Ajker Patrika

মৃত্যুর ১১ বছর পর ঋণ নিয়েছিলেন পরেশ!

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
মৃত্যুর ১১ বছর পর ঋণ নিয়েছিলেন পরেশ!

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের কৃষক পরেশ চন্দ্রের মৃত্যু হয় ১৯৯৪ সালে। সেই পরেশ নাকি সোনালী ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখা থেকে ২০০৫ সালে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণ পরিশোধের জন্য সম্প্রতি নোটিশ পেয়েছে তাঁর পরিবার।

পরেশের মতো উপজেলার বেশ কয়েকজন এমন নোটিশ পেয়েছেন। তবে তাঁদের দাবি, তাঁরা কেউ এই ঋণ নেননি। ব্যাংকের তৎকালীন কিছু অসাধু কর্মী ও দালাল চক্র জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কৃষি ও এমসিডি (ক্ষুদ্রঋণ) ঋণ বিতরণে অনিয়ম করেছিল।

উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের পাঁচুইল মৃধাপাড়া গ্রামের মৃত পরেশের ছেলে নরেশ চন্দ্র কৃষিকাজ করে সংসার চালান। সম্প্রতি তিনি ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করা ব্যাংকের নোটিশ পেয়ে বিস্মিত হন। নোটিশে ২০০৫ সালে তাঁর বাবার নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।

নরেশ বলেন, চিঠিতে তাঁর বাবার ঋণ নেওয়ার তারিখ দেওয়া আছে ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর। অথচ তিনি মারা যান ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু রেজিস্ট্রারেও এই তারিখ লেখা রয়েছে।

নরেশ এই প্রমাণপত্র নিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঋণের কাগজে তারিখসহ তাঁর বাবার নাগরিকত্ব সনদ, ছবি, জমির কাগজপত্র ও স্বাক্ষর আছে। তবে সেখানে থাকা ছবিটি তাঁর বাবার নয় বলে জানানো হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাবার ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন নরেশ।

নরেশ বলেন, ‘আমাদের অভাব-অনটন লেগে থাকলেও বাবা কোনো দিন ব্যাংক থেকে ঋণ করেননি।’ একই ধরনের নোটিশ পেয়েছেন ওই গ্রামের দরিদ্র কার্তিক চন্দ্রের ছেলে আরেক নরেশ চন্দ্র। তাঁকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধের চিঠি দিয়েছে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এই নরেশ বলেন, ‘মৃত পরেশ চন্দ্রের মতো আমার নামেও ঋণের নোটিশ পাঠিয়েছে ব্যাংক। আমার নিজের কোনো জায়গা জমি নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। আমি কোনো দিন ব্যাংকে যাইনি।’

একই গ্রামের সুধান্ন্য চন্দ্র জানান, তিনি ঋণ নেননি, কিন্তু এ রকম ১০ হাজার টাকার ঋণের একটি চিঠি পেয়ে মামলা ও পুলিশের ভয়ে তা পরিশোধ করে দিয়েছেন।

থামরা গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের নামে একটি ঋণের চিঠি এসেছিল, কিন্তু তাঁর পরিবারে লোকজন না থাকায় সেটি কেউ নেননি।’

এ বিষয়ে আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম বলেন, ‘পরেশ চন্দ্র ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন মারা গেছেন। ইউপির মৃত্যু রেজিস্ট্রারে সেটা লিখাও আছে। মৃত্যুর ১১ বছর পর তাঁর নামে ব্যাংক ঋণের বিষয়টি জেনে খুবই আশ্চর্য হয়েছি। তৎকালীন ক্ষেতলাল সোনালী ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় দালাল চক্রের কারণে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কৃষি ও এমসিডি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। তদন্ত করে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এলাকার নিরীহ ও দরিদ্র মানুষেরা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।’

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, এখানে খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাইক্রো ক্রেডিট ঋণে ২৭৮ জনকে এবং আরসিডি ঋণে ১ হাজার ৯০০ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ক্ষেতলাল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব বলেন, ‘খেলাপি ঋণগুলো আদায়ের স্বার্থে নোটিশ দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যে-ই দোষী হোক না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত