Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলছে ইলিশ নিধন

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদ- নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন থেমে নেই।
  • মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে জেলেদের হামলা।
খান রফিক, বরিশাল 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিষেধাজ্ঞা দিয়েও বরিশালে থামানো যাচ্ছে না ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর চার দিনের মাথায় হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মৌসুমি জেলেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ শিকার করছেন তাঁরা। এমনকি মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে।

মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করেছেন, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল সদরে মা ইলিশ রক্ষার তৎপরতার চেয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানের নামে প্রদর্শনীতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। এসব এলাকার কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, মেঘনা, কালাবদর, গজারিয়া, তেঁতুলিয়া নদীতে এরই মধ্যে নেমে পড়েছেন শত শত জেলে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এক দিকে অভিযান করলে অপর দিকে ইলিশ ধরায় চলছে মহোৎসব।

ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় এত চেষ্টার পরও সফলতা আসছে না। ট্রলিং বোট, সাগরের মুখে জাল, বিদেশি বোট এবং বাণিজ্যিক ট্রলার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা—এই চার কারণে ইলিশ উৎপাদন গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টন কমে গেছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীতে অভিযানকারী দলের ওপরে দা, লাঠি নিয়ে হামলা করেছেন একদল জেলে। বিকেলে মেঘনার আলীগঞ্জ অংশে এ হামলায় মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলমসহ তিনজন আহত হন। এ সময় সাত জেলেকে আটক করা হয়।

হিজলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের যৌথ উদ্যোগে অভিযান চলছে। মঙ্গলবার বিকেলে অভিযানকারী দলের ওপর দা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান জেলেরা। এতে তিনিসহ কোস্ট গার্ডের কয়েক সদস্য আহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন জানপুর, নাচোকাঠি, ওড়াকুল, আবুপুর, গঙ্গাপুর, আলীগঞ্জ, মেঘনার বাহেরচরে সবচেয়ে বেশি মা ইলিশ নিধন চলছে। শক্তিশালী ইঞ্জিনের ট্রলার ছুটে চলছে এসব এলাকায়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, স্পিডবোট এবং ড্রোনের প্রদর্শনী চালিয়ে মা ইলিশ রক্ষা করা যাবে না।

হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার হেলাল উদ্দিন জানান, তাঁর ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনায় দিনরাত জেলেরা ইলিশ নিধন করছেন। নদীতীরের বাগানে ও বরজের মধ্যে মাছ বেচাকেনা হয়। নদীতে জাল ফেলে ওপরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। জেলেরা তীরে অবস্থান করেন। প্রশাসনের স্পিডবোট ঘুরে গেলেও তাঁরা নদীতে জাল দেখতে পান না। চলে যাওয়ার পরই ইলিশবোঝাই জাল তোলা হয়।

এসব প্রসঙ্গে জানতে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমকে গতকাল বুধবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

একই ঘটনা ঘটছে মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, গজারিয়া নদীবেষ্টিত মেহেন্দীগঞ্জে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দড়িরচর খাজুরিয়া, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের হাজিরহাট বাজার, লেংগুটিয়া বাজার, সিন্নিরচর বাজার, চরগোপালপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার, রাস্তার মাথা, আমিরগঞ্জ বাজার, চরএককরিয়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজার, উত্তরচর মাছঘাট, চর ইলিশা মাছঘাট, আলীগঞ্জ বাজার, ভাসানচর ইউনিয়নের বাগোরজা ঘাট, খলিশার পাড়, উলানিয়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজার, বুড়িরপোল বাজারে প্রকাশ্যে মা ইলিশ বিক্রি চলছে।

মেহেন্দীগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি জানান, জেলেদের নৌকা খালের মধ্যে থেকে এসে হামলা করে ফের খালে ঢুকে যায়। প্রশাসনের স্পিডবোট আকারে বড় হওয়ায় খালে ঢোকার সুযোগ নেই। আগামী মৌসুমে খালের মুখ বন্ধ করার প্রস্তাব করা হবে।

জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ‘ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। আটকের পর জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭৫ কোটি টাকার কর ফাঁকি: এনবিআর কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর

ধর্ষণের আলামত নষ্ট, ধুনট থানার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে পরোয়ানা

হিমাগারে ডেকে নির্যাতন: রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার তিন ছেলে-মেয়ের জামিন, পুলিশের ‘দুর্বল’ ভূমিকা

ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ ও চার্চের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

ওমর ইয়াঘি: ফিলিস্তিনি শরণার্থীর বিজ্ঞানে নোবেল জয়, রসায়নে দ্বিতীয় মুসলিম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত