Ajker Patrika

নববর্ষের শোভাযাত্রার আঁতুড়ঘর চারুপীঠে চলছে প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞ

জাহিদ হাসান, যশোর
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ৫৪
যশোরের চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চলছে শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চলছে শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কেউ কাগজ কেটে ফুল, প্যাঁচাসহ নানা পাখপাখালির আদল গড়ছেন; কেউ আবার গভীর মনোযোগে ছবি আঁকছেন বা নকশা করছেন কাগজে। নানা আকৃতি ও ধরনের মুখোশে দেওয়া হচ্ছে রংতুলির পরশ।

এই কর্মযজ্ঞ চলছে বাংলা নববর্ষ বরণের শোভাযাত্রার আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত যশোরের চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। যার হাত ধরে দেশে নববর্ষের শোভাযাত্রার সূচনা হয়েছিল, সেই মাহবুব জামিল শামীমের নেতৃত্বে চারুপীঠে শুরু হয়েছে বাংলা ১৪৩২ সনকে বরণের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছেন শিল্পীরা। তৈরি করছেন নানা উপকরণ। চার দশক পেরিয়ে পাঁচ দশকে পদার্পণ করা শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ‘যতনে রাখি ধরণীরে’।

বাংলাদেশের বর্ষবরণের শোভাযাত্রা এখন জাতিসংঘের ইউনেসকো স্বীকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এর সূচনা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে চারুপীঠ যশোর থেকে। শুরুর বছরে এর নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। উদ্যোক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে সদ্য পাস করা শামীম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু শিল্পী হীরন্ময় চন্দ্রসহ আরও কয়েকজন।

প্রথম বছরই আনন্দ শোভাযাত্রায় যশোরবাসীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এমন সাড়া ফেলেছিল যে তা আর চারুপীঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঠিক পরের বছরই এখানে সম্মিলিতভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে তা পালিত হয়। এর জন্য যাবতীয় উপকরণ তৈরি করেছিলেন চারুপীঠ যশোরের শিল্পীরা। দলমত-নির্বিশেষে সব পর্যায়ের মানুষ এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছিলেন। যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তা সৃষ্টি করেছিল এক নতুন মহাকাব্য।

একুশের প্রভাতফেরি থেকে শোভাযাত্রার চিন্তা মাথায় আসে জানিয়ে শিল্পী শামীম বলেন, ‘তারুণ্যের রক্তে গড়া একুশের পথ ধরে আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা। যাতে আছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবার মিলন। এই একুশের প্রভাতফেরিকেই যেন ফেলে আসা সব শিল্প-ঐতিহ্যের সম্ভারে সাজিয়ে এই উৎসব রচনা করা হয়েছিল।’

এবারের আয়োজন নিয়ে শামীম জানান, শোভাযাত্রায় সব সৃজনশীলতা একসঙ্গে জ্বলে উঠবে। এখানে ঘটবে নাচ, গান, নাটক, যাত্রাসহ বাঙালি সংস্কৃতির সব ধারার সম্মিলন। নদীতে জেলের মাছ ধরা, বাউলিয়ানা, জারি, সারি, ভাটিয়ালিতে মাতোয়ারা হয়ে পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা তুলে ধরবেন অংশগ্রহণকারীরা। একটি বিশাল দৃশ্যমান ক্যানভাসে সবকিছু জীবন্ত ফুটিয়ে তোলার জন্য কর্মযজ্ঞ চলছে। শোভাযাত্রাটি যখন রাস্তায় বের হবে, তখনই আসলে বোঝা যাবে যে কী হয়েছে।

চারুপীঠের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদের তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বংসী নানা কর্মকাণ্ড থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ আর প্রাণিকুলকে রক্ষায় সচেতনতার বার্তা তুলে ধরা হবে যশোরের শোভাযাত্রায়। যেখানে থাকবে বন, বনের প্রাণী, পাহাড়, নদী ইত্যাদি। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের মতো সেজে হইহুল্লোড় করে, নেচে-গেয়ে পুরো আয়োজনকে প্রাণবন্ত করে তুলবেন। শুরুর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দলমত-নির্বিশেষে যশোরের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন। পুরো আয়োজনকে সার্থক করতে ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাউলশিল্পীরা থাকবেন। অংশগ্রহণকারীদের মাথায় থাকবে পাতা দিয়ে তৈরি করা টুপি।

শুধু চারুপীঠ নয়, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত যশোরের ৩২টির বেশি সংগঠন নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। উদীচী, বিবর্তন, ব্যঞ্জন যশোর, তির্যক যশোর, পুনশ্চ, চাঁদের হাট, উৎকর্ষ, স্পন্দন, সপ্তসুর, সুরধনী, সুরবিতান, নিত্যবিতানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে চলছে গান, নাচ, নাটক ও গীতিনাট্যের মহড়া। যশোরের সংস্কৃতিকর্মীরা সব শঙ্কা কাটিয়ে উৎসবের আমেজে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে কয়েকজন জানান, পৌর উদ্যান, মুসলিম একাডেমি, আব্দুর রাজ্জাক কলেজ, নবকিশলয় মাঠ এখন পর্যন্ত নিষ্কণ্টক থাকলেও শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হল ময়দান রয়েছে বাণিজ্য মেলার দখলে। ফলে পুনশ্চর বর্ষবিদায় ও সুরবিতানের বর্ষবরণ আয়োজনে ঘটতে যাচ্ছে ছন্দপতন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন জানান, করোনা মহামারির কারণে ১৪২৭ ও ১৪২৮ সনের নববর্ষের উৎসব ছিল ঘরবন্দী। ১৪২৯ ও ১৪৩০ সালে রমজান মাসে অনেকটা কাটছাঁট করে উৎসবে মেতেছিল যশোরবাসী। পরের বছর সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে হয়েছে বৈশাখের আয়োজন। এবার সবকিছু স্বাভাবিক থাকায় সাড়ম্বরে ঢাকঢোলের বাদ্যে মেতে উঠতে প্রস্তুত হচ্ছে সংগঠনগুলো।

উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খাঁন বিপ্লব বলেন, বরাবরের মতো এবারও পৌর উদ্যানে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সকালে ও বিকেলে দুই দফায় সংগঠনটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।

তবে দেশের প্রাচীনতম সুরবিতান সংগীত একাডেমি পড়েছে বেকায়দায়। শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হল ময়দানের বটবৃক্ষতলে সংগঠনটির বিশাল আয়োজন থাকলেও এবার বাণিজ্য মেলা বাদ সেধেছে। এর মাঝেও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সংগঠনটি। সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস জানান, উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পয়লা বৈশাখে একাডেমি কার্যালয়ে সবার জন্য মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা থাকবে।

নিরাপত্তা নিয়ে কথা হলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাঙালির এই বর্ণিল উৎসবে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। পর্যাপ্ত টিম কাজ করবে শহর ও অনুষ্ঠানস্থলে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটে মুনিগঞ্জ সেতুর নিচ থেকে ব্যবসায়ী উদ্ধার, হাসপাতালে মৃত্যু

বাগেরহাট প্রতিনিধি
ক্যাপশন: উদ্ধার করা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্যাপশন: উদ্ধার করা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জ সেতুর নিচের পিলার-সংলগ্ন বেজমেন্ট থেকে ইব্রাহিম শেখ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি করার প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিহিত ছিলেন এবং পায়ে কালো রঙের জুতা ও মোজা ছিল।

নিহত ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ বাগেরহাট শহরের নোনাডাঙ্গা এলাকার বাবর আলী শেখের ছেলে। ব্যবসার কারণে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় থাকতেন। তবে এলাকায় এলে তিনি সদর উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পাশে নির্মাণ করা নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কান্দাপাড়ার ওই বাড়ি বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি ঢাকা থেকে বাগেরহাটে এসেছিলেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে বাগেরহাটে এসে পৌঁছাননি।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উল-হাসান জানান, নিহত ব্যক্তির মরদেহের সুরতহাল (প্রাথমিক পরীক্ষা) সম্পন্ন হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি কেস) করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টঙ্গিবাড়ীতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৩

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার করা তিন আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার করা তিন আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ব্যাপারীকান্দি গ্রামের মো. উজ্জল হাসান (২২), টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের আতাউল হক ঢালীর ছেলে মো. সিয়াম ঢালী (২০) এবং একই উপজেলার হাসাইল গ্রামের আবুল দেওয়ানের ছেলে মো. ইসমাঈল হোসেন দেওয়ান (২০)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে ওই তিন যুবক ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। পরে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার রেজ্জাকুল ইসলাম রাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার রেজ্জাকুল ইসলাম রাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের ওপর হামলা করে হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া র‍্যাব। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার নবীনগর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব-১২ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ফিরোজ আহম্মেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার রাজু শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, ৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার চক ভোলাখাঁ গ্রামে তাঁর মামাতো ভাইয়ের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজু। এই খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা-পুলিশ তাঁকে আটক করে হাতকড়া পড়ায়। এ সময় রাজুর চিৎকার শুনে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর হামলা করে রাজুকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজুকে প্রধান আসামি করে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করে।

পুলিশ রাজুকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও ওই গ্রামের ১১ নারী এবং ১০ জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করে। রাজু দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজুকে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নান্দাইলে শত বছর ধরে চলছে হাইত উৎসব: বলদা বিলে মাছশিকারিদের ঢল

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রাণ ফিরে পেল ময়মনসিংহের নান্দাইল। পলো, জাল আর মাছ ধরার সরঞ্জাম হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরে হাজারো মানুষ জড়ো হলেন সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলের ধারে।

নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নান্দাইলের বলদা বিলে আজ সকালে মাছ ধরছেন শিকারিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গ্রামীণ জীবনের শত বছরের আনন্দ-ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিবছরের মতো এবারও বলদা বিলে শুরু হলো ‘হাইত উৎসব’—শৌখিন মৎস্যশিকারিদের এই মিলনমেলা পরিণত হলো এক গণ-উৎসবে।

প্রতিবছর আশ্বিনের শেষে বা কার্তিক মাসের মধ্যে যখন বলদা বিলের খালবিল ও জলাশয়গুলোর পানি কমে হাঁটু বা কোমরসমান হয়, তখনই এলাকার মানুষ দিনক্ষণ ঠিক করে এই হাইত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। উৎসবের দিনক্ষণ এক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।

আয়োজনের খবর পেয়ে মাছশিকারিরা বুধবার রাতেই বলদা বিলের আশপাশের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকে হাজার হাজার শৌখিন মাছশিকারি তাঁদের পলো, ঠেলা জাল, খড়াজাল, ডুবা ফাঁদ, চাঁইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে মাছ ধরার এই আনন্দ আয়োজনে অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাছশিকারিরা হইহুল্লোড় করতে করতে বিলে নেমে পড়েছেন। বিলের দুই পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী-পুরুষের ভিড়। আশপাশের উপজেলা, যেমন ঈশ্বরগঞ্জ, তাড়াইল, হোসেনপুর, কেন্দুয়া থেকেও মাছশিকারিরা এতে অংশ নেন। তবে এ বছর আগেই নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা বেশি মাছ শিকার করতে পারেননি।

তাই মাছশিকারিদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ লক্ষ করা গেছে। পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান শুভ বলেন, ‘হাইত উৎসবে মাছ শিকার করতে এসে তেমন মাছ পাইনি। তবে সবার সঙ্গে বিলে এসে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করেছি।’

মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, আগের মতো হাইত উৎসবের সেই জৌলুশ নেই। বর্তমানে কিছু কিছু অঞ্চলে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে গ্রামের মুরব্বিরা এই আয়োজন করেন, কিন্তু মাছশিকারিরা তেমন মাছ শিকার করতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১০০ বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা বলদা বিলে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হাইত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। তবে এ বছর নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছশিকারিরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ শিকার করতে পারেননি।’

বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এই মাছ শিকারের আয়োজন। মাছ কম মিললেও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিলনমেলা গ্রামীণ মানুষের জীবনে অন্যরকম আনন্দ এনে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত