দরবানের সাম্প্রতিক জলাবদ্ধ বন্যা পরিস্থিতি বুঝতে হলে ‘বন্যা বিশেষজ্ঞ’ হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জারি থাকা প্রবল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বোঝাই যথেষ্ট। পাশাপাশি এই উভয় অঞ্চলের গ্রামীণ নিম্নবর্গ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন, তা বোঝা জরুরি। একই সঙ্গে এসব জনভাষ্য আন্দাজে নিতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে।
২০০৬ সাল থেকে যখন পদ্ধতিগতভাবে উল্লিখিত অঞ্চলে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই গ্রামীণ নিম্নবর্গের বহু ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শুনেছি। প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়নকেই বারবার তাঁরা সর্বনাশের মূলে দাঁড় করিয়েছেন। পরিবেশগত ক্ষয়কে নানাভাবে মূল্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশে বিদ্যায়তনিক, গণমাধ্যম কিংবা উন্নয়ন পরিসরে সেই সব আলোচনা তখনো কেউ শুরু করেনি। প্রায় ২০ বছর ধরে দেখছি প্রবল উন্নয়নচিন্তাগুলো প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন প্রসঙ্গকে পাত্তাই দেয়নি।
তবে খুব সম্প্রতি বিদ্যায়তনে ও গণমাধ্যমে নিতান্তই স্বল্পপরিসরে পরিবেশগত ক্ষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যার চল শুরু হয়েছে। যদিও কেউ স্বীকার করছেন না এই বিশ্লেষণ বৃহত্তর সিলেটের গ্রামীণ নিম্নবর্গের।
২০২২ কিংবা ২০২৪ সালের সিলেট ও সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ জন্য মূলত প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দায়ী। নিঃসন্দেহে জলবায়ুসংকটের কারণে একেক সময়ে হওয়া অতিবর্ষণ এই যন্ত্রণাকে আরও জটিল ও দুঃসহ করে তুলছে। কিন্তু সবকিছু জলবায়ুর ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় উন্নয়ন-বাহাদুরিকে কোনোভাবেই আড়াল করে ফেলা যাবে না। রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত জীবনের আহাজারি আগলে দাঁড়াতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের রক্তক্ষত সারিয়ে তোলার ভেতর দিয়েই কেবল এই জলাবদ্ধ-বন্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব। যেকোনো ধরনের ভুয়া সমাধান ভবিষ্যতের যন্ত্রণা ও জটিলতাকে দুঃসহ করে তুলবে।
চলতি আলাপটিতে আমরা আবারও মনে করিয়ে দেব বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যা ঘটছে, যার নিদারুণ আঘাত তৈরি হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। উল্লিখিত অঞ্চল দুটি বৃষ্টিপ্রবণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। উভয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বৃষ্টিকে ধারণ করতে জানে, বৃষ্টির পানি সঞ্চয় ও প্রবাহিত করার বাস্তুতন্ত্র এখানে আছে। কিন্তু উভয় অঞ্চলে আদি প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলো ভেঙেচুরে দখল ও দূষিত করা হয়েছে।
অনাবৃষ্টি বা অতিবর্ষণ সবকিছুই এই অঞ্চলের নদীতীরের প্রাণপ্রকৃতি ও জনজীবনকে প্রভাবিত করে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে আছে, সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক এবং ১৯০৪ সালে সেখানে প্রায় ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সুনামগঞ্জে বছরে ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের কথা ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারেও আছে।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড় ছিল প্রাকৃতিক জঙ্গলে ভরপুর এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। বর্ষার ঢল পাহাড়ি বনভূমির ভেতর দিয়ে এক প্রতিবেশীয় স্বরলিপি মেনে গড়িয়ে নামত হাওর ভাটিতে।
হাওরপারের মানুষেরা আন্দাজ করতে পারতেন উজানের পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ার কত সময় বাদে এই ঢল নেমে আসবে ভাটিতে। কিন্তু এখন এসব আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মেঘালয় পাহাড় আজ বনশূন্য। বর্তমানে বৃষ্টি হলে তা প্রবাহের কোনো নিয়ম ও গতি না মেনে ছড়া বা নালা দিয়ে প্রবল তোড়ে নামছে হাওর ভাটিতে। তৈরি হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের সংকট এবং তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের একমাত্র ধানের মৌসুম বোরো ধান।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জাহাজভাঙা বালুতে তলিয়ে যাচ্ছে বসত, কৃষিজমি ও জলাশয়। কুশিয়ারা, সুরমা, বৌলাই, সারি-গোয়াইন, লালাখাল, কালনী, যাদুকাটা, রক্তি যেসব নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, প্রায় আন্তসীমান্ত নদীতেই ভারত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সিলেটের বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুতন্ত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
পাহাড়-টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। বনভূমি বিনাশ। ছড়া, নালা ও হাওর দখল করে ভরাট। পানিপ্রবাহের রাস্তা মানুষ দখল করেছে বলে আজ বৃষ্টির পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গড়িয়ে যাওয়ার জায়গা খুঁজছে অনবরত। আটকে থাকা বন্দী পানিপ্রবাহের এই যন্ত্রণা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না। আমাদের কাছে কেবল মানুষের জলাবদ্ধতার কষ্টকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উজান থেকে ভাটি বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার প্রাকৃতিক পথগুলোকে উন্মুক্ত ও দখলমুক্ত রাখলে সিলেট-সুনামগঞ্জ কোনোভাবেই জলাবদ্ধ হবে না।
২০২২ সালে সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ ভাগ আর সিলেটের ৮০ ভাগ তলিয়ে যায়। বাজার, দোকান, হাসপাতাল, শিক্ষালয় সব কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটে ১৭ জুন ২০২২ তারিখে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন ৩৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১৯ জুন ৩৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
২০২২ সালের জুনে তিন দিনে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২৪৫৮ মিলিমিটার, যা বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানায়, ১৭ জুন ২০২২ চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের পর জুন মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে ১৫৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একই বছরের ১৫ জুন বৃষ্টি হয়েছিল ৯৩০ মিলিমিটার। ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
চলতি বছর, ২০২৪ সালের ২৯ মে চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সিলেটের বহু এলাকা এক দিনেই তখন প্লাবিত হয়ে যায়। ৯ জুন সিলেটে কয়েক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ২২০ মিলিমিটার। ১৩ জুন ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। ঈদুল আজহার সময়ে অবিরাম বৃষ্টি হয় সিলেটে। সিলেটের লালাখালে ৩৩৩, জাফলংয়ে ৩২৭ এবং সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড়ে ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে ২০২২ সালের মতোই আবারও জলাবদ্ধ-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য পানি জমে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে হাওর ও নদীতে মিশে যায়। কিন্তু এখন পানি সরতে পারছে না। পানি আটকে থাকছে। কারণ পানি প্রবাহের সব পথ ও আধার উন্নয়নের নামে দখল করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের বিন্যাস ও পঞ্জিকা এবং একক সময়ে অতিবর্ষণের মতো প্রবণতাগুলো সম্প্রতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ১৭৮৭, ১৮৪২, ১৮৫৮, ১৮৭১, ১৮৭৫, ১৮৮৫, ১৮৯২, ১৯৩১, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ সালের বন্যার পাশাপাশি বছর বছর পাহাড়ি ঢলে হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু ২০২২ এবং ২০২৪ সালের জলাবদ্ধ বন্যা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়নের বার্তা দেয়। এই বার্তা পাঠ না করলে সামনে আরও দুঃসহ জটিল পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (২০২৩) সর্বশেষ জরিপে জানাচ্ছে, দেশে সবচেয়ে বেশি নদী আছে সুনামগঞ্জ জেলায়, প্রায় ৯৭টি।
কেবল নদী নয়, বৃহত্তর সিলেটজুড়ে লক্ষাধিক ছড়ার অস্তিত্ব ছিল। এত ছড়া, নালা, হাওর ও নদীর মূল কাজ কী? উজান থেকে ভাটিতে পানির প্রাকৃতিক প্রবাহকে অক্ষুণ্ন রাখা। এই অঞ্চলের মতো এত বেশি পানির আধার দেশে অন্য কোথাও নেই। তাহলে এমন একটি অঞ্চলে পরপর ভোগান্তির বন্যা হচ্ছে কেন? কোনোভাবেই এটি মৌসুমি বন্যা নয়, ‘জলাবদ্ধ বন্যা’।
সিলেট, সুনামগঞ্জ কিংবা বান্দরবানের সাম্প্রতিক জলাবদ্ধ বন্যা পরিস্থিতি বুঝতে হলে ‘বন্যা বিশেষজ্ঞ’ হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জারি থাকা প্রবল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বোঝাই যথেষ্ট। পাশাপাশি এই উভয় অঞ্চলের গ্রামীণ নিম্নবর্গ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন, তা বোঝা জরুরি। একই সঙ্গে এসব জনভাষ্য আন্দাজে নিতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে।
২০০৬ সাল থেকে যখন পদ্ধতিগতভাবে উল্লিখিত অঞ্চলে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই গ্রামীণ নিম্নবর্গের বহু ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শুনেছি। প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়নকেই বারবার তাঁরা সর্বনাশের মূলে দাঁড় করিয়েছেন। পরিবেশগত ক্ষয়কে নানাভাবে মূল্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশে বিদ্যায়তনিক, গণমাধ্যম কিংবা উন্নয়ন পরিসরে সেই সব আলোচনা তখনো কেউ শুরু করেনি। প্রায় ২০ বছর ধরে দেখছি প্রবল উন্নয়নচিন্তাগুলো প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন প্রসঙ্গকে পাত্তাই দেয়নি।
তবে খুব সম্প্রতি বিদ্যায়তনে ও গণমাধ্যমে নিতান্তই স্বল্পপরিসরে পরিবেশগত ক্ষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যার চল শুরু হয়েছে। যদিও কেউ স্বীকার করছেন না এই বিশ্লেষণ বৃহত্তর সিলেটের গ্রামীণ নিম্নবর্গের।
২০২২ কিংবা ২০২৪ সালের সিলেট ও সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ জন্য মূলত প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দায়ী। নিঃসন্দেহে জলবায়ুসংকটের কারণে একেক সময়ে হওয়া অতিবর্ষণ এই যন্ত্রণাকে আরও জটিল ও দুঃসহ করে তুলছে। কিন্তু সবকিছু জলবায়ুর ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় উন্নয়ন-বাহাদুরিকে কোনোভাবেই আড়াল করে ফেলা যাবে না। রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত জীবনের আহাজারি আগলে দাঁড়াতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের রক্তক্ষত সারিয়ে তোলার ভেতর দিয়েই কেবল এই জলাবদ্ধ-বন্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব। যেকোনো ধরনের ভুয়া সমাধান ভবিষ্যতের যন্ত্রণা ও জটিলতাকে দুঃসহ করে তুলবে।
চলতি আলাপটিতে আমরা আবারও মনে করিয়ে দেব বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যা ঘটছে, যার নিদারুণ আঘাত তৈরি হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। উল্লিখিত অঞ্চল দুটি বৃষ্টিপ্রবণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। উভয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বৃষ্টিকে ধারণ করতে জানে, বৃষ্টির পানি সঞ্চয় ও প্রবাহিত করার বাস্তুতন্ত্র এখানে আছে। কিন্তু উভয় অঞ্চলে আদি প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলো ভেঙেচুরে দখল ও দূষিত করা হয়েছে।
অনাবৃষ্টি বা অতিবর্ষণ সবকিছুই এই অঞ্চলের নদীতীরের প্রাণপ্রকৃতি ও জনজীবনকে প্রভাবিত করে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে আছে, সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক এবং ১৯০৪ সালে সেখানে প্রায় ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সুনামগঞ্জে বছরে ২১০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের কথা ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারেও আছে।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড় ছিল প্রাকৃতিক জঙ্গলে ভরপুর এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। বর্ষার ঢল পাহাড়ি বনভূমির ভেতর দিয়ে এক প্রতিবেশীয় স্বরলিপি মেনে গড়িয়ে নামত হাওর ভাটিতে।
হাওরপারের মানুষেরা আন্দাজ করতে পারতেন উজানের পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ার কত সময় বাদে এই ঢল নেমে আসবে ভাটিতে। কিন্তু এখন এসব আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মেঘালয় পাহাড় আজ বনশূন্য। বর্তমানে বৃষ্টি হলে তা প্রবাহের কোনো নিয়ম ও গতি না মেনে ছড়া বা নালা দিয়ে প্রবল তোড়ে নামছে হাওর ভাটিতে। তৈরি হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের সংকট এবং তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের একমাত্র ধানের মৌসুম বোরো ধান।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জাহাজভাঙা বালুতে তলিয়ে যাচ্ছে বসত, কৃষিজমি ও জলাশয়। কুশিয়ারা, সুরমা, বৌলাই, সারি-গোয়াইন, লালাখাল, কালনী, যাদুকাটা, রক্তি যেসব নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, প্রায় আন্তসীমান্ত নদীতেই ভারত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সিলেটের বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুতন্ত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
পাহাড়-টিলা কেটে সমান করা হয়েছে। বনভূমি বিনাশ। ছড়া, নালা ও হাওর দখল করে ভরাট। পানিপ্রবাহের রাস্তা মানুষ দখল করেছে বলে আজ বৃষ্টির পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গড়িয়ে যাওয়ার জায়গা খুঁজছে অনবরত। আটকে থাকা বন্দী পানিপ্রবাহের এই যন্ত্রণা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না। আমাদের কাছে কেবল মানুষের জলাবদ্ধতার কষ্টকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উজান থেকে ভাটি বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার প্রাকৃতিক পথগুলোকে উন্মুক্ত ও দখলমুক্ত রাখলে সিলেট-সুনামগঞ্জ কোনোভাবেই জলাবদ্ধ হবে না।
২০২২ সালে সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ ভাগ আর সিলেটের ৮০ ভাগ তলিয়ে যায়। বাজার, দোকান, হাসপাতাল, শিক্ষালয় সব কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটে ১৭ জুন ২০২২ তারিখে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন ৩৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১৯ জুন ৩৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
২০২২ সালের জুনে তিন দিনে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২৪৫৮ মিলিমিটার, যা বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানায়, ১৭ জুন ২০২২ চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের পর জুন মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে ১৫৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একই বছরের ১৫ জুন বৃষ্টি হয়েছিল ৯৩০ মিলিমিটার। ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
চলতি বছর, ২০২৪ সালের ২৯ মে চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সিলেটের বহু এলাকা এক দিনেই তখন প্লাবিত হয়ে যায়। ৯ জুন সিলেটে কয়েক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ২২০ মিলিমিটার। ১৩ জুন ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। ঈদুল আজহার সময়ে অবিরাম বৃষ্টি হয় সিলেটে। সিলেটের লালাখালে ৩৩৩, জাফলংয়ে ৩২৭ এবং সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড়ে ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে ২০২২ সালের মতোই আবারও জলাবদ্ধ-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একক সময়ে অতিবর্ষণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য পানি জমে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে হাওর ও নদীতে মিশে যায়। কিন্তু এখন পানি সরতে পারছে না। পানি আটকে থাকছে। কারণ পানি প্রবাহের সব পথ ও আধার উন্নয়নের নামে দখল করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের বিন্যাস ও পঞ্জিকা এবং একক সময়ে অতিবর্ষণের মতো প্রবণতাগুলো সম্প্রতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ১৭৮৭, ১৮৪২, ১৮৫৮, ১৮৭১, ১৮৭৫, ১৮৮৫, ১৮৯২, ১৯৩১, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ সালের বন্যার পাশাপাশি বছর বছর পাহাড়ি ঢলে হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু ২০২২ এবং ২০২৪ সালের জলাবদ্ধ বন্যা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়নের বার্তা দেয়। এই বার্তা পাঠ না করলে সামনে আরও দুঃসহ জটিল পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে।
০১ জুলাই ২০২৪‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে।
০১ জুলাই ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে।
০১ জুলাই ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ নদী-জলাভূমির এলাকা। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আসাম জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বহু নদীর নাম আছে। অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির (১৯১০) ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে’ বহু নদীর বিবরণ আছে।
০১ জুলাই ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫