Ajker Patrika

বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি

দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোর একটি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বা বিজেএস পরীক্ষা। একজন সফল বিচারক হওয়ার স্বপ্নে হাজারো আইন শিক্ষার্থী দিনরাত পরিশ্রম করেন এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। লিখিত ও মৌখিক উভয় পর্যায়ে গভীর প্রস্তুতির জন্য যেসব বিষয় অপরিহার্য, তার মধ্যে অপরাধবিজ্ঞান উল্লেখযোগ্য। ফৌজদারি দণ্ডবিধি, সাক্ষ্য আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধি—এই তিনটি আইনের সমন্বয়ে গঠিত অংশটি প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

রাখে। সম্প্রতি ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত আশরিফা আকন্দ ঐশী তাঁর নিজস্ব প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা ও টিপস শেয়ার করেছেন। লিখেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি

বিষয় নিয়ে আলোচনা

বিজেএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অংশে অপরাধবিজ্ঞান থেকে সাধারণত ১০টি প্রশ্ন আসে। এর মধ্যে সাক্ষ্য আইন থেকে প্রায় ২টি, দণ্ডবিধি থেকে ৪-৫টি এবং ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে ৩-৪টি প্রশ্ন থাকে। একই অংশ থেকে বার কাউন্সিল পরীক্ষায়ও প্রশ্ন হয়। বার কাউন্সিল পরীক্ষায় সাক্ষ্য আইন থেকে ১৫, দণ্ডবিধি থেকে ২০ এবং ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে ২০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী যদি এই অংশ একবার ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন, তাহলে তাঁর বার কাউন্সিল পরীক্ষায় প্রায় ৫৫ নম্বর এবং বিজেএস পরীক্ষায় ১০ নম্বরের প্রস্তুতি হয়ে যায়।

সহায়ক বই

অপরাধবিজ্ঞান অংশে ভালো করার জন্য মূল আইন (বেয়ার অ্যাক্ট) ভালোভাবে পড়া উচিত। এ জন্য বাজারের সহায়ক বই ও মডেল টেস্ট বই পড়া যেতে পারে। প্রতিদিন নিজে নিজের পরীক্ষা নিলে খুব উপকার হয়। লিখিত পরীক্ষায় বিস্তারিত ধারণা নিতে এবং ভালো নম্বর তোলার জন্য ড. এল কবিরের লেকচারস অন পেনাল কোড উইথ লিডিং কেস, মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের রিফ্লেকশনস অন দ্য ল অব এভিডেন্স এবং আব্দুল হালিমের টেস্কটবুক অন দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এবং জহিরুল হকের ল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বইগুলো সহায়ক হতে পারে।

ভালো করার টিপস

■ পুরো সিলেবাসের কাঠামো বুঝে নিন।

■ গুরুত্বপূর্ণ সেকশনগুলো দাগিয়ে পড়ুন।

■ প্রতিদিনের পড়ার মধ্যে অপরাধবিজ্ঞানের অংশ রাখুন।

■ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সেকশনের সঙ্গে উদাহরণ পড়ুন।

■ সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করুন। একেক অধ্যায়ের মূল পয়েন্ট ৫ লাইনে ৬ লাইনে লিখে রাখুন।

■ পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করুন।

■ লিখিত উত্তর লেখার সময় সমস্যামূলক প্রশ্নে Issue, relevant law and section, application, conclusion এভাবে IRAC form-এ লিখুন।

■ লেখায় সাব হেডিং দিন এবং মূল টার্মগুলো আন্ডারলাইন করুন।

সংশোধনী

সাক্ষ্য আইন এবং ফৌজদারি আইনে গুরুত্বপূর্ণ সেকশনগুলোতে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। তাই এগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। এ ধরনের ধারাগুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পাশাপাশি আগের আইনের সঙ্গে তুলনামূলক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য করতে হবে এবং স্পষ্টভাবে ধারণা রাখতে হবে।

রিভিশনের কৌশল

ভালো করার সবচেয়ে বড় মন্ত্র হলো নিয়মিত রিভিশন। পড়ার কোনো ঘাটতি থাকলে সঠিক রিভিশন তা পূরণে সাহায্য করে। পেনাল কোড, সাক্ষ্য আইন ও সিআরপিসি প্রতিদিনের রুটিনে রাখুন। প্রতিবার টেস্ট দেওয়ার পর ভুলগুলো চিহ্নিত করে নতুন করে শিখুন।

ঐশীর বিশেষ পরামর্শ

বিজেএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়া মানে শুধু চাকরি পাওয়া নয়, বরং মানুষের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার মহৎ দায়িত্ব গ্রহণ করা। একজন বিচারক হিসেবে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখানো, আল্লাহর ন্যায়ের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাই এটি গৌরবের পাশাপাশি বিশাল দায়িত্বও বটে। তাই জজ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন নিরলস অধ্যবসায়, সঠিক পরিকল্পনা এবং ধারাবাহিক পরিশ্রম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...