Ajker Patrika

নেই কসাইখানা, ছড়াচ্ছে রোগ

  • সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু।
  • ১৩ শ হাট-বাজার, কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।
  • অধিকাংশের নেই সনদ, নিয়মের বিষয়ে জানেন না বেশির ভাগ মাংস ব্যবসায়ী।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুর বিভাগজুড়ে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি পশু জবাই করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। বিভাগে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার রয়েছে, তবে কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।

আইন অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা একসঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। পশুর রোগ ছড়াচ্ছে মানবদেহে।

প্রচলিত আইনে মাংস ব্যবসা শুরু করার আগে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হয়।

এরপর প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাংস বিক্রির লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু রংপুর বিভাগের অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরই এ ধরনের সনদ নেই। অনেকেই নিয়মটির ব্যাপারে জানেনই না।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গরু থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স রোগ ধরা পড়ে। অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ নিয়ে দুজন মারাও যান। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হন একজন। অন্যজন অসুস্থ গুরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া আরও অনেকজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে পাশের গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়ও। কিন্তু সেখানেও মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেই। করা হয় না নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই উপজেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি স্পটে দৈনিক গরু-ছাগল জবাই করা হয় ৬০ থেকে ৬৫টি।

তারাগঞ্জ উপজেলায় মাংস ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬০ জনেরও বেশি; কিন্তু কারও লাইসেন্স নেই। এমনকি এই উপজেলায় জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হয় না। তারাগঞ্জের মাংস ব্যবসায়ী হাসিনুর ইসলাম বলেন, ‘মাংস ব্যবসার জন্য প্রাণিসম্পদ থাকি লাইসেন্স নিবার নাগে এটা জানতাম না। কয়েক দিন আগে মিটিংয়ে শুনেছি। এখন নিব। আমরা অসুস্থ পশু জবাই করি না। ওই জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি না। শেড দখলে তাই গরু বাইরে জবাই করি।’

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতে খারুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় কোনো মাংস ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই। তাঁরা শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করেন। অনেকের তাও নেই। আমরা সভা করে সব মাংস ব্যবসায়ীকে লাইসেন্স ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বলেছি। তাঁরা আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স প্রদান করব। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। বৈধভাবে মাংস ব্যবসা না করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সুন্দরগঞ্জ পৌর বাজার ইজারাদার ও মাংস ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, ‘পৌরসভায় নিয়মিত পরীক্ষা হয়। এটা সব জায়গায় করা উচিত। বিশেষ করে বামনডাঙ্গা, রামগঞ্জ ও বেলকায়। এর মধ্যে রামগঞ্জ বাজারে বেশি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। আর এ মাংসগুলো তারা সব জায়গায় পাইকারি দেয়।’

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা এবং রামগঞ্জ বাজারের কসাইখানায় ফুললি সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা। সেখানে পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই গরু-ছাগল জবাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বাকি কসাইখানাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

রংপুর বিভাগের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুর হাই সরকার বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাই; কিন্তু চরম জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে হাট-বাজারগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার।’

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বলেন, ‘আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছিল। আজ তার রিপোর্ট পাঠিয়েছে। এখনো দেখিনি। রিপোর্টে কী আছে, দেখে বলতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃত্ব হারাল পরিচালনা পর্ষদ

৪ দিন ধরে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক যুবকের মৃত্যু, ইনচার্জ গ্রেপ্তার

টিকটকে পরিচয়, মোবাইল উপহার দিতে ডেকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

খাগড়াছড়ি সহিংসতা: ‘ভুয়া ধর্ষণ’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন হান্নান মাসউদ

বিসিবিতে কাজ করতে আগ্রহী ওয়াসিম আকরাম, তবে...

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত