Ajker Patrika

যশোরে ছিনতাই: সহজ টার্গেট হচ্ছে অটোচালক

  • জেলায় প্রায়ই ঘটছে অটোরিকশা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।
  • চালক খুনেও পিছপা হচ্ছে না ছিনতাইকারীরা।
  • গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫ অটোচালক খুনের তথ্য মিলেছে।
জাহিদ হাসান, যশোর 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের ১১ আগস্ট। যশোরের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের সোনাচুনি বিলের মধ্যে একটি গাছের সঙ্গে গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় লিমন শেখ (২৫) নামের এক ভ্যানচালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার বুইকারা গ্রামের কাসেম শেখের ছেলে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তিনি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। ঘটনার এক দিন পর নিহতের পরিবার মামলা করে। পুলিশের তদন্তে উদ্ঘাটিত হয় এ হত্যার রহস্য। ঘটনার ৮ দিন পর আটক করা হয় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বিল্লাল হোসেনকে।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করে আসছিলেন ওই উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের বিল্লাল হোসেন। বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর ১১ আগস্ট রাত ১০টার দিকে নূরবাগ এলাকা থেকে দুই শ টাকায় লিমনের ভ্যান ভাড়া করেন তিনি। এরপর ভৈরব সেতু পার হয়ে শংকরপাশা গ্রামে নাসির ফারাজীর বাগানের কাছে পৌঁছালে ভ্যানচালক লিমনকে মারধর শুরু করেন। পরে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ভ্যানটি নিয়ে বিল্লাল পালিয়ে যান। হত্যার প্রমাণ ঢাকতে লিমনের ভ্যানের চারটি ব্যাটারি খোলার পর নিজ বসতঘরের মেঝে খুঁড়ে ভ্যানটি মাটিচাপা দিয়ে রাখেন বিল্লাল। পরে বিল্লালের বিক্রি করা ভ্যানের ব্যাটারি সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আলোচিত হওয়ায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যশোরে ৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ইজিবাইক ও অটো ভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে একটি অটো ভ্যান ও চারটি ইজিবাইকচালক ছিলেন। এসব ঘটনায় মামলা করার পর আসামিদের আটক করেছে পুলিশ। তবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। এ ছাড়া অগণিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার শিকার অনেকেই আবার ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন ইজিবাইক-অটো ভ্যান। ফলে পরিবারগুলোকে স্বজন হারানোর শোকের সঙ্গে বয়ে বেড়াতে হয়েছে ঋণের বোঝাও।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ইজিবাইকের প্রতিটি যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে খুব সহজে বিক্রি করা যায় বলেই এটি ছিনতাইয়ে আগ্রহ বেশি ছিনতাইকারীদের।

এ অবস্থায় সড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সচেতন মহল।

অভয়নগরে নিহত লিমনের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার তিন ছেলে। লিমনই আমার আর আমার স্ত্রীকে দেখত। একটা এনজিও থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে তারে একটা ভ্যান কিনে দিছিলাম। বস্তিতে একটা বাড়িতে ভাড়া থাকি। শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই বিয়েও দেইনি। যা আয়-রোজগার করত, সেটা দিয়েই আমাদের তিনজনের চলে যেত।’ তিনি বলেন, ‘আমার আরও দুই ছেলে আছে, তাদের অবস্থাও খারাপ। আমার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে খুব কষ্টে আছি। একদিকে সংসার চলে না, আবার কিস্তির মাধ্যমে ভ্যান কেনার টাকাও পরিশোধ হয়নি। যে আমার ছেলেডারে এভাবে খুন করেছে, তার দ্রুত বিচার দেখতে চাই।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ভোরে ভাড়ায় গিয়ে হত্যার শিকার হন কেশবপুরের সোহাগ হোসেন বায়েজিদ। নিহতের বাবা হাবিবুর শেখ বলেন, ‘আমার ছেলেটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল। গাড়ি (ইজিবাইক) চালিয়ে যে টাকা পেত, তা দিয়েই তার সংসার ও আমার সংসার চালাত। ছেলেটাকে মেরে ফেলার পর থেকে অনেক কষ্টে চলছি এখন। একটা গাড়ি (ইজিবাইক) ছিনতাই করার জন্য জলজ্যান্ত মানুষকেই মেরে ফেলল। পুতা (পৌত্র) ছেলের চার বছর বয়স; তাকে নিয়েও চিন্তায় আছি। ছেলের বউডাও অন্য জায়গায় কাজ করে। আমিও বৃদ্ধ বয়সে কাজ করে সংসার চালাতে হয়। ঋণের টাকায় কেনা ইজিবাইকের কিস্তি এখনো দিয়ে যেতে হচ্ছে।’

যশোর অটো ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, যশোরে ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইক রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। অধিকাংশ কিস্তির মাধ্যমে কেনা। ইজিবাইক দেড় থেকে দুই লাখ, অটো ভ্যান ৪০ থেকে ৫০ হাজার, আর রিকশার দাম ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা। ইউনিয়নের নেতারা জানান, ইজিবাইক-অটো ভ্যান ছিনতাইয়ের মূল লক্ষ্য হলো ব্যাটারি। ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাম হওয়ার ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য থাকে ব্যাটারির দিকে। পুরোনো এসব ব্যাটারি বিক্রি করার চক্র রয়েছে ছিনতাইকারীদের।

যশোর অটো ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিন হোসেন বলেন, ‘প্রায়ই শুনি ইজিবাইক ছিনতাইয়ের খবর। অনেকেই চালককে ছেড়ে দেয়, আবার অনেককে ছিনতাই শেষে হত্যাও করে। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় দ্রুত রং পরিবর্তন করে অন্য কোথাও বিক্রি করা যায় বলে ইজিবাইকের দিকে ঝোঁক ছিনতাইকারীদের। আবার ব্যাটারির দামও বেশি বলে ছিনতাই করা লাভজনক।’

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভ্যান, রিকশা বা ইজিবাইকের পার্টসের ভেতরে ব্যাটারির দাম বেশি। ফলে ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে ব্যাটারির দিকে। তারা ছিনতাইয়ের পর ব্যাটারি আলাদা বিক্রি করে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে এসব অপরাধ করে। সেখানে কোনো চালক যদি ছিনতাইকারীদের চিনতে পারে বা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তাহলেই ছিনতাইকারীরা বাঁচার জন্য ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করে। এতে অনেকেই আহত কিংবা নিহত হন। এসব ঘটনায় মামলা করার পর পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের আটক বা রহস্য উদঘাটন করেছে। তবে চালকদের সচেতন হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোফায়েল আহমেদ হাসপাতালে

শিশুকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন স্কুলশিক্ষক চাচি: পুলিশ

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

হাজি সেলিমের আজিমপুরের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার

ধর্ষণ মামলার আসামি এএসপি, তদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নারীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত