Ajker Patrika

গ্রাহকের দেড় শ কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিশানের প্রধানসহ গ্রেপ্তার ২

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
মঈন উদ্দিন ও গোবিন্দ কৈরি। ছবি: সংগৃহীত
মঈন উদ্দিন ও গোবিন্দ কৈরি। ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহকের দেড় শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হবিগঞ্জের মাধবপুরে নিশান নামের একটি বেসরকারি এনজিওর প্রধান নির্বাহীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার উপজেলার তেলিয়াপাড়া ওই সংস্থার অফিস থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নিশানের নির্বাহী পরিচালক মঈন উদ্দিন বেলাল ও কর্মকর্তা গোবিন্দ কৈরি।

পুলিশ জানায়, প্রতারণার মামলায় এসআই নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ তেলিয়াপাড়া নিশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে মঈন উদ্দিন বেলাল ও গোবিন্দ কৈরিকে গ্রেপ্তার করে।

জানা যায়, ২০ বছর আগে মঈন উদ্দিন বেলাল ব্র্যাক থেকে চাকরি ছেড়ে তেলিয়াপাড়ায় নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি নাম দিয়ে একটি অফিস খুলে বসেন। নিয়োগ দেন বেশ কিছু কর্মী। তাঁরা চা-বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচার করেন, নিশানে টাকা জমা রাখলে প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়া হয়।

এই মুনাফার কথা শুনে এলাকার প্রায় ৪ হাজার মানুষ বেলাল, তাঁর ছেলে সায়েম, সালমান, শ্যালক জালাল, মাসুদ, স্ত্রী আমেনার কাছে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা জমা করেন।

শুরুতে কয়েক বছর আমানতকারীদের মাসে লাখে ২ হাজার টাকা করে মুনাফা ঠিকমতো দিয়ে আসছিলেন। যেখানে ব্যাংকে জমা রাখলে মাস শেষে প্রতি লাখে ৮০০ টাকা দেওয়া হয়। সেখানে নিশানে ২ হাজার টাকা—এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা গোপনে সবাই নিশানে টাকা জমা করেন।

কিন্তু গত তিন বছর ধরে আমানতকারীরা আসল টাকা ও মুনাফা চাইলে বিপত্তি দেখা দেয়। এ নিয়ে গত এক বছর ধরে টাকা হারিয়ে নিঃস্ব গ্রাহকেরা বিচলিত হয়ে পড়েন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ গরু-ছাগল ও জমি বিক্রি করে নিশানে টাকা জমা করেন। একপর্যায়ে গ্রাহকেরা চাপ সৃষ্টি করলে নিশানের পরিচালক সায়েম ও সালমান গোপনে পালিয়ে যান।

পরে গ্রাহকেরা নিশানের নির্বাহী পরিচালক বেলাল ও তাঁর স্ত্রী আমেনাকে তেলিয়াপাড়া নিশান কার্যালয়ে নজরবন্দী করে রাখেন। আমেনা মাসখানেক আগে পালিয়ে যান। পরে নিশানের এমডি জালাল উদ্দিন একাধিকবার সভা করে সবাইকে আশ্বাস দেন টাকা ফেরত দেবেন। অবশেষে তিনিও আত্মগোপনে চলে গেছেন।

ভুক্তভোগী গোয়াছনগর গ্রামের সাইফুল বলেন, ‘জমি বিক্রি করে লাভের আশায় নিশানে টাকা জমা করেছিলাম, কিন্তু টাকা মেরে তাঁরা সবাই পালিয়ে গেছেন।’

সুরমা গ্রামের মানিক মিয়া জানান, তাঁর বাবা আরজু মিয়া নিশানে টাকা জমা রেখে ফেরত চাইতে গিয়ে তাঁকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। সেই কষ্টে তাঁর বাবা হঠাৎ মারাই গেছেন।

পরমানন্দপুর গ্রামের রফিক বলেন, ‘কৃষিকাজ করে কষ্টার্জিত অর্থ জমা রেখেছি। কিন্তু টাকা মেরে তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করেছেন। নিরীহ মানুষ পড়েছে বিপদে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, তাঁদের সম্পত্তি সরকারের আওতায় নিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা যেন ফেরত দেয়।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, নিশানের মঈন উদ্দিন বেলাল ও গোবিন্দের নামে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত