Ajker Patrika

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

সংসদের দ্বৈত ভূমিকার সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন

  • সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে করা হলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
  • সংসদকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব।
  • আজকের আলোচনায় সনদ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পাশাপাশি সংবিধান আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টিও রাখা হবে।

কমিশন মনে করে, আগামী জাতীয় সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে। কারণ, জুলাই সনদে সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। যেটি নিয়মিত সংসদের সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে করা হলে পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দেওয়ার আদেশ জারি করতে কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করেছে কমিশন। যেখানে রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি প্রস্তাবের ৪৩টিই সংবিধান সংশোধন বা সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছর মেয়াদসহ সংবিধানের মৌলিক বেশ কিছু ধারা সংস্কার করতে হবে। যেগুলো সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হলে আদালতে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভার ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। কমিশনের কেউ কেউ মনে করেন, সংস্কার টেকসই করতে পরবর্তী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতেই হবে।

পরবর্তী জাতীয় সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গণভোট হয়ে গেলে সংসদকে বাধ্যতামূলক করার বিষয় নেই। গণভোট তো জনগণের অভিমত। তারপরও আমরা বলেছি, বিষয়গুলো যেহেতু ভিন্ন রকম, এটা বিশেষজ্ঞরা বিবেচনা করবেন। সেখানে সংসদের বিষয়টি সমন্বয় করা যায় কি না, সেটি আলোচনা করতে কালকে (বুধবার) তাঁদের সঙ্গে বসব।’

জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে পরামর্শ নিতে কমিশন ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেছে। যার সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে কমিশন। যেখানে জুলাই সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞরা প্রথমে সংবিধান আদেশের কথা বলেছিলেন। পরে অবশ্য জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নেওয়ার কথা বলেন তাঁরা। এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়গুলো তোলে কমিশন। সেখানে বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার কথা বলে। তবে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল সংবিধান আদেশের পাশাপাশি গণভোটের কথা বলে। দলগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কমিশন আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে প্রথমে সংবিধান আদেশ, পরে সুপ্রিম কোর্টের মতামত এবং সবশেষে গণভোট নেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।

কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে ৫ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসে কমিশন। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের মতামত না নেওয়ার পক্ষে মত দেয় দলগুলো। তবে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ভোটের দিন গণভোট করার কথা বলে। সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে তারা। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো ভোটের দিন গণভোটের কথা বললেও সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে পরবর্তী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে। জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল ভোটের আগেই গণভোট নেওয়ার পক্ষে। যেটি সংবিধান আদেশের ভিত্তিতে হবে।

দলগুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করে কমিশন। বেলা সাড়ে ৩টার পর মুলতবি হওয়া বৈঠকটি আজ দুপুর ১২টা থেকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হবে।

সনদের আপত্তি থাকা বিষয়গুলো গণভোটে কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণভোটে দুটি প্রশ্ন থাকতে পারে—যার একটি হবে একমত হওয়ার বিষয়গুলোতে সমর্থন আছে কি না, আরেকটিতে আপত্তি থাকা বিষয়গুলোতে সমর্থন আছে কি না। একই সঙ্গে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) উচ্চকক্ষসহ মৌলিক যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, তা নিয়ে তৃতীয় আরেকটি প্রশ্ন রাখার বিষয়েও কথা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কোন কোন প্রশ্নে গণভোটে হতে পারে, সে বিষয়ে আমরা নানা বক্তব্য দিয়েছি। তবে চূড়ান্ত মতামত আজকের বৈঠকে দেওয়া হবে। তবে গণভোটে হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে আপত্তিগুলো বাদ পড়ে যাবে বলে সবাই মত দিয়েছেন। আর গণভোটের আগে সংবিধান আদেশ দিতে হবে।’

বিশেষজ্ঞরা জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট করার পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, ভোটের আগে গণভোট হলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আপত্তি দেবে। সে ক্ষেত্রে গণভোট আটকে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সেটি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে গণভোটে যাওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ একটা আদেশের মাধ্যমে যেতে হবে। সেখানে কী থাকবে, কীভাবে থাকবে—সেগুলো নিয়ে কথা বলেছি।’

আজ দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দিনের বৈঠক হবে। কমিশন সূত্র বলছে, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া গেলে প্রস্তাব আজই চূড়ান্ত করতে চাই।’ চূড়ান্ত প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানোর জন্য আরেক দফা আলোচনায় বসার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নজিরবিহীন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘অপমানিত বোধ’, মাউশির মহাপরিচালক চাইলেন অব্যাহতি

অস্বাভাবিক আচরণ করছে পাখিরা—বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

আওয়ামী লীগ নেতার হিমাগারে মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ‘হাতুড়িপেটা’ ও দুই বোনকে ‘সেফটি পিন ফুটিয়ে’ নির্যাতন

বিসিবির পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা

একটি বিশ্বমোড়লসহ তিন পরাশক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত