Ajker Patrika

‘অতীতে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই’

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮: ১০
‘অতীতে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, ‘অতীতে আমাদের অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের নির্বাচন পরিচালনায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই।’

জয়পুরহাট সার্কিট হাউস মাঠে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার সমাপনী দিন শুক্রবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু সাঈদ এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খাজা সামছুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ। 

হুইপ স্বপন বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জাতির জন্য অপরিহার্য। কারণ এটি জাতি, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে। অতীতে আমাদের অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের নির্বাচন পরিচালনায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই।’

দেশ উন্নয়নের পথেই রয়েছে দাবি করে হুইপ বলেন, ‘একটি মহল এ দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না। তারা বলছে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের দেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে। এই দেশ শ্রীলঙ্কা নয়, সিঙ্গাপুরের পথে ধাবিত হবে।’ 

এর আগে কয়েকজন দর্শনার্থী শিক্ষার্থী ডিজিটাল মেলায় বেড়াতে এসে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

  • খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বর্জন করেছে মহানগরের ৫ থানা কমিটি।
  • জরুরি সভায় মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দুটি থানা কমিটি।
  • মঞ্জুর পক্ষে কাজ করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল সামনে এসেছে। স্থানীয় নেতারা তাঁর পাশে নেই। গত মঙ্গলবার রাতে সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটি জরুরি সভা করে মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় দলীয় কোনো পদে না থাকায় মহানগরের পাঁচটি থানা কমিটির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে তাঁর। সেই দূরত্ব কাটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে মহানগর বিএনপির ৫ থানার বর্তমান নেতারা দলীয় প্রার্থী মঞ্জুকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই তাঁরা বৈঠকেও উপস্থিত হচ্ছেন না।

খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর গত রোববার দলীয় নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক হয় মঞ্জুর বাসভবনে। পরদিন সোম ও মঙ্গলবার রাতে খুলনা ক্লাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়। বৈঠকে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর, খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা) আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ও খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া ও ফুলতলা) আসনের প্রার্থী আলী আসগর লবী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাবেক নেতারা নজরুলের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

বৈঠক শেষে খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘কীভাবে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনে নির্বাচনী কাজ করব, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা নির্বাচন করব।’

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে খুলনার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির বর্তমান নেতারা। সভায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—১২ নভেম্বর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি পেশ। ১৩ নভেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয় ও বিএনপি মহাসচিব এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বাবু বলেন, ‘আমরা আজ (বুধবার) রাত ১০টার পর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের কাছে স্মারকলিপি দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর: উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই ‘ঠিকাদার’

  • উপজেলার ছয় প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ।
  • নিজেই কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহারের অভিযোগ।
  • দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ, একটি কালভার্ট নির্মাণ।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ছয়টি প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেন। এসব কাজে তিনি মেসার্স আনাস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ফয়সাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৬টি প্রকল্পে আরএফকিউ ও পিআইসির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করে উপজেলা পরিষদ। প্রকল্পগুলো হলো, চরমার্টিন ইউনিয়নের বলিরপুল সড়কে ২টি কালভার্ট নির্মাণ এবং সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকা, তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৬ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের গেজেটেড নন-গেজেটেড কোয়ার্টার ও অন্যান্য সংস্কারে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেট সংস্কারে বরাদ্দ ৪ লাখ টাকা এবং হাজিরহাট দক্ষিণ বাজার ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব প্রকল্পেই নয়ছয় করে বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে এলাকাবাসী জানান, চরমার্টিনের বলিরপুল রাস্তা সংস্কারের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। আবার ওই সড়কে দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও মাত্র একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এদিকে তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টয়লেট সংস্কারের নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সামান্য কিছু কাজ করে বাকি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে উপজেলা পরিষদের গেজেটেড ও নন গেজেটেড কোয়ার্টার সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও কিছু কিছু অংশে রঙের কাজ করেই শেষ। এ ছাড়াও হাজিরহাট বাজারের ড্রেন সংস্কারে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চরমার্টিন বলিরপুল এলাকার বাসিন্দা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘এ রাস্তা বন্যার সময় ভেঙে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সমস্যার কথা বলার পর পরিষদের অর্থায়নে বেধে দিয়েছে। তা ছাড়া মাটি তো আমি দিয়েছি। তাহলে এত টাকা লাগবে কেন?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ঠিকাদার বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ এ উপজেলায় আসার পর থেকে নিজে অনেক কাজ করেছেন। অতীতের কোনো প্রকৌশলী এমন করেননি।

এ বিষয়ে আনাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এ কাজগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে করা হয়েছে। শুধু আমাদের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয়টি প্রকল্প আমি নিজেই এস্টিমেট করে দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন হওয়ার কথা। এখন শুনছি আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এভাবে বিল করার কোনো নিয়ম নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ বলেন, ‘কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া চাকরিকে অনেক ভালোবাসি; আমার চাকরির ক্ষতি হবে, এমন কোনো কাজ করি না।’

লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেমায়েতপুর-রোহিতপুর: পণ্যবাহী যানের সড়কে দুর্ভোগ নিত্যদিনের

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা
খানাখন্দে ভরা হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকায়।  আজকের পত্রিকা
খানাখন্দে ভরা হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকায়। আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। বিশেষ করে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরিগুলো ঢাকায় প্রবেশে বাধ্যবাধকতা থাকায় এই সড়ক দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যান চলাচল করে। দীর্ঘ যানজট, পথে পথে বাধা আর সংক্ষিপ্ত দূরত্ব হওয়ায় লাখো মানুষের ভরসা এই সড়কটি।

তবে দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত, ভাঙন ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যান চলাচল ধীরগতির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেড়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করছেন। এতে সময় এবং অতিরিক্ত অর্থের অপচয় হচ্ছে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের কানারচর থেকে ঝাউচর পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এক কিলোমিটার রাস্তায় তিন-চার জায়গায় এমন বিপজ্জনক গর্ত রয়েছে, যেখানে প্রায়ই যানবাহন উল্টে যায়। বড় যানবাহনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট।

এ ছাড়া আলিপুর ব্রিজ থেকে জালাল মেম্বারের বাড়ি হয়ে জগন্নাথপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাতেও ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙন। বিশেষ করে অসুস্থ, গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এই সড়কে চলাচল করেন।

একই চিত্র রোহিতপুর ইউনিয়নের রোহিতপুর বাজার, ধর্মশুর ও বালুয়াটেক এলাকায়। রোহিতপুর বাজারের তিন রাস্তা মোড়, সান প্লাজার সামনে সামান্য জায়গায় চার-পাঁচটি বিপজ্জনক গর্ত তৈরি হয়েছে। বালুয়াটেক গ্রামে প্রায় ২০ গজ জায়গাজুড়ে নিচু ও ভাঙা রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে এই সড়কে সৃষ্টি হয় চরম দুর্ভোগ, ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

জানতে চাইলে রোহিতপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ভূঁইয়া ও শাহজালাল জানান, স্থানীয়ভাবে নিজেরা অর্থ ব্যয়ে কয়েকবার সংস্কার করলেও বৃষ্টিতে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে রাস্তা। চোখের সামনেই প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় ট্রাক বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে।

রিকশাচালক মতিন মিয়া বলেন, ‘ভাঙা রাস্তায় রিকশার চাকা ভেঙে যায়, যাত্রী পড়ে যায়। তাই এখন আর এই পথে যেতে চাই না।’

এ বিষয়ে কথা হয়, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর সড়কের চার লেন করার কাজ খুব শিগগির শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে। কানারচর, আলিপুর-জালাল মেম্বার-জগন্নাথপুর এবং রোহিতপুর-ধর্মশুর-বালুয়াটেক অংশগুলো সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুন্দরবন ভ্রমণ: ত্রুটিপূর্ণ নৌযানে সুরক্ষার ঘাটতি, ঝুঁকিতে পর্যটক

  • ট্যুরিস্ট বোটের অধিকাংশের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না।
  • এসব নৌযানে কোনো লাইফ জ্যাকেট ও বয়া নেই। অধিক যাত্রী বহন করে।
  • সব ট্যুরিস্ট বোটে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার বোটমালিকের।
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে যাত্রা। সম্প্রতি মোংলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে যাত্রা। সম্প্রতি মোংলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুন্দরবনে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে। কিন্তু সম্প্রতি বাগেরহাটের মোংলায় ট্যুরিস্ট বোট উল্টে পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় নৌযানগুলোর ফিটনেস ও সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বন বিভাগ এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ সুন্দরবনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের।

বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, মোংলা থেকে যেসব ট্যুরিস্ট বোট সুন্দরবনে আসা-যাওয়া করে, এগুলোর নৌপথে চলাচলের কোনো লাইসেন্স নেই, কোনো ফিটনেস ছাড়পত্র নেই। চালকদেরও নেই কোনো লাইসেন্স। আবার অধিকাংশ বোটে কোনো লাইফ জ্যাকেট থাকে না, লাইফ বয়াও থাকে না। কোনো বোটে ২০ জনের বেশি যাত্রী না ওঠানোর নিয়ম থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া পাওয়ার আশায় তারা দ্বিগুণ যাত্রী বহন করে। আবার অনেক সময় পর্যটকেরা ব্যয় কমানোর জন্য অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে একটি বোটে উঠে পড়ে।

ফরিদুল ইসলামের অভিযোগ, ওই রকম নানা অনিয়ম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এসব ট্যুরিস্ট বোট চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ অথবা প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।একটি দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। তারপর আবার যা তা-ই।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস সুন্দরবন ঘুরে দেখার জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময় নদী ও সমুদ্র শান্ত থাকে। তাই সুন্দরবনের সব দর্শনীয় স্থান সহজে ঘুরে দেখা যায়। সুন্দরবনে ঘোরা যায় খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা এবং সাতক্ষীরা দিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভ্রমণ করে খুলনা ও বাগেরহাটের মোংলা দিয়ে। এই দুই জায়গা থেকে ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে করমজল, হারবাড়িয়া, কচিখালি, কটকা, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চর।

কম খরচে এক দিনে সুন্দরবন ঘুরে দেখতে পর্যটকেরা মোংলা থেকে করমজল অথবা হারবাড়িয়া পর্যটনকেন্দ্রে যায়। মোংলা থেকে সকালে রওনা দিলে দুটি জায়গা এক দিনে ঘুরে দেখা সম্ভব। মোংলা ফেরিঘাট থেকে করমজল ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া পাওয়া যায়। এ বোটে ২০ জনের বেশি চড়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা ও মোংলা থেকে সুন্দরবনে দু-তিন দিনের ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটরের শতাধিক লঞ্চ রয়েছে। এসব লঞ্চ নৌপথের নির্দেশনা মেনে লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা মেনে চলে। মূল সমস্যা হলো মোংলা ফেরিঘাট থেকে যেসব ট্যুরিস্ট বোট সুন্দরবনের স্বল্প দূরত্বে যায়, তাদের নিয়ে। মোংলায় জালি বোট, ডেনিস বডি বোট নামে পরিচিত এসব ট্যুরিস্ট বোটের সংখ্যা প্রায় ৩০০। অভিযোগ রয়েছে, এসব বোটের অধিকাংশই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। এগুলোতে কোনো লাইফ জ্যাকেট ও বয়া নেই। এরা অধিক যাত্রী বহন করে। এসব বোটের কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেটও নেই।

১০ নভেম্বর সকালে ১৩ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের ঢাইনমারী থেকে করমজল পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার সময় একটি ছোট ট্যুরিস্ট বোট ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়। এতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক এক নারী পাইলট ডুবে মারা গেছেন।

মোংলা জালি বোট মালিক সমিতির সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল বলেন, ‘আমাদের সমিতির সুন্দরবনে চলাচলের জন্য অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে সব বিধিনিষেধ সবাই মানে না। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা তার সদস্যপদ স্থগিত করতে পারি। কিন্তু আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব তো প্রশাসনের।’ সব ট্যুরিস্ট বোটে পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এই বোটগুলো চলাচলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করলে সবাই একটা নিয়মের মধ্যে থাকত।

জানতে চাইলে সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, মোংলা থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী ট্যুরিস্ট বোটগুলোর গঠন ত্রুটিযুক্ত। ছাদে যাত্রী বসানো ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও তারা ছাদেই যাত্রীদের বসার জন্য আলাদা চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করে। আর অধিকাংশ পর্যটক নৌপথে সুন্দরবনের দৃশ্য দেখার জন্য ছাদেই বসে থাকেন। ফলে তীব্র ঢেউ মুখে পড়লে এবং কুমির বা বাঘ দেখলে যাত্রীরা বোটের যেকোনো এক পাশে ভিড় করলেই বোট উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে। এ জন্য প্রতিটি ট্যুরিস্ট বোটে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ ছাড়া মোংলা ও পশুর নদে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর খুব দ্রুতগতির কিছু স্পিডবোট চলাচল করে। সেগুলো চলাচলের সময় প্রবল ঢেউ সৃষ্টি করে। ছোট ছোট নৌযান তখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন আক্তার সুমি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দু-এক দিনের মধ্যেই ট্যুরিস্ট বোট মালিকদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বসব। আশা করছি, তাদের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে পারব।’

ট্যুরিস্ট বোট দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর খুলনা বিভাগের পরিবহন পরিদর্শক মো. আখতার হোসেন খান বলেন, ‘নৌযানের নকশা, লাইসেন্স ও সার্ভে সনদ দেওয়া সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কাজ। তারপরও আমরা বিভিন্ন সময়ে এই নৌযানগুলো সঠিক নিয়মে চলাচল করছে কি না, তা তদারক করি এবং অনিয়মের অভিযোগ পেলে মামলাসহ জরিমানা করি। কিন্তু আমাদের জনবলসংকট রয়েছে। এই বোটগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ফলে সব সময় আমরা সীমিত জনবল দিয়ে তাদের তদারক করতে পারি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত