Ajker Patrika

জামালপুরের ইসলামপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভুল বানানের ছড়াছড়ি

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর) 
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভুল বানানের চর্চা চলছে। বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক এমনকি নামফলকেও ভুল বানান চোখে পড়ছে। যেমন—এসব গুরুত্বপূর্ণ ফলকে ‘সরকারি’ শব্দটি লেখা হয়েছে ‘সরকারী’, ‘শ্রেণি’ লেখা হয়েছে ‘শ্রেণী’। কোথাও কোথাও ‘নির্মাণ’-এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘নির্মান’ এবং ‘সহকারী শিক্ষক’-এর বদলে লেখা হয়েছে ‘সহকারি শিক্ষক’।

এই ভুলগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই তারা ভুল বানান শিখছে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। বছরের পর বছর ধরে এমন ভুল চলতে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ মোট ১৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বাংলা একাডেমির বানান নির্দেশিকা না মেনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবাধে ভুল বানান ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামফলকে ‘সরকারি’, ‘প্রাথমিক’ এবং ‘খ্রিস্টাব্দ’ শব্দগুলোতে ভুল আছে। কড়ইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সরকারি’ ও ‘প্রাথমিক’ শব্দের বানানে বিসর্গ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘নির্মাণ’-এর বদলে ‘নির্মান’ এবং ‘খ্রিস্টাব্দ’-এর স্থলে ভুলভাবে ‘ইং’ লেখা হয়েছে।

এ ছাড়া, চরপুঁটিমারী ইউনিয়নের আকন্দপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোর নামকরণ করা হয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের নামে, যেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়াসহ বিভিন্ন মনীষীর নাম ভুল বানানে লেখা হয়েছে। বেনুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামফলকেও একই ধরনের ভুল দেখা গেছে। গোয়ালেরচর ইউনিয়নস্থ মালমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাথর্শী ইউনিয়নের মলমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফলকেও যথাক্রমে ‘পরীক্ষা’ ও ‘শ্রেণি’ শব্দের বানান ভুল।

বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় ব্যানার তৈরির প্রতিষ্ঠান গুরুদাস ডিজিটাল সাইনের স্বত্বাধিকারী রাজেশ কুমার পাল বলেন, “শিক্ষকরা যেভাবে লিখে দেন, আমরা সেভাবেই লিখি। বানান ভুল ধরলে অনেকে মন খারাপ করেন।”

ইসলামপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান প্রভাষক মাহমুদা সুলতানা বলেন, “মাতৃভাষা বলেই অনেকে বাংলা ভাষার প্রতি আন্তরিক নন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভুল বানান মেনে নেওয়া যায় না।”

শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হেফজুল বারী বলেন, ’শিশুরা বর্ণমালা শেখার পর যা দেখে, তা-ই বানান করে পড়ার চেষ্টা করে। ফলে যাত্রাপথে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা ভুল বানানের ঘেরাটোপ থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারে না। ভুল বানানে লেখা শিশুদের প্রভাবিত করে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ’বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, খোঁজখবর নিয়ে ভুল বানান রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ড, তথ্যছক, এমনকি নামফলকেও ভুল বানান রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, ১৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের তথ্যবাহী ছকে ভুল বানানে লেখা হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ মানিক মিয়া বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা বানানের ভুল ভাষার জন্য অমর্যাদাকর। এ ধরনের ভুল ও বিকৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া দরকার। ভাবতেও অবাক লাগে, খোদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ’সরকারি’ শব্দটি ভুলভাবে ’সরকারী’ বানানে প্রদর্শিত হলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত