Ajker Patrika

এক ফুটে খরচ ৪৪ হাজার

  • অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে।
  • এবারের প্রকল্পে বাঁধের ওপরের দিকে ১২ মিটার ব্লক এবং নিচে ১৫ মিটার বালুর বস্তা ফেলা হবে।
  • দু-এক বছর পরপরই পদ্মায় বর্ষার নতুন পানি আসার সময় বাঁধের ওই স্থানটিতে বালুর বস্তা ফেলতে দেখা যায়।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আসন্ন বর্ষায় ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন বাঁধে। আজকের পত্রিকা
আসন্ন বর্ষায় ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন বাঁধে। আজকের পত্রিকা

রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর একটি বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১১০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই বাঁধ সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মিটারে খরচ ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৩ টাকা। আর প্রতি ফুটে খরচ পড়ছে ৪৪ হাজার ৪৮১ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে।

নগরের শ্রীরামপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইনসের ঠিক বিপরীতে এই সংস্কারকাজ চলছে। পুলিশ লাইনসের বিপরীত দিকেই রয়েছে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। সেখান থেকে আরও পূর্বে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বাসভবন। বাঁধের ওই স্থানে ভাঙন শুরু হলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পদ্মার গর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে দু-এক বছর পরপরই পদ্মায় বর্ষার নতুন পানি আসার সময় বাঁধের ওই স্থানটিতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলতে দেখা যায়। এবারও বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাঁধের ঠিক বিপরীতে পুলিশ লাইনসের ভেতর রয়েছে একটি পুকুর। ২০০ মিটারের কম দূরত্বে পাশাপাশি দুটি জলাধার থাকলে মাটির নিচ দিয়ে পানি চলাচল হয়। এতে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাঁধটি বারবার সংস্কার করতে হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন থেকে কেশবপুর বটগাছ পর্যন্ত ১১০ মিটার বাঁধ রক্ষায় বরাদ্দ এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে বাঁধের ওপরের দিকে ১২ মিটার ব্লক এবং নিচে ১৫ মিটার বালুর বস্তা ফেলা হবে। ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি দেওয়া হয়েছে খাজা তারেক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

গতকাল সোমবার সকালে বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের দক্ষিণ পাশে পদ্মায় বড় একটি চর জেগে উঠেছে। সেই চরের বালু বস্তায় ভরে নৌকায় করে এনে পাড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি বালুর বস্তার জন্য শ্রমিকেরা ১৪ টাকা করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।

কাজ তদারকির জন্য ছিলেন পাউবোর কার্যসহকারী মাহবুব আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম। তাঁরা জানান, মোট ৩২ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হবে। এর মধ্যে ডাম্পিংয়ে (পানির নিচে) থাকবে ২৬ হাজার ৫০০ বস্তা। আর স্লোপে (পানির ওপরে) থাকবে বাকি বস্তা। ওপরের দিকের কিছুটা অংশে থাকবে আগের পুরোনো কংক্রিটের ব্লক।

পাউবোর রাজশাহীর কয়েকজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অল্প একটু বাঁধ সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ফুটের জন্য ৪৪ হাজার ৪৮১ টাকার অস্বাভাবিক বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।

জরুরি এই সংস্কারের প্রাক্কলন করেছিলেন রাজশাহী পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হুরায়রা। এ বিষয়ে মোবাইলে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো প্রশ্ন থাকলে তথ্য অধিকার আইনে ফরম পূরণ করে আবেদন দিতে হবে। এর বাইরে তিনি কথা বলতে পারবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘বারবার দেখি সংস্কারকাজ শুরু হয়। পানিতে কত বালুর বস্তা ফেলে তার কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। এখনো ৫০ বছর আগের পরিকল্পনায় কাজ চলে। এগুলো বন্ধ করে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা উচিত, যাতে ১০ বছর আর হাত দেওয়া না লাগে। এই কাজে অতিরিক্ত বরাদ্দ হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’

জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ পেয়ে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কাজ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী সমাধান করতে গেলে প্রায় ১২ কোটি টাকা দরকার। একটা প্রকল্পের ভেতর এই অংশটুকু রেখে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত