Ajker Patrika

লেখাপড়া না করা শিশু দাখিল পরীক্ষার্থী

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া) 
লেখাপড়া না করা শিশু দাখিল পরীক্ষার্থী

শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রায়হান আলী (১৫)। জন্মের পর থেকে সে কখনো স্কুলে যায়নি। কিন্তু বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসার তথ্যমতে সে চলমান দাখিল পরীক্ষার্থী।

এ রকম শুধু রায়হান নয়, এমন বেশ কয়েকজন ভুয়া পরীক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে ওই মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীর তালিকায়। তাদের কেউ কলেজে পড়ে, কেউবা অন্য স্কুলে। অনেককে না জানিয়ে নিবন্ধন ও পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত করা হয়নি। আর এ জন্যই চলতি দাখিল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য নেওয়া হয়েছে প্রতারণার আশ্রয়।

ধুনকুন্ডি আয়েশা মওলা বক্স দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও কেন্দ্র সচিবের তথ্যমতে, এবারে মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসার চূড়ান্ত তালিকায় শিক্ষার্থী রয়েছে ২২ জন। এর মধ্যে অন্তত ১০ জনের হদিস মিলেছে, যারা ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী নয়।

মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়ার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী রায়হান আলীর বাবা লোকমান হোসেন বলেন, জন্মের পর থেকেই তাঁর ছেলে প্রতিবন্ধী। সে কোনো দিন স্কুলেই যায়নি। তার দাখিল পরীক্ষার্থী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

চূড়ান্ত তালিকায় থাকা পশ্চিমপাড়ার মো. মনিরুজ্জামান জানায়, সে মির্জাপুর ইউসুফ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। সেখান থেকেই এবার মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে কখনো মাদ্রাসায় পড়েনি বলে দাবি করে।

গত বছর এসএসসি পাস করে এলাকার রহিমা নওশের অনার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাহিদ সরকারও রয়েছে ওই পরীক্ষার্থীদের তালিকায়। নাহিদের চাচা আব্দুল খালিদ তরুণ বলেন, তাঁর ভাতিজা কলেজের ছাত্র হয়েও দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বিষয়টি জানার পর তিনি তাকে শাসন করেছেন। তাই শনিবার থেকে সে আর পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে না। গত রোববার ধনকুন্ডি আয়েশা মওলা বক্স দাখিল মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রের ছাত্র হাজিরার তালিকা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।

এ রকম আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে, যারা তথ্য অনুসন্ধানের পর আর পরীক্ষা হলে যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ রোববার পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এ রকম একজন পশ্চিমপাড়া রাজওয়ান আহমেদ আরাফাত। সে সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র বলে  তার বড় ভাই রাকিব নিশ্চিত করেছেন।

একই এলাকার দাখিল পরীক্ষার্থী মো. রাজু আহমেদ রহিমা নওশের অনার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র বলে নিশ্চিত করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও তার প্রতিবেশীরা। রাজুর বাসায় কেউ না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি এবং একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন তিনি। পরীক্ষার্থীদের বৈধ রেজিস্ট্রেশন থাকায় পরীক্ষা হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে প্রতিষ্ঠানটি এমন করেছে, খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে একই শিক্ষার্থীর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করা বিধিসম্মত নয় বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, মৌখিক উপস্থাপনের মাধ্যমে ওই ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। সব তথ্য লিখিতভাবে উপস্থাপন করলে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত