Ajker Patrika

এক হেডলাইটের যান বিভ্রান্তিতে দুর্ঘটনা

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
এক হেডলাইটের যান বিভ্রান্তিতে দুর্ঘটনা

দৈর্ঘ্য প্রায় চার ফুট আর প্রস্থ তিন ফুট। এ আকৃতির যান চলছে একটিমাত্র হেডলাইটে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হলে এই তথ্য জানা গেছে।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, হেডলাইটের ধরন দেখে দূর থেকে মোটরসাইকেল মনে হলেও একটু কাছে এলেই দেখা যায় গাড়িগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক)। ফলে মুহূর্তেই সাইড নিতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানের চালকেরা। ইজিবাইকের কিছুটা আলোয় ভিন্নতা থাকলেও অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলের আলো একদম একই রকম। গতিবেগও প্রায় সমান।

পাশাপাশি দূর থেকে তীক্ষ্ণ লাইটে চোখে ধাঁধা লাগে চালকদের। এতে রাস্তার কিনার বুঝতে না পেরে খাদে পড়ে যান বাইকারসহ বিভিন্ন যানের চালকেরা।

বগুড়ার শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলগুলোতে ঘটছে এমন ঘটনা। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও এতে টনক নড়ছে না সিএনজি-অটোরিকশার মালিক ও চালকদের।

গত শনিবার রাত ৯টার দিকে বগুড়ার মাটিডালি-পীরগাছা সড়কে মোটরসাইকেলে পীরগাছা যাচ্ছিলেন বিপ্লব হোসেন নামের এক তরুণ। রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় জোরে চালাচ্ছিলেন বাইক। পথে শেখেরকোলা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী একটি যানবাহনের হেডলাইটের আলো দেখে মোটরসাইকেল মনে করে তিনি সাইড নিচ্ছিলেন। কিন্তু কাছে আসতেই দেখেন সেটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

রাসেল বলেন, ‘সিএনজি দেখে তৎক্ষণাৎ আরও বেশি রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সাইড নিতে গিয়ে সিএনজির সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাইকসহ পাশের ধানের জমিতে পড়ে যাই।’

সম্প্রতি একই ঘটনা ঘটেছে সদরের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের আনসার মন্ডল নামের এক ভ্যানচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলের মতোই একই হেডলাইট নিয়ে চলে সিএনজিগুলো। আমি বুঝতে না পেরে হঠাৎ করে সাইড নিতে গিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায় আমার ভ্যানের। সিএনজিও ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে কাত হয়ে যায়।’

সদরের শাখারিয়া ইউপি ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বিলজার রহমান বলেন, ‘সিএনজি, ইজিবাইক আর মোটরসাইকেলের হেডলাইটগুলো একই রকম। সাইজে ভিন্ন গাড়িগুলোর লাইটিং ব্যবস্থা অবশ্যই আলাদা হতে হবে। তা না হলে বিভ্রান্তিতে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তিন ফুট একটা গাড়িতে একটা হেডলাইট জ্বালালে তো চলবে না। সিএনজি মালিকদের সবগুলো লাইট সচল রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দুঃখের বিষয় কয়েক বছর ধরেই দেখছি সিএনজিগুলো এভাবেই চলছে।’

জানা গেছে, বগুড়া শহরে রেজিস্ট্রেশন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার। রেজিস্ট্রেশনবিহীন চলে আরও ৯ হাজার। এ ছাড়া ইজিবাইক চলে প্রায় ৩০ হাজারের মতো। এসব গাড়ির চালকেরা যেমন অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত, তেমনি গাড়িগুলোও ফিটনেসবিহীন।

সিএনজি-অটোরিকশাগুলোর মাঝখানে একটি হেডলাইটের পাশাপাশি দুই ধারে আরও দুটি ছোট লাইট থাকলেও বেশির ভাগ গাড়ির দুপাশের লাইট থাকে নষ্ট। শতকরা ৬০ ভাগ গাড়িতেই দুপাশের লাইট বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে গাড়ির মালিকেরা দেন চালকের দোষ। আর চালকেরা বলেন তিন লাইট অপ্রয়োজনীয়। তাঁদের কাছে পথ দেখা গেলেই আর কোনো সমস্যা নেই। 
মাটিডালি-পীরগাছা রুটের এক সিএনজি অটোরিকশার মালিক আব্দুল বাসেদ বলেন, ‘দুপাশের হেডলাইট নষ্ট হয় অনেক সময়। চালকেরা আমাদের অনেক সময় জানায় না। জানালে সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দিই।’

অটোরিকশাচালক মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘একটা হেডলাইটেই রাস্তা পুরো পরিষ্কার দেখা যায়। পাশের দুটা লাইট দিয়ে তো রাস্তা দেখা যায় না। ওটা শুধু ডিম লাইটের মতো জ্বলে।’ 
ইজিবাইকচালক টুনু ফকির বলেন, ‘ইজিবাইকের সিস্টেমই তো এমন। একটাই হেডলাইট।’

বগুড়া জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ইজিবাইকের পৌরসভার অনুমোদন নেই। মানবিক কারণে তাঁদের চলাচলের অনুমতি দিলেও শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় আমরা তাঁদের ঢুকতেই দিই না। আর সিএনজি-অটোরিকশার হেডলাইট না থাকাসহ যেকোনো ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলোকে আমরা নিয়মিত জরিমানা করছি। গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স না থাকলে মামলা দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই-আগস্টে ‘ম্যাস কিলিং’ হয়েছে, ‘জেনোসাইড’ নয়: চিফ প্রসিকিউটর

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

মধ্যরাতে বিলুপ্ত এনবিআর, জন্ম নিল দুই বিভাগ

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন যেসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, জানাল অন্তর্বর্তী সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত