Ajker Patrika

অশান্ত পাহাড়

খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারার মধ্যে হামলায় নিহত ৩

  • সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ সদস্য, ওসিসহ আহত অর্ধশত।
  • আগুন দেওয়া হয়েছে দোকানপাটে।
  • ৩ জেলায় অনির্দিষ্টকাল অবরোধ। বন্ধ পর্যটন।
  • পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাখাগড়াছড়ি ও রামগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২: ২৪
খাগড়াছড়িতে গতকাল ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারা উপজেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে বিভিন্ন দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। গতকাল গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়িতে গতকাল ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারা উপজেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে বিভিন্ন দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। গতকাল গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধ এবং ১৪৪ ধারার মধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারায় গতকাল রোববার হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৩ সেনাসদস্য, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ সময় আগুন দেওয়া হয়েছে একটি বাজারের দোকানপাটে। এ ঘটনার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দায়ী বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মো. সাবের জানান, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের মরদেহ এনে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সোমবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ছাড়া গুইমারা থেকে আহত অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তিনজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ জন সদস্য, গুইমারা থানার ওসি, তিনজন পুলিশ সদস্যসহ অনেকে আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগির তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অবরোধ বাড়ল, পর্যটন বন্ধ

গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। তারা ঘোষণা দিয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধের আওতা বাড়িয়ে তিন পার্বত্য জেলায় করা হয়েছে এবং সেটা চলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এ সময় সব পর্যটন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

জুম্ম ছাত্র-জনতার ৮ দফা দাবির মধ্যে আছে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার ও বিচার; আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনার তদন্ত ও বিচার; আটক করা সব জুম্ম ছাত্র-জনতাকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি।

গুইমারায় হামলা-আগুন

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শনিবার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা রাত ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দাঙ্গা বাধাতে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গসংগঠন রোববার সকাল থেকে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হয়।

এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে তাঁদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন অফিসারসহ ১০ জন সেনাসদস্য আহত হন। একই সময়ে রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকজন বিজিবি সদস্য আহত হন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সংঘর্ষ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিমের একটি উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪-৫ দফা অটোমেটিক অস্ত্র ব্যবহার করে আনুমানিক ১০০-১৫০টি গুলি ছোড়ে। এতে পাহাড়ি ও বাঙালি সাধারণ মানুষসহ সেনাসদস্যরা গুলিবিদ্ধ হন। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দেয়। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সশস্ত্র দলটি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, অবরোধকারীরা সকালে উপজেলার খাদ্যগুদামের সামনে জড়ো হয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় দোকানপাটে অগ্নিসংযোগও করা হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সশস্ত্র হামলা করে। এ সময় গুলিতে নিহত হন তিনজন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, সেনাবাহিনীর ওপর প্রথমে অতর্কিত হামলা হয়। এতে কয়েকজন সেনাসদস্য ও স্থানীয় অনেকজন আহত হন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সেনাবাহিনীর সিন্দুকছড়ি জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানী বলেন, ‘১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অবরোধকারীরা সড়কে বিক্ষোভ ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে আমাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের ১১ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।’

মেজর মাজহার আরও বলেন, ‘অবরোধকারীরা প্রথমে সংখ্যায় ২০-২৫ জন ছিল। সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পেছন দিক থেকে কয়েক শ লোক এসে আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে।’

সংঘর্ষে হামলার শিকার হন দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকেরাও। বিজয় টিভির জেলা প্রতিনিধি এম সাইফুর রহমান গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী গতকাল রাতে জানান, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইরিন আক্তার বলেন, পরিস্থিতি থমথমে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

খাগড়াছড়ি সদরেও গতকাল অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও জানমালের নিরাপত্তায় খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে জেলা সদরে মোতায়েন করা হয় সাত প্লাটুন বিজিবি। তবে সকাল থেকে জেলা সদরে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বন্ধ ছিল শহরের দোকানপাট। গত রাতে সাজেকে আটকা পড়া দুই হাজারের বেশি পর্যটককে সেনা নিরাপত্তায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে এবং স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেলচালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগীরা চলতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত