Ajker Patrika

‘আমাকে মেরেছেন, এটা আম্মাকে বইলেন না’, ইন্টার্নদের প্রতি রোগীর ছেলের আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ২৯
‘আমাকে মেরেছেন, এটা আম্মাকে বইলেন না’, ইন্টার্নদের প্রতি রোগীর ছেলের আকুতি

‘আর মাইরেন না স্যার। ভাই, মাফ চাই। মাফ চাই ভাই। ম্যালা মাইর‍্যাছেন ভাই। আমাকে একটু পানি খেতে দেন। আমি মরে যাব। আমাকে মারার কথা আম্মাকে বইলেন না।’ মারের চোটে বারবার এ কথা বলছিলেন সুমন পারভেজ রিপন (২৮) নামের এক যুবক। এ সময় তাঁর কাছে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলো যে রিপন ভুলই করেছেন। মারধরের ঘটনায় কোথাও অভিযোগ করবেন না, এমন স্বীকারোক্তিও নেওয়া হলো তাঁর। 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীর ছেলেকে দরজা বন্ধ করে এভাবেই বেধড়ক পিটিয়েছেন একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী রিপনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোসপাড়া মহল্লায়। 

রিপনের মা পিয়ারা বেগম (৬০) গত শুক্রবার থেকে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুই দফায় মারধরের সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১১টার দিকে রিপন বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে তাঁর মায়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে যান। এই রিপোর্ট দেখার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে রিপন সেখান থেকে চলে গেলে কৌশলে ডেকে এক দফা মারধর করা হয়। এরপর একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এলে রিপন তাঁকে ঘটনার বিষয়ে জানাতে যান। তখন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সামনেই দ্বিতীয় দফায় রিপনকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যান। রিপনের বক্তব্য শোনার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

দ্বিতীয় দফায় মারধরের ঘটনার ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী রিপন বলছেন, তাঁকে ডেকে এনে মারধর করা হয়েছে। তখন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক রিপনকে শাসিয়ে বলেন, ‘কেন মারল সেই কথা বল।’ এ সময় একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক রিপনের টুপি খোলার নির্দেশ দেন এবং চড়থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। তখন রিপন বলতে থাকেন, ‘ভাই, মাইরেন না আর।’ ‘ও মা’ ‘ও মা’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। 

একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘মারতে মারতে তোকে শেষ করে দিব। চিনিস তুই আমাদেরকে? চোখ-কান ফাটাবি তুই?’ রিপন বলতে থাকেন, ‘মাফ চাই ভাই, আর মাইরেন না ভাই।’ তখন একজন ইন্টার্ন বলেন, ‘এই ওর চুলডা খোলেন। ন্যাড়া করে দিই।’ তখন রিপন বলেন, ‘স্যার, আমাকে বাহির করে দেন স্যার।’ 

তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তুই বের হবি কেন? তুই না ডাক্তার দেখবি? দ্যাখ।’ রিপন বলতে থাকেন, ‘আমার আম্মু মইরে যাবে স্যার। এ রকম করিয়েন না।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘তোর মা মরবে কি না, সেটা আমরা দেখব।’ 

এরপর আবার মারধর শুরু হয়। এ সময় একজন চিকিৎসক ‘থাক-থাক’ বলে থামানোর চেষ্টা করলেও মারধর চলতে থাকে। একজন বলে ওঠেন, ‘এই, তুই হাত দিতে চাইছিলি না? হাত কাইটা রাইখা দিই?’ রিপন বলেন, ‘আমি মারিনি কাউকে।’ তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তুই মারার চেয়ে বড় কিছু করেছিস।’ 

মারের চোটে একপর্যায়ে রিপন বলে ওঠেন, ‘আমি মরে যাব স্যার, একটু পানি দেন পানি।’ এ সময় জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে ডেকে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘স্যার, আপনার পা দেন তো, এই তুই মাফ চা।’ 

রিপন আবার হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকেন, ‘স্যার, একটু পানি দিবেন প্লিজ। ও আমার মাথা ঘুরছে।’ এ সময় একজন নার্স এসে পানি দেন। 

তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘মুখ ধো, পানি খাবি না।’ তখন আরেকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘আমাকে বলেছে জুম্মায় জুম্মায় আট দিন বয়স হয়েছে। ওর চোখ, কান, মুখ আমি ফাটিয়ে দেব।’ তখন রিপন এ কথার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি এই কথা আপনাকে বলিনি স্যার।’ 

 ‘তুই আবার কথা বলিস? কাকে বলেছিস বল।’ জানতে চান ইন্টার্ন চিকিৎসক। এ সময় রিপন বলেন, ‘আমি কাউকে বলব না। আমাকে বের করে দেন স্যার।’ 

ইন্টার্ন চিকিৎসক তখন বলেন, ‘আমরা ভয় পাই নাকি তোকে? কাকে বলবি বল।’ রিপন বলেন, ‘আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমার আম্মা জানলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আমার আম্মাকে বইলেন না প্লিজ। আমার আম্মাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছি স্যার। আমাকে যে মেরেছেন, আমার আম্মাকে বইলেন না।’ 

একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘তোমার আম্মাকে বলব না। কিন্তু তোমার ব্যবস্থা করতে হবে।’ রিপন বলেন, ‘ব্যবস্থা তো করলেন স্যার।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘করলাম তো। এখন ডিরেক্টর স্যারের কাছে নিয়ে যাব।’ 

রিপন বলেন, ‘নিয়ে চলেন। কিন্তু আম্মাকে বুঝতে দিয়েন না স্যার।’ এ পর্যায়ে রিপনকে ‘পানি খাও’ বলে পানি খেতে দেওয়া হয়। 

তখনো মারধর শুরু হলে রিপন আবার বলতে থাকেন, ‘আর মাইরেন না স্যার। হাতজোড় করছি স্যার। অনেক মেরেছেন।’ এ সময় রিপনের নাম-ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় রিপনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এটা নিয়ে কখনোই কোনো কথা বলব না। কোনো অভিযোগ করব না।’ 

পরে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে রিপনকে উদ্ধার করে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে রিপন তাঁর সারা শরীরে মারধরের দগদগে চিহ্ন দেখান। 

এদিকে রিপনকে হাসপাতালে এমন নির্মমভাবে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। 

রামেক হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে নানা সময় কর্মসূচি পালন করা সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘হাসপাতালে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিছু সামনে আসে, বেশির ভাগই আসে না। হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার প্রতিবাদ করায় তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনাও ঘটেছে। নতুন এই ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, আমরা অবিলম্বে তাঁদের গ্রেপ্তার চাই। তা না হলে রাজশাহীর মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা মাঠে নামব।’ 

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে শেখার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি করার তাঁদের লাইসেন্সও আছে। এমন ঘটনা তাঁরা ঘটালে লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। যদিও আসলে কী ঘটেছে, তা আমি জানি না।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহমদ বলেন, ‘এই ছেলে ডাক্তারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিল। ডাক্তাররা তার বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। ছেলেটাকেও আমার কাছে আনা হয়েছিল। মৌখিকভাবে সে জানিয়েছে যে তাকেও ইন্টার্নরা মারধর করেছেন। আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। এ পর্যন্ত সেটা পাইনি।’ 

পরিচালক জানান, রিপন লিখিত অভিযোগ না দিলেও তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে দেবেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সঙ্গে যে সুপারিশ আসবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। 

হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রিপন এই মারধরের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। 

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এটা হাসপাতালের ব্যাপার। তারপরেও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাবান্ধা আইসিপিতে বিজিবির বাড়তি নজরদারি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসন থেকে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় নিজস্ব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন সদর ও বিওপির নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ টহল দল মোতায়েন করে সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বিশেষ টহলের অংশ হিসেবে সীমান্ত এলাকায় চলাচলকারী যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাটালিয়নের অধীন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে (আইসিপি) নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আইসিপি দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন ও যাত্রীদের নিবিড়ভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কে-৯ ইউনিটের (ডগ স্কোয়াড) মাধ্যমে বিশেষ তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ কায়েস বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে পার্শ্ববর্তী দেশে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভূঞাপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পাঁচজনকে জরিমানা

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় পাঁচজনকে জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার যমুনা নদীতে এই অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব হাসান।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী দায়ের করা পাঁচটি পৃথক মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে ৫০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন সিরাজগঞ্জের অছির আলীর ছেলে ইজতেহার (৫০), নড়াইলের দাউদ মোল্লার ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৬), বরগুনার নাসির খানের ছেলে হাসান (২৪), ভূঞাপুরের মোকতেল হোসেনের ছেলে করিম (৩৫) ও সানু মিয়ার ছেলে জহুরুল (৩০)।

এ সময় ভূঞাপুর থানা-পুলিশ, নৌ পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে পাঁচজনকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি  
গতকাল বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
গতকাল বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি বরিশালে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে দেখা করে দলটিতে যোগ দেন।

এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন ফরিদ, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া মনু গাজীসহ শতাধিক বিএনপির সাবেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুর রউফ তালুকদার বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। তাঁর বাড়ি বকশীগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায়। তিনি চার মেয়াদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৭ বছর ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে। স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় থাকায় এলাকাবাসী দলমত-নির্বিশেষে অভিভাবক মেনে প্রবীণ এই সমাজসেবককে ‘বটগাছ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সবার মুখে মুখে বলতে শোনা যায়, আব্দুর রউফ তালুকদার মানেই এখানকার মানুষের অভিভাবক।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে তাঁর যোগদানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রউফ তালুকদার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আব্দুর রউফ ও তাঁর সমর্থকেরা আবদুল কাইয়ুমকে জামালপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু আসনটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে।

পরে গত ১৯ নভেম্বর জামালপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এরপর থেকে তাঁর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। এর মধ্যে হঠাৎ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মাওনালা আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বটগাছ উপাধিতে ভূষিত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদার ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৬
শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও সেটির মালিক। ছবি: র‍্যাব
শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও সেটির মালিক। ছবি: র‍্যাব

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করা হয়েছে। ওই মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে আব্দুল হান্নান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে র‍্যাব।

আজ রোববার সকালে তাঁকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে র‍্যাব-২।

র‍্যাব সদরদপ্তরের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মোটরসাইকেলটির মালিক আব্দুল হান্নানকে আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে পল্টন থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হত্যার ঘটনায় হান্নান জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় র‍্যাব।

র‍্যাব আরও জানায়, মোটরসাইকেলটির নম্বর ৫৪-৬৩৭৫। আটক হান্নানের বাড়ি রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তাঁর বাবার নাম মো. আবুল কাশেম।

গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত