Ajker Patrika

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: ১০ মাসে ঢাকায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার, অর্থদাতাদের খুঁজছে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর সাত জায়গায় আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে
রাজধানীর সাত জায়গায় আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় চলতি বছরের গত ১০ মাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব মিছিলের অর্থদাতাসহ পেছনের হোতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে ডিএমপি।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।

আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর, বনানী, তেজগাঁও, উত্তরা, খিলক্ষেত ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র ও মিডিয়া শাখার উপকমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান জানান, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন এবং ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করছেন। মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণও করছেন। পরে সেগুলো ফেসবুকে দিয়ে জানান দিচ্ছেন।

ডিসি তালেবুর বলেন, জেলা জেলা থেকে আসার সময় এই নেতা-কর্মীরা যাতায়াত ও খরচের জন্য টাকাও নিচ্ছেন। এই অর্থদাতাসহ এর পেছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

তালেবুর রহমান জানান, ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট ও থানার যৌথ অভিযানে শেরেবাংলা নগর থানা ১৮, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ১৩, খিলক্ষেত থানা ৪, উত্তরা থানা ২, বাড্ডা থানা ৩, বনানী থানা ৩ এবং তেজগাঁও থানা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানান তিনি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

খিলক্ষেত থানা সূত্রে জানা যায়, সকালে ৩০০ ফিট পুরোনো মস্তুল চেকপোস্টের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশ উপস্থিত হলে নেতা-কর্মীরা পালানোর চেষ্টা করেন। সেখান থেকে হাতেনাতে আনিসুজ্জামান রনি, মুন্না মিয়া, জাকির হোসেন ও কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উত্তরা পশ্চিম থানা জানায়, সকালে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের আকাশ টাওয়ারের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিকালে ব্যানারসহ মোমিনুল হাসান ও রকিবুল হাসানকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেপ্তার কয়েকজন। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে
আজ শুক্রবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেপ্তার কয়েকজন। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

বাড্ডা থানা জানায়, সকাল ৭টার দিকে প্রগতি সরণি মেইন রোডে ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে ইয়াসিন আরাফাত শুভ, তাসরীপ হোসেন ও মো. খালেদ বিন কাওসারকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সূত্রে জানা যায়, বিজয়নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে রফিকুল ইসলাম বাঁধন, সুমন হোসেন, মেজবাউল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম সাইফ, মোস্তাফিজুর রহমান জনি, শেখ রাশেদুজ্জামান, মামুন শেখ পরশ, মামুন সেখ, রাজু, শফিউল আলম, কুদ্দুস সরদার ও মিঠুন দেবনাথসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শেরেবাংলা নগর থানা জানায়, ভোরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রায় ৯০-১০০ জন নেতা-কর্মী মিছিল করার সময় পুলিশ অভিযানে নামে। এ সময় বজলুর রহমান বাঁধন, নুর আলম সিদ্দিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ দোলনসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বনানী থানার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনানী ঢাকা গেট এলাকার সামনে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া জিয়াদ মাহমুদ, মো. জিয়াদ ও মো. আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তেজগাঁও থানা জানায়, বিজয় সরণি এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের সময় মো. রিফাত ইসলাম, মো. মিল্লাত বাবু ও মো. স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতভর বৃষ্টিতে তলিয়েছে আমন ধান-সবজির খেত, দুশ্চিন্তায় কৃষক

মান্দা ও নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রবল বৃষ্টিতে নিয়ামতপুরে মাঠের আমন ধান নুয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রবল বৃষ্টিতে নিয়ামতপুরে মাঠের আমন ধান নুয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলায় রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতে ধান ও সবজির খেত ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এতে কৃষক ও মাছচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

নিয়ামতপুরে গতকাল শুক্রবার রাতভর ভারী বৃষ্টিতে মাঠের প্রায় ২৫ শতাংশ ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে এবং প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান ডুবে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটার কথা ছিল। হঠাৎ ভারী বৃষ্টির কারণে ফসলের খেত তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমির ধান পানিতে ভাসছে। টানা বৃষ্টিতে নিয়ামতপুর উপজেলায় পুকুর-খাল-বিলের পানি উপচেও অনেক খেত ডুবে গেছে।

উপজেলার ভাবিচা গ্রামের ধনঞ্জয় মহন্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১২ বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এমন দুঃসময়েও কৃষি অফিস খোঁজখবর নিতে আসেনি।’

একই এলাকার আপেল, সবুজ, মামুনসহ অনেক কৃষক বলেন, ঋণ ও নিজের জমানো টাকা খরচ করে আমনের আবাদ করা হয়েছে। আমনের ফসল পানিতে টলটল করছে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে পথে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ‘গত রাতের ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলা বিভিন্ন মাঠের ধান পড়ে গেছে এবং নিচু এলাকার ধান ডুবে গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ জরিপ করছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য।’

পানিতে ডুবে আছে ফুলকপির খেত। মান্দার হাজী গোবিন্দপুর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে ডুবে আছে ফুলকপির খেত। মান্দার হাজী গোবিন্দপুর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মান্দায় আমনসহ সবজিখেতের ব্যাপক ক্ষতি:

মান্দা উপজেলায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতে ধানখেত তলিয়ে গেছে। সরিষা, ফুলকপি, আলু, পেঁয়াজের বীজতলা, গাজর ও অন্য সবজির জমিগুলো ডুবে গেছে। এতে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কৃষকেরা বলছেন, কার্তিক মাসের শুরুর দিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় তাঁরা জমিতে হালচাষ দিয়ে ফসল রোপণের প্রস্তুতি নেন। এরই মধ্যে জমিতে সরিষা, আলু, ফুলকপি, গাজর, মুলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে। পেঁয়াজের বীজতলাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন অনেকে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে নুয়ে পড়েছে আধা পাকা আমন ধান। এরই মধ্যে মাঠের নিচু এলাকার আমনখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আজ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমন ধানের খেতসহ সরিষা ও বিভিন্ন শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর, গাইহানা কৃষ্ণপুর, চককানু, নবগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে আলু, ফুলকপি, পেঁয়াজ, ক্ষীরাসহ নানা সবজির খেত পানিতে ডুবে রয়েছে। কিছু স্থানে পেঁয়াজের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।

এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক অমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘২৫-৩০ বছরেও কার্তিক মাসে এত বৃষ্টি দেখিনি। প্রবল বৃষ্টিতে আমার কয়েক বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।’ পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘ধান সবে পাকতে শুরু করেছিল। এখন গাছ নুয়ে পড়ে পানির নিচে গেছে। বোরোতে ক্ষতির পর এবারও লোকসান গুনতে হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে আমন ধান ও সবজিখেতের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিনদুপুরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

রায়পুরা (নরসিংদী)প্রতিনিধি
নিহতদের বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহতদের বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর রায়পুরায় পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চাচা ও চাচাতো ভাইবোনদের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের চরসুবুদ্ধি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন চরসুবুদ্ধি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ফুরা মিয়া (৪০) ও শাকিল মিয়া (৩০)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ।

পুলিশ ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের আবু তাহেরের সঙ্গে তার ভাই আউয়ালের পারিবারিকভাবে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে।। শনিবার সকালে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে আউয়াল, তাঁর ছেলে শিপন ও রিপন, মেয়ে শাহানা, আজিনা, আছমা, সুমাইয়াসহ ১০-১২ জন দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষ পরিবারের ফুরা মিয়াদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ফুরা মিয়া, তাঁর ভাই শাকিল ও পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফুরা মিয়া ও শাকিলসহ চারজনকে গুরুতর আহত করেন। স্থানীয়রা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফুরা মিয়া ও শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মনিরা বেগম নামের এক নারী নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরিদা গুলশান আরা জানান, বেলা পৌনে ১টার দিকে আহতদের হাসপাতালে আনা হলে ফুরা মিয়া ও শাকিল নামের দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের আটকে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় যুবলীগ নেতা

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত

৩ ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি।

শনিবার (১ নভেম্বর) জোহর নামাজের পর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনের একটি মাদ্রাসায় জানাজা হয়।

এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মতিউর রহমানের স্ত্রী রোকেয়া মারা যান।

স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মতি। এ সময় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি তাঁর স্ত্রীর দোষগুণ ভুলে ক্ষমার আবেদন করেন। অঝোরে কেঁদে মতি বলেন, ‘আমি ১০ মাস ধরে কারাগারে রয়েছি। এর ভেতর গতকাল আমার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সঙ্গে আমি ৩২ বছরের সংসার জীবন কাটিয়েছি। তিনি সব সময় আমাকে আগলে রেখেছেন।’  

যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য যে আমার বড় ভাই যখন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখনো আমি কারাগারে ছিলাম। আজকের মতো তখনো আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা সবাই সবকিছু করেছিলেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার স্ত্রী যদি চলার পথে আপনাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ; কিংবা ভুল করে থাকেন আমি তাঁর হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আমি তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পেড়েছি, এটাই আমার জন্য অনেক।’  

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪ পর্যন্ত মতিউর রহমান মতিকে কারা কর্তৃপক্ষ প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতি ও তাঁর ছেলে বাবুইকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। এরপর তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হলে মতির ছেলে বাবুই জামিনে মুক্তি পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৬
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন? আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না।’ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তারের সময় অবাক হয়ে এমন প্রশ্ন করেন ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলাম (৩৮)। তাঁর মতে, ‘ছোট একটা ভুলের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।

র‍্যাব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ডন শরিফ বলেন, ‘আমার ছোট একটা ভুল হয়েছে। আরওয়ানফাইভ মোটরসাইকেল থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না, আপনাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যেতাম।’

ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ শনিবার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে শরীফুলকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা দেন র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, অপরাধ জগতে ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামের এতটাই দক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে কখনো গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে, এটা তিনি ভাবতেও পারেননি। এ জন্য গ্রেপ্তারের সময় তিনি নিজেই অবাক হয়ে যান।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র‍্যাবের সদস্যরা। শরীফুল ফরিদপুর জেলা শহরের কবিরপুর এলাকার মৃত ফারুক শেখের ছেলে।

র‍্যাব জানিয়েছে, শরীফুলের সঙ্গে রায়হান মোল্যা (২৫) নামের তাঁর এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় দেড় কেজি গাঁজা ও ছিনতাইয় কাজে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল, সুইচ গিয়ার চাকু, ক্ষুর, কাঁচি ও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত আরওয়ানফাইভ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেলটি সম্প্রতি পাবনা থেকে ক্রয়ের নামে ট্রায়াল দেওয়ার সময় নিয়ে পালিয়ে আসেন শরীফুল।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ২১ অক্টোবর শহরের উত্তর শোভারামপুরে এক গৃহবধূকে পিস্তল ঠেকিয়ে কানের দুল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনার একটি সিসি ক্যামেরার দৃশ্য ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হলে ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব। তাতে শরীফুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার যায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে তিনি বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন।

ডন শরীফুলের উত্থান যেভাবে:

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছোটবেলা থেকেই শরীফুল অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুলিশের খাতায় নাম আসে তাঁর। এরপর থেকে তিনি অপরাধ জগতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন। মাদক কারবার, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে বারবার নাম আসে তাঁর। এসব ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় আটটি মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে তাঁর নামে। তিনি এ পর্যন্ত চারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

র‍্যাবসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহরের ঝিলটুলী এলাকায় ভোরে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স অরুণিমা ভৌমিক। ওই দিন ভোরে ডিউটি শেষে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন অরুণিমা। তখন শরীফুলসহ দুজন ছিনতাইকারী তাঁর হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এ সময় অরুণিমা রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজের দৃশ্যে শরীফুলের উপস্থিতি দেখা যায়। পরে তিনি আলোচনায় আসেন। ছিনতাই ও হত্যার ঘটনায় মামলা করা হলে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি শরীফুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, অরুণিমা হত্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে আসেন শরীফুল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি আরেকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তিনি আবার জামিনে বেরিয়ে দুই বছর ধরে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। শরীফুলের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত