Ajker Patrika

মাটির ঘর: গরম-ঠান্ডায় আরামদায়ক বাসস্থান

কে এম হিমেল আহমেদ, বেরোবি
মাটির ঘর: গরম-ঠান্ডায় আরামদায়ক বাসস্থান

দেশে চলছে গ্রীষ্মকাল। মৌসুমের এই সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষের জেরবার অবস্থা। একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামে মাটির ঘর পাওয়া যেত। আধুনিকতার দাপটে সেসব ঘর বিলুপ্তির পথে। তবে এখনো টিকে থাকা মাটির এসব ঘর যেন তীব্র এই গরমে শান্তির বালাখানা। বিপরীতে তীব্র শীতেও মাটির ঘর আরামদায়ক বাসস্থান। রংপুরের বদরগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে মাটির ঘরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এই অনুভূতি জানা গেছে।

উপজেলার ছয়-সাতটি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এলাকায় এখনও অনেক মাটির ঘর রয়েছে। একসময় এসব এলাকায় প্রায় প্রতিটি ঘর ছিল মাটির তৈরি। কিন্তু আধুনিকতার স্পর্শে কাঁচা থেকে পাকা বাড়ির দিকে ঝুঁকছে এলাকার মানুষ। মাটির ঘরের পরিবর্তে দালান-কোঠা বানাতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন লোকজন। 

মাটির বাড়ি তৈরির নির্মাণ উপকরণ সামগ্রী
মাটির বাড়ি তৈরির নির্মাণ উপকরণ বলতে প্রথমেই আসে মাটি, বাঁশ, খড়কুটো, গোলপাতা, হোগলার পাতা, কাঠ ইত্যাদি। উত্তরবঙ্গে মাটির গাঠনিক অবস্থান শক্তিশালী। গ্রামীণ বাংলার পরিপাটি চালাঘরের স্থাপনা সম্রাট অশোকের সময় থেকে, পাল, সুলতান, মোগল ও ব্রিটিশ রাজ-স্থাপত্যে অনুকরণীয় ছিল। প্রচণ্ড শক্তিশালী অনুকরণীয় মাধ্যম হয়ে উঠেছিল গ্রামীণ বাংলার ঘর ও অবকাঠামো। প্রাচীন, প্রাক-মুসলিম ও পরবর্তী সময়। উত্তরের এই জনপদে মাটির বসতবাড়িগুলো দোতলা, এমনকি তিন তলাও দেখা গেছে। 

একসময় মাটির ঘর তৈরি করতেন বদরগঞ্জ উপজেলার সরকারপাড়া গ্রামের সাদেক আলী (৬০)। তিনি বলেন, ‘বাহে, খিয়ার মাটির কাদো পাও দিয়্যা দলাইমলাই কইরার নাগে। যত বেশি দলাইমলাই হয়, ঘর ততই মজবুত, শক্ত হয়। একনা মাটির ঘর বানাইতে দুই-তিন মাস নাগে। আগোত হামার এত্তি প্রত্যেক বাড়িত মাটির ঘর আছলো।’ 

আরেক মাটির ঘর তৈরির কারিগর মো. শওকত বলেন, তিনি মাটির কাজ করেছেন ২০ বছর। আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি তৈরি করেছেন। তাঁর এলাকায় ১০-১২ জন মিলে মাটির ঘর তৈরি করতেন। তাঁদের অনেকেই আর বেঁচে নেই। 

রস্তমাবাদ গ্রামের শতবর্ষী আব্দুল ওহাব বলেন, ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেও কিছু হয় না। বর্তমান সময়ে ইটের দালানকোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়িঘর। 

খিয়ারপাড়া গ্রামের জাহানারা খাতুন (৬০) বলেন, ‘হামার বাড়ি করার বয়স ৩০ বছর হইল। স্বামীর তৈরি করা ঘরটিতেই বসবাস করছি। ঠান্ডর দিনোতও আরাম, গরম কালেও আরাম। বাড়িত সাগাই আসলে নয়া মাটি দিয়ে লেপে দেই, আবার চকচক করে ঘর। বিল্ডিং ঘরের থাকি মাটির ঘরত শান্তি বেশি।’ 

মাটির ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকাগ্রামাঞ্চলে মাটির ঘরের কদর আগের মতো নেই বলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মোনারুল ইসলাম মোনা। তিনি বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পাকা ঘর তৈরি করার প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু মাটির ঘরেই আরাম বেশি। 

মাটির ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে উন্নয়ন গবেষক উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। একটা সময় আমরা মাটির ঘরে বাস করতাম। এখন আমরা পাকা ঘর তৈরি করছি। অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ যখন তার শিল্প, সংস্কৃতি, চলাফেরা, বসবাস নানাবিধ জায়গায় পরিবর্তন আনে, এটা আমাদের সভ্যতা পরিবর্তন প্রক্রিয়া। আজকের পরিবর্তন আগামী দিনেও পরিবর্তন হবে বিষয়টা স্বাভাবিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত