Ajker Patrika

১৪ হাজারের অস্ত্রোপচারে বিল এল ৫০ হাজার, গরু বেচতে বাধ্য হলেন কৃষক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৩১
নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুর সদরের নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকে রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, একটি সিজারিয়ান অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ১৪ হাজার টাকায় চুক্তি করলেও শেষ পর্যন্ত বিল করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পরে গরু বিক্রি করে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ওই রোগীর কৃষক স্বামীকে।

জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নের আনু সরকারকান্দি গ্রামের কৃষক মাহবুব হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী খুকুমণিকে গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে ১৪ হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই ডা. পার্সা সানজানার তত্ত্বাবধানে অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তান হয় তাঁদের।

অপারেশনের সময় স্বজনেরা পাঁচ ব্যাগ রক্তের জন্য ১১ হাজার টাকা এবং ওষুধ কিনতে আরও ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু অপারেশনের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ২২ হাজার ও ২৫ হাজার টাকার (মোট ৪৭ হাজার টাকা) দুটি আলাদা বিল ভাউচার ধরিয়ে দিয়ে পরিশোধ করতে বলে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ওষুধের তালিকা দিয়ে সেগুলোর দামও দিতে বলে।

ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি, সিজারিয়ান অপারেশনের পরপরই আরেকটি ছোট সার্জারি করতে হয়েছে, এ জন্য দুটি আলাদা বিল করা হয়েছে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, দ্বিতীয় অপারেশনের বিষয়ে তাঁদের আগে কিছু জানানো হয়নি, কোনো লিখিত চুক্তিও হয়নি।

দুটি বিল ভাউচারে দেখা যায়, প্রথম অপারেশনে সার্জারি চার্জ ধরা হয়েছে ৪ হাজার, অ্যানেসথেসিয়া ১ হাজার ৫০০, ওটি চার্জ ৩ হাজার, ডক্টরস চার্জ ৪ হাজার, সার্ভিস চার্জ ২ হাজার, মেডিসিন চার্জ ৩ হাজার, কেবিন চার্জ ৪ হাজার টাকাসহ মোট ২২ হাজার টাকা।

আর দ্বিতীয় বিল ভাউচারে সার্জারি চার্জ ১০ হাজার, অ্যানেসথেসিয়া ২ হাজার, ওটি ৩ হাজার, সার্ভিস চার্জ ১ হাজার ৫০, মেডিসিন চার্জ ৩ হাজার, কেবিন চার্জ ৩ হাজার এবং অন্যান্য খরচসহ মোট ২৫ হাজার টাকা দেখানো হয়।

রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন, যেখানে প্রথম অপারেশনে সার্জারি চার্জ ৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, সেখানে দ্বিতীয় অপারেশনে সার্জারি চার্জ ১০ হাজার টাকা কীভাবে ধরা হয়? অথচ প্রথম অপারেশনে ডক্টর চার্জ ধরা হয়েছে ৪ হাজার, আর দ্বিতীয় অপারেশনে ডক্টর চার্জ ধরা হয়েছে ২ হাজার টাকা। আবার একই সময়ে দুটি অপারেশনের জন্য ওটি চার্জ, কেবিন চার্জ, সার্ভিস চার্জ—সবকিছুই কীভাবে ডাবল ধরা হয়?

এদিকে দ্বিতীয় অপারেশনের বিল-ভাউচারে মেডিসিন বাবদ ৩ হাজার টাকা দেখানো হলেও, নার্সদের মাধ্যমে হাতে লেখা একটি আলাদা কাগজে আরও ৬ হাজার টাকার ওষুধের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে সাংবাদিকেরা এ নিয়ে ক্লিনিকের মালিক মাহবুব রশিদ রিপনের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুটি অপারেশনের জন্য দুটি বিল করা হয়েছে। অনুরোধ করলে ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে। পরে তিনি প্রথম অপারেশনের বিল ২২ হাজার থেকে ১৪ হাজার এবং দ্বিতীয় অপারেশনের বিল ২৫ হাজার থেকে ১২ হাজারে নামিয়ে দেন। ডিসকাউন্টের পর সব মিলিয়ে ৩১ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে ছাড়পত্র দেওয়া হয় রোগীকে।

তবে রক্ত ও ওষুধ বাবদ আগে খরচ হওয়া ১৫ হাজার এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যোগ করলে মোট দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। গরু বিক্রি করে সেই টাকা জোগাড় করতে হয়েছে বলে জানান কৃষক মাহবুব হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কৃষিকাজ করে খাই। সিজার অপারেশনের জন্য ১৪ হাজার টাকায় চুক্তি করেছিলাম, কিন্তু সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরু বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছি। তারা দ্বিতীয় অপারেশনের কথা আগে কিছু বলেনি, হঠাৎ বিল ধরিয়ে দিয়েছে।’

নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মাহবুব রশিদ রিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি অপারেশনের জন্য দুটি বিল করা হয়। পরে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন মো. রেহান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত