Ajker Patrika

কাজ না করেই টাকা তুলে উধাও ঠিকাদার

হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ২২: ২০
কাজ না করেই টাকা তুলে উধাও ঠিকাদার

ফরিদপুরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের আওতায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ না করেই ৮০ শতাংশ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকাদারেরও। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন দুর্নীতি হয়েছে। অবশ্য কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, ভুলবশত বেশি কাজ দেখানো হয়েছে, যা সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আর বিলও পরিশোধ করা হয়েছে ৩৯ শতাংশ।

ফরিদপুর সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তরের ফরিদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ ও ২০২৩ সালে পরপর চারটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ নেন মেসার্স লিপু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন মুশা। এসব কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা। এর মধ্যে সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ফুরসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণের কাজ। এ ছাড়া সদরের গেরদা ইউনিয়নের বকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৩ লাখ টাকা, কানাইপুর ইউনিয়নের সাইবেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৭ লাখ টাকা এবং অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভাষাণচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

কানাইপুর ইউনিয়নের ফুরসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২ মে। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ঠিকাদার ভবন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজের ভুয়া অগ্রগতি দেখিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফরিদপুর কার্যালয় থেকে ৪৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অথচ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ২০-৩০ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাসান আহমেদ বলেন, ‘নির্মাণকাজ শুরুর তিন-চার মাস পরই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার। আমি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি, তারপরও কাজ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি গ্রেড বিম করে চলে যায়। আর কাজ করেনি।’

এলজিইডির নথিপত্রের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৮০ শতাংশ, যা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিন গিয়ে রেকর্ড করেছেন। কাজ দেখানোর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজাহারুল ইসলাম। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে কাজের অগ্রগতি ভুলবশত উল্লেখ করা হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন।

বিষয়টি নিয়ে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশীষ বাগচী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অগ্রগতির রিপোর্টটি ভুলবশত কম্পিউটার টাইপিংয়ে ৮০ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। ৪০ শতাংশ লিখতে গিয়ে হয়তো এমন হয়ে গেছে। ঠিকাদারকে ৩৯ শতাংশ কাজের বিল দেওয়া হয়েছে। বিল পাওয়ার পর ঠিকাদার আর কাজটি করেননি।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের এক পাশে নির্মাণাধীন ভবনটি। অবশ্য ভবন বলতে সেখানে শুধু খুঁটি ছাড়া আর কিছু নেই। কোথাও কোথাও রড বের হয়ে আছে। এই অবস্থায় পুরোনো একটি দুই কক্ষের ভবনের একটি কক্ষে চলছে পাঠদান। অপর একটি কক্ষের এক পাশে শিক্ষকদের বসার স্থান, অপর পাশের অল্পকিছু জায়গায় কয়েকটি বেঞ্চ বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ভবনের বারান্দায়ও বসছে ক্লাস। কখনো আবার ভবনের সামনে গাছতলায় বেঞ্চ বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাসান আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়ের এমন অবস্থায় শিক্ষার্থী কমে গেছে। ভবন নির্মাণকাজ শুরুর সময় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল, এখন প্রায় এক শ শিক্ষার্থী কমেছে।

ফুরসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার মধ্যেই একই প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালে গেরদা ইউনিয়নের বকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইপুর ইউনিয়নের সাইবেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভাষাণচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ পায় মেসার্স লিপু এন্টারপ্রাইজ। এসব কাজও শেষ হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ভাষাণচর ও সাইবেরিয়ায় প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করলেও এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অপরটির নির্মাণকাজ সম্পর্কে খোঁজখবরই নেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছর আগে ভবন নির্মাণকাজ পাস হলেও আজও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোঁজখবর নেয়নি। দুই কক্ষের একটি ভবনে গাদাগাদি করে সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।’

গত অক্টোবরে সাইবেরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি খুঁড়ে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর আর খোঁজ নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কাজ আর হয়নি। এভাবেই প্রায় এক বছর পার হয়ে গেছে।’

একইভাবে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে পূর্ব ভাষাণচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, মাঠে গাছ থাকার কারণে কাজ বন্ধ। গাছগুলো কেটে ফেলার পর ঠিকাদার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।

এভাবে দিনের পর দিন কাজ পড়ে থাকার জন্য এলজিইডির সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশীষ বাগচী ঠিকাদার ও ঠিকাদারের সিকিউরিটি দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দোষারোপ করছেন। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না। আমরা কাজটি বাতিলও করতে পারছি না। কারণ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জড়তা সৃষ্টি করে রেখেছে। বারবার নোটিশ করলেও সাড়া নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার মোশারফ হোসেন মুশা মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে ফুরসা বিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। এরপর আর অগ্রগতির বিষয়ে জানায়নি। যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোলার চারটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, দুই আসনে নতুন মুখ

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১) ও নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-৪)। ছবি: সংগৃহীত
গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১) ও নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-৪)। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোলার চারটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোলার চারটি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী ভোলা-১ (সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম নবী আলমগীর। ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. হাফিজ ইব্রাহীম। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বড় ভাই। বিগত ২০০১ সালের জোট সরকারের আগে তাঁকে দল থেকে প্রথম মনোনয়ন দেওয়া হয়। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)। তিনি ভোলা-৩ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মেজর হাফিজ বিএনপির একজন অভিজ্ঞ ও হেভিওয়েট নেতা। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন।

দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ভোলা-১ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর ভোলা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের ছোট ভাই। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন গোলাম নবী আলমগীর। স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাঁকে এবার প্রার্থী করেছে দলটি। এই আসনে গোলাম নবী আলমগীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে এই প্রথম মনোনয়ন পান।

এর আগে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট থেকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান। তাঁকে এবার এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে নতুন মুখ হিসেবে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল ইসলাম নয়ন। এই আসনে এর আগে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম। তিনি দলের একজন হেভিওয়েট নেতা। তিনি এবার দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর মঙ্গলবার সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই মোশারেফ হোসেন শাহজাহান এই আসনে এমপি ছিলেন। তিনি ভোলার জন্য অনেক কাজ করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। আমিও দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ভোলার উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই। এটা আমার প্রত্যাশা।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে অসহযোগিতা, মারামারি-হানাহানি এবং বৈরী ভাব দেখা গেছে, সেটা কমিয়ে এনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা যায় কি না সেই চেষ্টা করব।’

ভোলা-৪ আসনে নাজিমউদ্দিন আলম বাদ পড়ার বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নাজিমউদ্দিন আলম তিনবারের এমপি ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় কাজ করেছেন। কিন্তু নতুন নেতৃত্বকেও জায়গা করে দিতে হবে। হয়তো সে জন্যই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমনও হতে পারে তাঁকে অন্য জায়গায় স্থান করে দেবে।’

এ বিষয়ে মতামত জানতে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ও বিএনপি নেতা নাজিমউদ্দিন আলমকে মঙ্গলবার সকালে মোবাইলে কল দিলেও তাঁরা ধরেননি।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিজেপি ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম রতন। তিনি মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি।’

এদিকে ভোলার চারটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় জেলার রাজনীতিতে নতুন গতি এনেছে বলে মনে করছেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী প্রস্তুতি, গণসংযোগ ও প্রচারণায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাথরঘাটায় ব্যবসায়ীর চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, আহত ৩

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি 
আহত ব্যক্তিরা পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিরা পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার পাথরঘাটায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে চোখে মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে পাথরঘাটা বাজারের একই পরিবারের তিন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের আমড়াতলা এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে এই ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন পাথরঘাটা বাজারের চৌধুরী ফ্যাশন-১-এর স্বত্বাধিকারী শাহ আলম চৌধুরী (৫৫) এবং তাঁর দুই ছেলে চৌধুরী ফ্যাশন-২-এর স্বত্বাধিকারী রাজিব চৌধুরী (৩০) ও সজিব চৌধুরী (২৬)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।

আহত রাজিব চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে আমার বাবা ও ছোট ভাইকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলাম। আমড়াতলা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন লোক এসে আমাদের পথরোধ করে চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয়। এ সময় আমরা মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই। তখন আমাদের সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চাইলে তা না দিলে আমাদের বেধড়ক মারধর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনাস্থলটি তুলনামূলকভাবে নির্জন হওয়ায় দুর্বৃত্তরা সহজে হামলার সুযোগ পেয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদ বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করি। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টেকনাফে অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও মানব পাচার: র‍্যাবের অভিযানে নারী উদ্ধার, আটক ৩

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
আটক করা তিন আসামি। ছবি: সংগৃহীত
আটক করা তিন আসামি। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণ ও মানব পাচারের শিকার এক নারীকে কক্সবাজার শহর থেকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১৫। এই ঘটনায় জড়িত চক্রের তিন সদস্যকে টেকনাফ থেকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন রেজাউল করিম (২৮), এবাদুল হক (২৯) ও আব্দুল গফুর (৩৬)।

র‍্যাব-১৫-এর সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ ম ফারুক মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগী নারী তাঁর প্রেমিক ইয়াছিন আরাফাতের বিয়ের প্রলোভনে পড়ে গত ২৯ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে বের হন। পথে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়া জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে একদল অপহরণকারী টমটম থামিয়ে চালক ও যাত্রীকে মারধর করে এবং নারীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর তাঁকে প্রথমে টেকনাফ পৌরসভার কুলাল পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে ৩০ অক্টোবর রাতে সেখানে তাঁকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। পরদিন অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী নারীকে টমটমচালক আব্দুল গফুরের কাছে বিক্রি করে দেয়। গফুর ওই নারীকে সাবরাং আদর্শ গ্রামে নিজের বাড়িতে আটকে রাখে এবং ১ নভেম্বর রাতে হ্নীলা জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৬-এর ব্লক ডি/১-এর রোহিঙ্গা শবে কদরের কাছে পুনরায় বিক্রি করে দেয়।

এদিকে ভুক্তভোগীর পরিবার ৩০ অক্টোবর টেকনাফ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এবং র‍্যাবের সহায়তা চায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২ নভেম্বর রাতে র‍্যাব-১৫-এর একটি দল কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ে অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে। তবে রোহিঙ্গা শবে কদর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও ভুক্তভোগী নারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব ৩ নভেম্বর রাতে টেকনাফ পৌরসভার ঈদগাও মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন রেজাউল করিম, এবাদুল হক ও আব্দুল গফুর।

র‍্যাব জানায়, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর: ৭ বছরেও জোড়া লাগেনি সেতু

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর ১২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলনের দুটি সেতুর নির্মাণকাজ সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দুই সেতুর বিল বাবদ ৮০ ভাগের বেশি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। আড়াই বছর মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাদুকাটা নদীর ওপর আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু এবং পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু নির্মাণকাজ ফেলে রাখায় তমা কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা মাস ছয়েকের মধ্যে সেতু দুটির কাজ শেষ করবে।

এমন অবস্থায় বহুল কাঙ্ক্ষিত সেতু দুটির কাজ কবে শেষ হবে এবং চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুর। এ ছাড়া উপজেলাটির ডাম্পেরবাজার এলাকার তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করা হয়। এসব কারণে জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। জেলার দীর্ঘতম ৭৫০ মিটারের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর মধ্যে ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

একই মাসে পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪৫০ মিটার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। সেতু দুটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ৩০ মাস। সেই হিসাবে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করেই ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা তুলে নিয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। মৈত্রী সেতুর ৭৮ ভাগ কাজের বিপরীতে বিল তুলে নিয়েছে ৭০ ভাগ। ডাম্পেরবাজার সেতুর ৮৫ ভাগ কাজে বিল দেওয়া হয়েছে ৮০ ভাগ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মৈত্রী সেতুটি মাঝখানের অংশের কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর সংযোগ সড়কের কাজও বন্ধ রয়েছে। সেখানে চারাগাঁও-বড়ছড়া শ্রমিক সর্দার কল্যাণ সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বজলুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, মূল সেতুর কাজ হলেও সংযোগ না হওয়ায় সেতুটি কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা মেঘালয় খাসিয়া পাহাড়ের নিকটবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), শিমুলবাগান, বড়গোপ টিলা, বারেকটিলা, লাকমাছড়া, সীমান্ত হাট, জাদুকাটা, অদ্বৈত জন্মধাম, শাহ আরেফিন (রহ.) মাজারকেন্দ্রিক পর্যটন, কৃষিপণ্য বিপণন এবং বাগলি, বড়ছড়া, চারাগাঁও—তিন শুল্ক স্টেশনের যাতায়াত সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর সীমান্ত

এলাকা হয়ে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।

তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিয়া মো. নাছির মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ডাম্পেরবাজার সেতুর সামান্য কাজ বাকি আছে। মৈত্রী সেতুর কাজ আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে শেষ করা হবে। বিগত বন্যায় মৈত্রী সেতুর একাধিক পিলার ভেঙে অনেক নির্মাণসামগ্রী তলিয়ে গেছে। আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’

এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৈত্রী সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সম্প্রতি ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ডাম্পেরবাজার সেতুর কাজও শেষ হচ্ছে না। এ জন্য আমরা অসমাপ্ত কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে প্রকল্প অফিসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক প্রাক্কলনটি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফের তা সংশোধন করে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত