Ajker Patrika

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর: বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা, কান্না থামেনি স্বজনদের

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৫৫
ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর: বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা, কান্না থামেনি স্বজনদের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার (২৬ আগস্ট)। সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে করা সরকারের ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন আজও হয়নি। সে কারণে সেদিন গুলিতে নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের স্বজনদের কান্নাও থামেনি। সরেজমিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা উত্তোলন না করার দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ডাকা হয়। সেদিন ওই কর্মসূচিতে আসা জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা (বর্তমান বিজিবি) নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল।

সেদিন গুলিতে তিনজন মারা যান। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরিকুল ইসলাম (২০), স্কুলছাত্র আমিন (১৫) ও সালেকিন (১৭)। সেই সঙ্গে আহত হন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়। তিনি এখন পঙ্গুত্বের অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সাহাবাজপুরের প্রদীপ সরকার দীর্ঘদিন যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকার পর কিছুদিন আগে মারা যান।

ফুলবাড়ী পৌর এলাকার বারকোনা গ্রামের বাসিন্দা নিহত আমিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা রেহেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেই সময় তাঁর ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। বেলা ৩টার দিকে ফুলবাড়ী শহরে গিয়ে সে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে।

অশ্রুসজল রেহেনা বেগম বলেন, ‘এভাবে যেন আর কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়। বাপ-দাদার ভিটেমাটিসহ ফুলবাড়ী রক্ষায় এলাকাবাসীর সুখের জন্য আমার ছেলে প্রাণ দিয়েছে। এমন কয়লাখনি আর চাই না। তবে দুঃখ একটাই, এখন আর কেউ খবর নেয় না। আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আমিন ছিল বড়। বর্তমানে এক ছেলে বিএ পরীক্ষা দিয়েছে। তার একটা কর্মসংস্থানের জন্য কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না।’

গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণকারী বাবলু রায়। ছবি: আজকের পত্রিকাপৌর শহরের চাঁদাপাড়া গ্রামের নিহত তরিকুলের বাবা সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তাঁর ছেলে আবু সালেহ মো. তরিকুল ইসলাম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার সন্তান মারা গেছে, এর কষ্ট একমাত্র আমিই বুঝি। তার কী অপরাধ ছিল? সেদিন আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষার জন্য আন্দোলন হতেই পারে। তাই বলে এভাবে গুলি করবে?’

নিহত সালেকিন বাড়ি ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের ঝোড়ারপাড় গ্রামে। তার মা শেফালী বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, কাঁদতে কাঁদতে ছেলের স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

নিহত সালেকিনের চাচা জোবেদ আলী বলেন, ‘সালেকিন সেই সময় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। সালেকিনের জেদের কারণে সেদিন তাকে নিয়ে বেলা ৩টার দিকে ফুলবাড়ী যাই। এ সময় ফুলবাড়ী রেলগেট এলাকায় দলে দলে লোক মিছিলে অংশ নিচ্ছিল। একপর্যায়ে আমাদের এক ভাতিজি জামাইয়ের সঙ্গে সালেকিন চলে যায় মিছিলে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আমার কাছ থেকে। এরপর সন্ধ্যায় খবর পাই, গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা গেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর খবর পাই, মৃত তিনজনের মধ্যে আমাদের সালেকিনও আছে।’

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি বাস্তবায়ন না করতে এশিয়া এনার্জি নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফুলবাড়ীর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। সেখানে সেদিন এই এলাকার হাজারো আপামর জনগণ যোগ দেয়।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সমাবেশে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের মিছিলে অতর্কিতে গুলি ছোড়ে। তাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তরিকুল ইসলাম (২০), আমিন (১৫) ও সালেকিন (১৭)। গুলিতে প্রদীপ চন্দ্র, শ্রীমান বাস্কে, বাবলু রায় পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই ঘটনায় আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল আরও বলেন, ওই সময় ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল ছিল ফুলবাড়ী খনি এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে বাস-ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলসহ দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। গণ-আন্দোলনের মুখে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের ছয় দফা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

আমিন, সালেকিন, তরিকুল (আসাত) স্মরণে গড়ে তোলা স্তম্ভ। ছবি: আজকের পত্রিকাএই নেতা বলেন, বাস্তবিক অর্থে গণ-আন্দোলনের ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আংশিক বাস্তবায়নের পর থেমে গেছে ছয় দফা চুক্তি। এই চুক্তির মধ্যে রয়েছে, এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিষ্কার, ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলিতে হতাহতের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা।

জুয়েল আরও বলেন, ছয় দফা চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে এখনো ফুলবাড়ী খনি অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘ফুলবাড়ী দিবস’ এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ ঘোষণা করে পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, গণজমায়েত, আমিন-সালেকিন-তরিকুলের (আসাত) স্মরণে নির্মিত স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদ সভা এবং মসজিদ-মন্দিরে প্রার্থনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক যুগ পর ঘরে ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া ভাই, পরিবারে খুশির বন্যা

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
পরিবারের সঙ্গে আমিরুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পরিবারের সঙ্গে আমিরুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বাবাকে দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন আমিরুল ইসলাম। কিন্তু পথ ভুলে কোথায় যেন তিনি চলে গেলেন। ফিরলেন না আর বাড়িতে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা এটি। তারপর কেটে গেছে এক যুগ। এত দিন ধরে আমিরুলকে খোঁজাখুঁজির চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তাঁর বড় ভাই আনসারুল ইসলাম। অবশেষে আনসারুলের সব কষ্টের ফল মিলেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে হারিয়ে যাওয়া ভাই আমিরুলকে ফিরে পেয়েছেন তিনি। আজ বুধবার আমিরুলকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মাহৎপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি। এই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পেষু মোহাম্মদের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৫২)। বহু আগে একবার মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে অনেক কিছু তিনি ভুলে যেতেন। ১২ বছর আগে রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবাকে দেখতে গিয়ে হারিয়ে যান তিনি। ২ নভেম্বর ফেসবুকে ভিডিও দেখে তাঁর বড় ভাই আনসারুল ইসলাম জানতে পারেন, মেহেরপুরের সদর উপজেলার মনিরামপুর এলাকায় আমিরুল রয়েছেন। এরপর সেখানে গিয়ে ভাইকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন তিনি।

আনসারুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরে গাড়ি মেরামতের কাজ করতেন আমিরুল। ওস্তাদ মাথায় রেঞ্জ দিয়ে তাঁর মাথায় একবার আঘাত করেছিলেন। এর পর থেকে মাঝেমধ্যে অনেক কিছু ভুলে যেতেন আমিরুল। পরে বাড়ি ফিরে কৃষিকাজ শুরু করেন। বিয়ে করলেও ছয় মাসের মাথায় স্ত্রী তাঁকে ত্যাগ করেন।

এত বছর পর হারানো ভাইকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে আনসারুল বলেন, ‘যখন মেহেরপুরে ১২ বছর পর আমার সামনে আমিরুলকে আনা হলো, বলা হলো কে এই লোক, চিনো? এক থেকে দেড় মিনিট পর ‘ভাই’ বলে চিৎকার দিয়ে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এত দিন পর ভাইকে দেখা, তার মুখে ভাই ডাক শোনার যে কী আনন্দ, এটা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’

স্বজনরা জানান, হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে অনেক খুঁজেছেন বাবা পেষু মোহাম্মদ। কিন্তু ছেলের ঘরে ফিরে আসা দেখে যেতে পারলেন না তিনি। গত ৪ জানুয়ারি বাবা পেষু মোহাম্মদ মারা গেছেন।

এদিকে এক যুগ পর বাড়ি ফিরে আসা আমিরুলকে একনজর দেখতে ছুটে আসছেন কৌতূহলী মানুষেরা। ছোট ভাইকে ফিরিয়ে আনতে বড় ভাইয়ের চেষ্টার প্রশংসা করছেন অনেকেই। প্রতিবেশীরা বলছেন, ছোটবেলা থেকে আমিরুলসহ সব ভাইবোনকে আদর স্নেহে বড় করেছেন বড় ভাই আনসারুল।

ভাইকে হারানোর পর তিনি সব সময় আফসোস করতেন, মন খারাপ করে থাকতেন। এত বছর পর ভাইকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন আনসারুল।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হোদা জানান, ‘নিখোঁজ আমিরুল ফেরার খবর থানায় অবগত করেননি তাঁর ভাই। তাঁরা অবগত না করলে আমরা খোঁজখবর নেব। তবে এটা ভালো খবর যে পরিবারটি দীর্ঘদিন পর তার স্বজনকে খুঁজে পেয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনা চোরাচালান: অপহৃত পাঁচজন ২৩ দিন পর উদ্ধার, একজনের ৪ আঙুল কাটা

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সোনা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরণের ২৩ দিন পর পাঁচ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আজ বুধবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একটি নির্জন খামারবাড়ি থেকে তাঁদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা-পুলিশ। পাঁচজনের শরীরেই নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এমনকি একজনের হাতের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে অপহরণ চক্রে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল ও পুলিশ সুপারের বিশেষ টিমের সমন্বয়ে এই অভিযান চালানো হয়। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আজ সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ জানায়, আজ সকাল ৭টায় ঝিকরগাছার হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের রেজাউল ইসলামের খামারবাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এই খামারবাড়ির গুদামেই অপহৃত ব্যক্তিদের আটক রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় ভিকটিমদের পাহারারত অবস্থায় থাকা মো. বিল্লাল হোসেন (৪০) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. সাগরিকা খাতুনকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অপহৃত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া পল্লিচিকিৎসক বিকাশ দেবনাথকেও (৩০) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে খামারবাড়ির মালিক রেজাউল ইসলাম ও আব্দুল গফ্ফার অভিযানের আগেই পালিয়ে যান। 

পুলিশ জানায়, মূলত সোনা চোরাচালান ও ৫০ পিস সোনার বার খোয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই অপহরণের ঘটনা। অপহৃত ব্যক্তিদের অমানসিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সবচেয়ে নির্মম বিষয়টি হলো, সোনা পাচারকারী ও অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মো. শফিকুল ইসলামের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে। সোনার বার উদ্ধারের জন্যই মালিকপক্ষের নির্দেশে এই নির্যাতন চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, গত ১২ ও ১৩ অক্টোবর গোয়ালপাড়া (মাঠপাড়া) গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফি (৩৫), আনারুল ইসলাম (৫০), হাসান মিয়া (২৬), আবুল হোসেন (২৭) ও স্বপন ইসলাম (৪৪)—এই পাঁচজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম হাসান মিয়ার বাবা শওকত আলী বাদী হয়ে আবদুল মজিদ, মিজানুর রহমান রুবেল, লালন মণ্ডল, আবদুস সামাদ, বিপ্লব হোসেন ও শাহীনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় অপহরণ মামলা করেন।

মামলায় আসামি করা হয় স্থানীয় আবদুল হাকিম ফকিরের তিন ছেলে আবদুল মজিদ (৪০), আবদুস সামাদ (৪৫) ও বিপ্লব হোসেন (৫০); মনসুর আলীর ছেলে লালন মণ্ডল (৪২); বাবলুর ছেলে শাহিন (৩২) এবং মো. বারির ছেলে রুবেলকে (৩০)। 

বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না। এই মামলার মূল আসামিরা এখনো পলাতক। উদ্ধার করা ভিকটিমদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এই অপহরণ ও নৃশংস নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইটনায় সরকারি চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত

কিশোরগঞ্জের ইটনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ইটনা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার জানু মিয়ার ছেলে।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ট্রলারে করে তাড়াইল উপজেলায় নেওয়ার সময় ৭২ বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

পরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল আকরাম বাদী হয়ে ইটনা থানায় ডিলার জানু মিয়া ও তাঁর ছেলেসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ইটনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর থেকে দেলোয়ার হোসেন পলাতক ছিলেন। আজ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই মামলায় ৮ আসামির মধ্যে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এ সময় প্রাথমিক শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে রাজধানীর পল্টন ঘুরে এসে শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘একদিকে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিলের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকে শিক্ষক কমানোর জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা সাম্প্রদায়িকতার কারণে উপদেষ্টারা বাতিল করেছে। এ ধরনের বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আলাদা করে ওই বিষয়ের ওপর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। এমনকি চারুকলার জন্যও শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সভাপতি সালমান রাহাত বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা, সেখানে বৈষম্য সৃষ্টি করে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক বছর পার হওয়ার পরও নতুন অবস্থায় এসে বৈষম্য থাকবে, এটা দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ও চারুকলার ওপরে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের যে কর্মসংস্থান করার কথা ছিল, সেটি আপনারা (সরকার) বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রাথমিকে এই সাবজেক্টগুলো যদি না থাকে, তাহলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সাবজেক্টের শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে আপনারা নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করি।’

সালমান রাহাত একটি দলের উদ্দেশে বলেন, ‘কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট চায়, অথচ সেখানে কি ভোট আছে? অনেকে আবার জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে এই বলে যে—ভোট না দিলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে প্রচার করে আপনারা শিক্ষাব্যবস্থাকে পায়ের তলায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এসব না করে শিশুদের বিকাশে এসব বিষয়ের ওপর শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এসব সাবজেক্ট খুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’ বড় বড় অবকাঠামো বা দালান না করে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি বিমল মজুমদার বলেন, ‘দেশে যেকোনো সংকট দেখা দিলেই উদীচীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিদাওয়া দেখতে পাচ্ছি। আজ তাঁরা রাস্তায় থাকলে শিশুদের পড়াবে কে? বিতর্কিত সিদ্ধান্ত একের পর এক নিচ্ছে এই সরকার। শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতের মও শিক্ষক নিয়োগের এই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থাকলেও তাঁরা কার্যকর করছেন না। শরীরচর্চা করলে শিশুদের বিকাশ ঘটে, চিত্রাঙ্কন করে, গান শুনে শিশুদের মানসিকতা উন্নতি হয় ও উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকার, তাতে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বিমল মজুমদার জানান, এই সরকারের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ফরিদপুরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এনজিও চালানো আর দেশ চালানো এক জিনিস নয়। আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান, তাতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের অধিকার ফিরে পাক।’

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক প্রিজম ফকিরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরের ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ খান আদর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত