Ajker Patrika

পাল তোলা নৌকা এখন স্মৃতি

প্রতিনিধি, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
পাল তোলা নৌকা এখন স্মৃতি

নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জের মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকা। এক যুগ আগেও পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। ছোট-বড় এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। নদীতে একসময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত।

এখন ভরা বর্ষায়ও আর দেখা যায় না পালতোলা বাদামি নৌকা। জৌলুশ হারিয়ে নদ-নদীর অবস্থা এখন করুণ। বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা। হাতে গোনা দু-একটা চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। ঘাটে সারি সারি পালতোলা নৌকা বাঁধা থাকত। এখন সেই ঘাট দখল করে নিয়েছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

পালতোলা নৌকায় স্বামীর বাড়ি ঘিওরের সড়কঘাটা গ্রাম থেকে কালীগঙ্গা নদী বেয়ে জামশা গ্রামে বাবার বাড়ি যেতেন ফুলতার বেগম (৬০)। তিনি স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘এখন তো নদীতে পানি থাকে না। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলে। পালতোলা নৌকারে দেখি না অনেক দিন।’

ঘিওরের বালিয়াখোঁড়া ইউনিয়নের সাইংজুরী এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মতিন দেওয়ান বলেন, শৈশব থেকেই নদী আর নৌকা আমার অস্তিত্বে মিশে আছে। পালতোলা নৌকায় নদীভ্রমণে তৃপ্ত হতো মন। সারি সারি নৌকার ছন্দোবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল ওড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মন–প্রাণ আনন্দে নেচে উঠেছে। এখন তা কেবলই স্মৃতি। একসময় সাম্পান, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাওসহ বিভিন্ন ধরনের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল।

পদ্মা নদীতে পালতোলা বড় নৌকায় মাল্লার কাজ করতেন আব্দুল করিম (৬৫)। হরিরামপুরে তাঁর বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর নতুন বসতি গড়েছেন ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামে। তিনি বলেন, ‘প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসাব রাখতে হত জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার ওপর।’
পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা আন্দোলনের নেত্রী লক্ষ্মী চ্যাটার্জি বলেন, ‘নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এসব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত