Ajker Patrika

গয়না কিনতে গিয়ে মার্কেট থেকে নিখোঁজ ব্যাংকার

প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জুন ২০২১, ১৯: ৫৮
গয়না কিনতে গিয়ে মার্কেট থেকে নিখোঁজ ব্যাংকার

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা): গয়না কিনতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এসে এক ব্যাংক কর্মকর্তা নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৮টার দিকে পৌর শহরের রাজমতি মার্কেটের নিচতলা থেকে নিখোঁজ হন ওই ব্যক্তি।

নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তা পলাশবাড়ী উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সাহেব মিয়ার ছেলে । তিনি সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।

নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানের নিকটাত্মীয় এএফএম শরিফুজ্জামান শরিফ জানান, তিনি পলাশবাড়ীতে থেকে গোবিন্দগঞ্জে গয়না কিনতে আসেন। কিন্তু রাত পৌনে ৮টার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান নিখোঁজ ঘটনায় পলাশবাড়ী থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

গোবিন্দগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাজুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর থেকেই তাঁকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নীলফামারী জেলা সদরের রেললাইন থেকে মনিফা বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর কাদিখোল নামক স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মনিফা বেগম সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামের মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, আজ সকালে সৈয়দপুর-নীলফামারী রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী ঢেলাপীর-সংলগ্ন কাদিখোল থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ পথে চলাচল করা কোনো একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তিনি নিহত হয়েছেন। অজ্ঞাত অবস্থায় লাশ উদ্ধারের পর তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত নারীর পারিবারিক সূত্র জানায়, মনিফা বেগম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। প্রায় সময় কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর আজ সকালে তাঁর লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত বিষয়সমূহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টঙ্গীতে তুলার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সাত ইউনিট

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪২
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত একটি তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের মোট সাতটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কাজ করছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে মিলগেট এলাকার ’নিউ মন্নু ফাইনস কটন মিলস লিমিটেড’ নামক কারখানার ভেতরে থাকা একটি অস্থায়ী তুলার গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। হঠাৎ গুদাম থেকে ঘন ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা বের হতে দেখে স্থানীয়রা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয় টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, গাজীপুর সদর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা মো. শাহিন আলম বলেন, ‘গুদামে প্রচুর তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আশেপাশের অন্যান্য স্থাপনা ও গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

‎স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ আগুন লাগার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তাপে আশপাশের দোকান ও বাড়ির মানুষ দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে।

শিক্ষকদের বাকি দুটি দাবি হলো— চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে’ বলে জানিয়ে শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘২০ হাজারের বেশি শিক্ষক এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষকেরা আসছেন, অনেকে এখন পথে। আমি সরকারি প্রাথমিকের সব শিক্ষককে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাকি সংগঠনগুলো হলো, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরাও।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যা বলেছে ডিবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৬
শাহরিয়ার আলম সাম্য। ছবি: সংগৃহীত
শাহরিয়ার আলম সাম্য। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ও মো. রবিন। অভিযুক্তদের সবাই মাদক কারবারি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগপত্রে চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া চারজন হলেন—তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকার।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একই হলে ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে।

এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

অভিযোগপত্রে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উল্লেখ করেছে, অভিযুক্ত মেহেদী, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। মেহেদীর নেতৃত্বে উদ্যানে কার্যক্রম চালায় তারা। মেহেদীর কাছ থেকে গাঁজা নিয়ে বাকিরা উদ্যানের মন্দির গেট এলাকায় বিক্রি করত। বিক্রি শেষে সব টাকা মেহেদীর কাছে জমা দেওয়া হতো। ঘটনার আগে রিপন ও রাব্বি মেহেদীকে ঠিকমতো টাকা না দিয়ে বলে— কিছু মাস্তান তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা জোর করে নিয়ে গেছে, এ কারণে তারা গাঁজা বিক্রির টাকা নিয়মিত জমা দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে মেহেদী সবাইকে এক হয়ে ওই মাস্তানদের প্রতিহত করার কথা বলে। কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক টেজারগান কিনে দেয়। সাম্য ও তাঁর বন্ধুরা মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনদের উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করেছিলেন। এ থেকে তাঁদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ১৩ মে রাতে কবুতর রাব্বি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের কাছে গাঁজা বিক্রি করছিল। তার কাছে সে সময় একটি টেজারগান ছিল। কবুতর রাব্বি টেজারগান এবং সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময় চলাফেরা করত ও মাদক বিক্রি করত। কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময় থাকত। ওই রাতে সাম্য দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে মুক্তমঞ্চের দিকে গেলে কবুতর রাব্বির হাতে ইলেকট্রিক টেজারগান দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন।

রাব্বি তখন মুক্তমঞ্চ থেকে ৩০-৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোলপুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য মোটরসাইকেলে চড়ে তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং টেজারগানটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। টেজারগানটি না দিলে সাম্য রাব্বিকে চড়-থাপ্পর মারেন। রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এলে সাম্য ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। তাঁদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন ওই মোটরসাইকেলের আরোহী একজন (পলাশ সর্দার) তাদের অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলেন। মেহেদী মোটরসাইকেলের সেই ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে-মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। তা দেখে তাঁদের সঙ্গে থাকা অপর একজন (সম্রাট মল্লিক) এগিয়ে গেলে মেহেদী তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে তাঁর ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করে, এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতাহাতি করতে থাকা পাপেলকে ছাড়িয়ে নিতে মেহেদী সাম্যর বুকে ঘুষি মারে এবং কবুতর রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে সাম্যর ডান পায়ের রানে আঘাত করে। এতে সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

সাম্যর বন্ধুদের (রাফি, বায়েজিদ) সঙ্গে মোটরসাইকেলের অপর ব্যক্তির মারামারি চলাকালে সবার চিৎকারে মন্দিরের ভেতরে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে এবং আশপাশের আরও লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে আসতে থাকলে আসামিরা দক্ষিণ দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মন্দিরের প্রবেশ গেটের কাছে আগে থেকেই রাখা একটি মোটরসাইকেলে করে কবুতর রাব্বিকে নিয়ে মন্দিরের উত্তর পূর্ব পাশের পেছন দিকে মেহেদীর আস্তানায় পালিয়ে যায় রিপন।

মামলার অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া সুজন সরকারের সঙ্গে থাকা অপর লোকজন ঘটনাস্থলে এসে সাম্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। তারা সাম্যর বন্ধুদের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে সুজন সরকার মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন সাম্য মারা গেছেন। তখন ফেসবুক লাইভে এসে জানান, সাম্যর বন্ধুরা যদি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেত তাহলে এত রক্তক্ষরণে সাম্য মারা যেতেন না। ওই লাইভ পরে ভাইরাল হয়। কিন্তু মারামারির সময় ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতি ছিল না। আসামিদের সঙ্গে তাঁর কোনো পূর্ব পরিচিতি বা যোগসূত্র ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুজন সরকার তাঁর গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন তিনি ঢাকাতে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন এবং তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় দুপুরের খেয়ে সন্ধ্যার পর তাঁর দুই আত্মীয়সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে এসেছিলেন। ঘটনার পরে কালীমন্দিরের গেট দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আহতদের ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা।

পরদিন সাম্যর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে তিনি ফেসবুকে ওই ঘটনা নিয়ে পোস্ট করেন। সাম্যর বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি এবং আসামি সুজন সরকার একই গ্রামের হওয়ায় তাঁদের মধ্যে পূর্বশত্রুতার কারণে সাক্ষীরা তাঁকে ‘ওই ঘটনায় জড়িত’ বলে সন্দেহ করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তদন্তকালে এই ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনাস্থলে আরেক মোটরসাইকেলে ছিলেন তামিম, সম্রাট, পলাশ। তাঁদের মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মারামারিতে অংশগ্রহণকারী অন্যদের থামানোর চেষ্টা করলে তাঁরাও আসামিদের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। উপস্থিত সাক্ষীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত অন্য লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এলে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে তাঁরা তিনজন আহত অবস্থায় সেই স্থানে অবস্থান করেন।

সাম্যর সঙ্গে থাকা তাঁর বন্ধু ও মামলার সাক্ষী রাফি এবং বায়েজিদ তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশ তুলনামূলক কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই থাকেন। পরে তাঁরা মোটরসাইকেলে করে চিকিৎসার জন্য পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে যান এবং একজন রাজাবাজার এলাকায় যান।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক নাসিরের ৯৯৯-এ ফোনকলের পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সাক্ষীদের বক্তব্য শুনে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশদের শমরিতা হাসপাতাল ও রাজাবাজার এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে।

তদন্তকালে জানা যায়, আসামি মো. তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক (২৮), ঢাকার গুলিস্তান ও ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে জামা-কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আসামি মো. পলাশ সরদার (৩০) গ্রামের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় ফুটপাতে ব্যবসা শেষে রাতের বেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রে ঘুরতে আসেন এবং ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল রেখে গল্প করছিলেন। তঁদের সঙ্গে ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মেহেদী ও তাঁর গ্রুপের কোনো সদস্যের পূর্ব পরিচয় ছিল না। এ ছাড়া সাম্য ও তাঁর বন্ধু বায়েজিদ, রাফিদের সঙ্গেও কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মামলার অভিযুক্ত আসামিদের হাত থেকে সাম্যকে রক্ষা করতে এসে তামিম হাওলাদার মাথায় ইটের আঘাত, সম্রাট পায়ে ছুরির আঘাত এবং পলাশের চোখে জখম হয়। তাঁরা এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাঁদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত