Ajker Patrika

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে থানায় পুলিশ, এখনই মিলবে না সব সেবা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০: ৪৩
ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে থানায় পুলিশ, এখনই মিলবে না সব সেবা

পলাশ সরকার। পেশায় শিক্ষক। পুলিশের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে মোহাম্মদপুর থানায় আসেন। তবে ডিউটি অফিসার তাঁর অভিযোগটি রাখেননি। তাঁকে আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দেন। ডিউটি অফিসার ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমরা কেবল জরুরি অভিযোগগুলো রাখছি। যেমন, হত্যা, চুরি ও ডাকাতি। এ ছাড়া কোনো সেবা এখন দেওয়া সম্ভব না।’ ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে আইনি সহায়তা না পেয়ে হতাশ হয়ে বের হয়ে যান পলাশ সরকার। 

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওই দিন বিকেলেই দেশের থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গণবিক্ষোভের মুখে থানা রেখে নিরাপদে চলে যায় পুলিশ। আগুন ও ভাঙচুরে দেশের ৪৫০ থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি অপরাধ বিভাগের ৫০ থানার মধ্যে অক্ষত ছিল মাত্র সাতটি থানা। বাকিগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আগুনে পুড়ে যায় তদন্তাধীন মামলার ও অন্যান্য নথি এবং অবকাঠামো। লুট হয় জরুরি সরঞ্জাম। মোহাম্মদপুর থানা এর মধ্যে অন্যতম। 

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান ফটকের সামনে ছয়জন সেনা সদস্যের পাহারা। তাঁদের অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে থানা কম্পাউন্ডে পুড়ে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া পুলিশের চারটি ভ্যান, নয়টি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। থানার ভবনে ঢুকতেই কালো ছাই আর পোড়া কাগজ, স্যাঁতসেঁতে মেঝে। নিচতলায় ওসির কক্ষে একজন ডিউটি অফিসার টেবিল পেতে সিভিল পোশাকে বসে আছেন। চারজন যুবক তাঁর টেবিল ঘিরে দাঁড়ানো। কক্ষের ভেতরে টেবিল চেয়ার, হাজিরা খাতা, রেজিস্ট্রার খাতা সবই নতুন। যুবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তিনি। এই যুবকদের একটি মোটরসাইকেল সংক্রান্ত সমস্যার কথা শুনছিলেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা শেষ করে, এক নারীর হারিয়ে যাওয়া মোবাইলের বিষয়ে জিডির পরামর্শ দেন ডিউটি অফিসার। এই ফাঁকে জানা যায়, ডিউটি অফিসারের নাম উপপরিদর্শক (এসআই) মধুসূদন মজুমদার। 

ভাঙচুর অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত থানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কেবল আজ জরুরি বিষয়ের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিচ্ছি। আজকে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৩টি জিডি হয়েছে।’ 

মোহাম্মদপুর থানায় অগ্নিসংযোগ করায়, এই থানার কোনো কিছু অবশিষ্ট ছিল না। ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে বের হয়ে পাশের কক্ষে দেখা যায়, এক দল শিক্ষার্থী দেয়ালে চুনকাম করছেন। তাঁরাই তিন দিন ধরে থানাটি সাফছুতরোর কাজ করে দিচ্ছেন। এখন আরেকটি কক্ষ ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। এভাবে তাঁরা পুরো থানা পরিষ্কার করে দেবেন বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম নাঈম। তিনি বলেন, ‘আমরা থানাটাকে ব্যবহার উপযোগী করে দিতে কাজ করছি। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে।’ 

তেজগাঁও বিভাগের আদাবর থানাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, তাঁর বিভাগের ছয়টি থানাই চালু করা হয়েছে। 

এদিকে রমনা বিভাগের সবগুলো থানায় কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এই বিভাগের নিউমার্কেট, রমনা ও শাহবাগে হামলা হয়েছিল। তবে থানা ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। কলাবাগান থানায় গিয়ে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর পাহারায় দোতলায় ডিউটি অফিসার বসে সেবাপ্রার্থীদের সেবা দিচ্ছেন। সীমা নামে এক তরুণী মেইলে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে জিডি করতে এসেছেন। তাঁকে পরামর্শ দেন ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুল্লাহ আল সাদিক। 

এসআই বলেন, ‘আমাদের সব সেবা চালু আছে। থানার সবাই উপস্থিতও আছে। বর্তমানে কেবল জিডি নেওয়া হচ্ছে। তবে টহল কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময় লাগবে। গাড়ি ও ওয়ারলেস সেট চালু হলে টহল চালু হবে।’ 

অপরদিকে, ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী থানা সম্পূর্ণ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও সেখানে অবশিষ্ট কিছু নেই। সোমবার কয়েকজন পুলিশ সিভিলে সেখানে যান। তবে কার্যক্রম শুরু হয়নি। সেবা বন্ধ। দুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা সেবাপ্রার্থীদের বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ রাখলেও তা আনুষ্ঠানিক কিছু না। সাদা পোশাকে শ্যামপুর, ওয়ারী, ডেমরা ও কদমতলী থানার পুলিশ থানায় আসে। 

কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি গুলশান বিভাগের ভাটারা থানা। এই থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এই থানার কর্মকর্তাদের গুলশান থানায় ও উপকমিশনারের কার্যালয়ে হাজিরার জন্য বলা হয়েছে। বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজান সাহা বলেন, ভাটারায় কাজ শুরু করার জন্য থানা প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

আপাতত জরুরি জিডি ছাড়া কোনো অভিযোগ নিচ্ছে না পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকাএই বিভাগের বাড্ডা থানায় লুটপাট করেছিল দুর্বৃত্তরা। সোমবার সরেজমিনে থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার প্রধান ফটক ভাঙা। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বাইরে থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে একটি নতুন কম্পিউটার, টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেছেন এসআই শাকিল আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জিডি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্ভার না থাকায় ইনপুট দেওয়া যাচ্ছে না।’ শাহীনা নামে এক নারী তাঁর ভাই নিখোঁজের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে, ডিউটি অফিসার সেটি রেখে তাঁকে পরে হালনাগাদ জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন। 

ডিএমপি জানিয়েছে, থানাগুলোতে ইন্টারনেট সেবা, ওয়্যারলেস, গাড়ির ব্যবস্থা করা, অস্ত্রের ব্যবস্থাপনার পর টহল কার্যক্রম, পরোয়ানা তামিল, মামলার তদন্ত শুরু হবে। এতে আরও দু–একদিন সময় লাগবে। 

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে দেশের ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে আহত যুবকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ে বাসার কাছে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে আহত ইমন দাশ (২৪) নামের এক যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ইমন দাশ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ধলঘাট ইউনিয়নের দাশপাড়া এলাকার সাগর দাশের ছেলে। তিনি পরিবারের সঙ্গে নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভীবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

সাগর দাশের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রবীর নামের একজন নিজেকে ইমনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমন মারা যান। তাঁর বাবা সাগর দাশ এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নগরের চান্দগাঁওয়ের মৌলভীবাজার এলাকায় নিজ বাসার কাছে ইমনকে এলোপাতাড়ি মারধর ও ছুরিকাঘাত করে একদল যুবক। পরে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় ৩ ডিসেম্বর পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং ২-৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে চান্দগাঁও থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইমনের বাবা সাগর দাশ। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন নগরের একই থানা এলাকার বাসিন্দা ও ইমনের পরিচিত নয়ন মহাজন (২৯), কিরণ (৩০), আবু হানিফ (২৮), মহিউদ্দিন শরীফ (২৩) ও মো. নেজামকে (৩৫)।

নগরের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত সাগর দাশ ওই মামলার অভিযোগে বলেছেন, তাঁর বড় ছেলে ইমনের পূর্বপরিচিত আসামি নয়ন মহাজন। তাঁদের দুজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল। ৩০ নভেম্বর ভোরে পূজার ফুল নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ইমন। এ সময় মৌলভীবাজারের ওয়াসা রোডে মরিয়ম ক্লাবের পাশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করে।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে কিরিচ, চাপাতি দিয়ে ইমনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে খবর পেয়ে সাগর দাশসহ তাঁর পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হুমকি দিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ইমনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবিরকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি কোনো সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জামায়াত প্রার্থীর সভায় গান গাওয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরায় জামায়াত প্রার্থীর সভায় পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত
সাতক্ষীরায় জামায়াত প্রার্থীর সভায় পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরায় দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থীর সভায় গান (জামায়াতের গুণগান-সংবলিত) পরিবেশনের অভিযোগে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মো. মহিবুল্লাহকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় যশোরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বরখাস্তের এই আদেশ দেন বলে জানা গেছে।

বরখাস্ত হওয়া মো. মহিবুল্লাহ নড়াইল জেলার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি যশোর পুলিশ লাইনসে কর্মরত। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে ছিলেন।

যশোর পুলিশের বরাতে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুকিত হাসান খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি (মহিবুল্লাহ) গত ২৬ নভেম্বর ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে নিজ জেলা নড়াইলে রওনা হন এবং ছুটি শেষে ১২ ডিসেম্বর কর্মস্থলে হাজির হন।

ছুটিকালীন তিনি নড়াইল থেকে সাতক্ষীরায় এসে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সংগীত পরিবেশন ও বক্তব্য দেন; যা পুলিশের পেশাদারত্ব ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বিষয়টি রেঞ্জ ডিআইজিকে অবহিত করে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে আজ রোববার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থীর সভায় গান পরিবেশনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তিন মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাতক্ষীরা–২ (সদর-দেবহাটা) আসনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেকের একটি নির্বাচনী পথসভায় পুলিশের পোশাক পরিহিত মো. মহিবুল্লাহ গান পরিবেশন করেন। মাঝে মাঝে নারায়ে তাকবির স্লোগান দিয়ে দর্শকদের উজ্জীবিত করেন।

সূত্রে জানা গেছে, পথসভাটি ৭ ডিসেম্বরের। সাতক্ষীরা শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাটিয়া আমতলা মোড়ে ওই পথসভা হয়। সভায় ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মো. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। সভার মাঝপথে মো. মহিবুল্লাহ এই গান পরিবেশন করেন।

আরও জানা গেছে, পুলিশের ওই এএসআই সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে কর্মরত থাকাকালে আগরদাড়ির একটি মাহফিলে ইসলামি গান পরিবেশন করেছিলেন। তাঁর সংগীতে মুগ্ধ হয়ে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক তাঁকে পুরস্কৃত করেন। বাগেরহাটে বদলি হয়ে গেলেও তিনি খোঁজ নিয়ে ওই পথসভায় আসেন।

জানতে চাইলে এএসআই মো. মহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক আমাকে পুরস্কৃত করেছিলেন, সে কারণে আমি ইসলামি একটি সংগীত পরিবেশন করেছি’ বলেই লাইনটি কেটে দেন। পরে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের সেক্রেটারি খোরশেদ আলম বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি স্টেজে উঠে সংগীত পরিবেশন করতে চান। আমরা নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন।’

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুকিত হাসান খাঁন জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বর্তমানে সাতক্ষীরায় কর্মরত নন। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের পোশাক পরে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুরের এক কলেজের ৪৫ শিক্ষার্থী

নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এ বছর ৪৫ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর (রাত সাড়ে ৯টা) এ তথ্য জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সব শিক্ষার্থীর তথ্য পেলে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশা কর্তৃপক্ষের। সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে সুযোগ পাওয়া ৪৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ১৩ জন ও মেয়ে ৩২ জন।

১২ ডিসেম্বর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রোববার পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ আজাদ আবুল কালাম জানান, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করে এ পর্যন্ত ৪৫ জনের নাম পেয়েছেন। এই নামের তালিকা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন।

তিনি বলেন, গত বছরও ৫৩ জন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ, পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং কঠোর তদারকির ফলে প্রতিবছর আশানুরূপ ফল করছেন শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিবছর মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ধারাবাহিক সফলতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে।

উল্লেখ, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের আগের নাম ছিল সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় (টেকনিক্যাল কলেজ)। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নাম রাখে। কলেজটিতে শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের নাম রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: মিশন যাত্রার ১ মাস ৮ দিনের মাথায় প্রাণ গেল শান্তিরক্ষী মাসুদের, পরিবারে মাতম

নাটোর ও লালপুর প্রতিনিধি 
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন যাত্রার মাত্র এক মাস আট দিনের মাথায় সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন করপোরাল মাসুদ রানা। তাঁর মৃত্যুর খবরে নাটোরের লালপুরের বাড়িতে এখন কান্নার রোল উঠেছে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে মাসুদ রানাও রয়েছেন।

মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

মাসুদের শোকে তাঁর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই দম্পতির আট বছরের মেয়ে আছে। আঁখি বলেন, ‘আমার মেয়েকে এতিম করে সে চলে গেল। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও (শনিবার) আমাদের সঙ্গে সে কথা বলেছিল। আজ সে নেই, ভাবতে পারছি না।’

ছেলের মৃত্যুর খবরে মা মর্জিনা খাতুন (৫৫) বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তান সেনাবাহিনীতে। এক সন্তান দেশের জন্য প্রাণ দিল। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সরকার যেন আমার সন্তানের বিধবা স্ত্রী ও এতিম মেয়ের কথা ভাবে। আমাদের আর কেউ নাই।’

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়ে তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, নিহত মাসুদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে আজ রোববার বিকেলে নাটোর আর্মি স্টেডিয়ামের সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর নিহত শান্তিরক্ষী মাসুদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত