Ajker Patrika

তুলনামূলক ছোট এগজস্টের কারণেই আগুন, দায়ী ১২ জন 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ১২
তুলনামূলক ছোট এগজস্টের কারণেই আগুন, দায়ী ১২ জন 

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৌযানের নতুন অথবা উচ্চ গতিসম্পন্ন কোন ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করলে ইঞ্জিনের অনুপাতে পাইপলাইন বা এগজস্ট পাইপ পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু অভিযান-১০ লঞ্চটিতে এগজস্ট পাইপ বড় করা হয়নি। ফলে ইঞ্জিন কক্ষের আশপাশের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। যেহেতু ইঞ্জিনের কাছাকাছি থেকে তাপ ছড়িয়েছে সেজন্য ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনা ঘটে। এর জন্য লঞ্চের মালিক, সরকারি কর্মকর্তারাসহ ১২ জন দায়ী। 

আজ শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে নাগরিক তদন্ত কমিটির করা তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়। ১৬টি সংগঠনের উদ্যোগে এ নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত রয়েছেন শতাধিক যাত্রী, নিখোঁজও আছেন অনেকে। 

নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার দে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জানান, ‘লঞ্চের ইঞ্জিনকক্ষের পোর্ট সাইডের প্রধান ইঞ্জিনের ৩ নম্বর ইউনিটের ইন্ডিকেটর কক খোলা ও লকিং নাট আলগা ছিল। ইন্ডিকেটর ককের লকিং নাট আলগা থাকায় ঝাঁকুনিতে আস্তে আস্তে ইন্ডিকেটরটি খুলে যায়। ফলে আগুনের ফুলকির সংস্পর্শে এসে চারপাশে বাতাসের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ইঞ্জিনকক্ষে কোন ড্রাইয়ার  কিংবা গ্রিজার না থাকায় একপর্যায়ে সেখানে থাকা ডিজেল ট্যাংকারে সংস্পর্শে এসে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে লঞ্চে।’ 

রিপোর্টার্স ইউনিটি তদন্ত কমিটির সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর তারিখ চলার পর প্রায় তিন মাস চলাচল করেনি। এরপর ১৯ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা করে। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়। কিন্তু সার্ভের মেয়াদ ও রুট পারমিট বহাল থাকা সত্ত্বেও একটি যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল কেনো এতদিন বন্ধ ছিল, সে বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক (নৌনিট্রা) বিভাগ ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা খোঁজখবর নেননি এবং সংশ্লিষ্ট শিপ সার্ভেয়ারকে জানাননি।

এ ছাড়া সদরঘাট টার্মিনালে অফিস হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট শিপ সার্ভেয়ারও বিষয়টি জানার চেষ্টা করেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সকলেই দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং নাগরিক তদন্ত কমিটি মনে করে, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ঢাকা (সদরঘাট) কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশীদ ও পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও পরিদর্শক দীনেশ দাস, লঞ্চটির চার মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামীম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি। এছাড়া প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. খলিলুর রহমান এবং প্রথম শ্রেণির ড্রাইভার মো. মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালাম এঘটনার জন্য দায়ী।

নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী যাত্রীদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে, ওই লঞ্চের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন লঞ্চটিতে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মতে, লঞ্চটিতে আনুমানিক ৮০০ যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগার পর লঞ্চ কর্মচারীরা যাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেননি। কোনো যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। লঞ্চে আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম ছিল না। 

আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চের ভেতরের অবস্থানাগরিক তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্তে লঞ্চের বেশ কিছু ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তিন তলা লঞ্চের প্রত্যেক তলায় অবকাঠামোর সঙ্গে চারটি করে মোট ১২টি ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকার কথা ছিল। কিন্তু ছিল মাত্র ৬টি। ৪২০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি লঞ্চ ১৫০টি লাইফ বয়া থাকার কথা সেখানে ছিল মাত্র ৩৫টি। ৮১টি কেবিনের অনুমোদন থাকলেও ছিল ৮৭টি। অভিযান-১০ লঞ্চের বার্ষিক ফিটনেস পরীক্ষা কাগজে সেসব মাস্টার ও ড্রাইভারের নাম ছিলো অগ্নিকাণ্ডের দিন তাঁরা ছিলেন না।

এদিকে নাগরিক তদন্ত কমিটির নৌ দুর্ঘটনা রোধে ২৫ টি সুপারিশের কথা জানিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দায়ী সকলকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাবে এবং দুর্ঘটনাও কমবে না। দুর্ঘটনায় নিহত পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণের আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাত্রীবাহী নৌযানে আনসার/সিকিউরিটি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। লঞ্চের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেক নাবিকের ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান। 

তদন্ত প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের খান, কমিটির সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার দে, বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন সাবেক প্রধান নৌ প্রকৌশলী ভি শিপস, গ্লাসগো যুক্তরাজ্য মো. আব্দুল হামিদসহ আরও অনেকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশে পাঠানোর নামে ৩২ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা, বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার

আগৈলঝাড়া(বরিশাল) প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার বাবা-ছেলে। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার বাবা-ছেলে। ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের বেলুহার গ্রামের চুন্নু শরীফের ছেলে রুবেল শরীফকে অনেক আগে সৌদি আরবে পাঠান দালাল ইমরান ভূঁইয়া। এর সূত্রে ধরে দালাল প্রতারক ইমরান ভূঁইয়া রুবেলের আপন দুইভাই রাসেল শরীফ ও রাজিব শরীফকে কানাডায় পাঠানোর জন্য তাঁদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপর রাসেল শরীফ ও রাজিব শরীফকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতারক ইমরান ভূঁইয়া ও তাঁর বাবা নুরু ভূঁইয়াসহ তাঁদের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩২ লাখ টাকা নেন।

এ ঘটনায় রাসেল শরীফ বাদী হয়ে চলতি বছরের ১৭ জুলাই আগৈলঝাড়া থানায় নুরু ভূঁইয়া ও তাঁর ছেলে ইমরান ভূঁইয়াসহ ছয়জনকে আসামি করে প্রতারণার মামলা করেন। ওই প্রতারণা মামলার আসামি নুরু ভূঁইয়া ও তাঁর ছেলে মো. নবীন ভূঁইয়াকে আগৈলঝাড়া থানার পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের বরিশাল আদালতে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী রাসেল শরীফ বলেন, ‘কানাডায় পাঠানোর কথা বলে ইমরান ও তাঁর বাবা নুরু ভূঁইয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩২ টাকা নিয়ে টালবাহানা করেন। এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানায় প্রতারণার মামলা করেছি।’

অভিযুক্ত নুরু ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের পর তাঁর বাড়ির লোকজন আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. অলিউল ইসলাম বলেন, বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বাদীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে আসামিরা। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলার পরে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসচালককে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ ও ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাসচালককে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আনোয়ার হোসেন (৩৬) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) ভোররাতে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ দুপুরে গ্রেপ্তার হওয়া আসামির সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে ময়মনসিংহ আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে নিহত বাসচালকের ছোট বোন ময়না আক্তার ফুলবাড়িয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ও হত্যা মামলা করেন।

গ্রেপ্তার আনোয়ার হোসেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে।

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ফুলবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। পরে আসামি শনাক্তের পর নিহতের ছোট বোন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ও হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের একজনকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ভালুকজান বাজারের পেট্রলপাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক মো. জুলহাস মিয়া (৪০) পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। মৃত জুলহাসের বাড়ি ভালুকজান গ্রামে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মাস্ক পরা তিন যুবক পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অপহরণ করে মুক্তিপণ নিয়েও শিশুকে হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে শিশু তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরও হত্যা করেন মো. মকবুল হোসেন। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত।আজ বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মকবুল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার লাখিরচর এলাকার বাসিন্দা। দণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অপর এক ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আসামির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে জরিমানার টাকা আদায় করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিম পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এরশাদ আলম জর্জ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। তবে তার আগে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইচ্ছে করলে সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া (মাদ্রাসা) ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশোনা করত ১০ বছর বয়সী মো. তাওহীদ ইসলাম। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় মাদ্রাসার উদ্দেশে বের হয়ে মামার দোকানে যায়। মামাকে না পেয়ে একাই আবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় শিশুটি। পথিমধ্যে মকবুল হোসেন তাকে অপহরণ করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টায় আসামির পছন্দমতো জায়গায় মুক্তিপণ রেখে আসেন ভুক্তভোগীর মামা। টাকা পেয়েও মকবুল শিশুটিকে ফেরত দেয়নি। পরে পরিবার অভিযোগ দিলে র‍্যাব অভিযান চালিয়ে মকবুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শিশুটির মা তাসলিমা আক্তার বেগম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট থানার এসআই এ কে এম সাইদুজ্জামান গত বছরের ৩১ জুলাই মকবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচার চলাকালে ১৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি’ লিখে রাবি ছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি
সোনিয়ার ঘরে চিরকুট পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোনিয়ার ঘরে চিরকুট পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি বিশ্বাস করো তোমরা। কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠলাম না।’ বাবা-মায়ের জন্য এমন চিরকুট লিখে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন সোনিয়া সুলতানা (২৪) নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। আজ বুধবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মির্জাপুর এলাকার ইসলাম টাওয়ারের সাততলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সোনিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ সেশনের (৬৭তম ব্যাচ) ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, ফ্ল্যাটে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সোনিয়া। তাঁর ঘরে কাগজে লেখা চারটি চিরকুট পাওয়া গেছে। একটি চিরকুটে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার যেন পোস্টমর্টেম না করা হয়। আম্মু, আব্বু, ধ্রুবতারা আমি খুব ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আল্লাহকে বলো আমাকে মাফ করে দিতে।’

আরও একটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছি মা। কবরের আযাব কীভাবে সহ্য করব। আব্বুকে বলবা আমার কবরের পাশে থাকতে। আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন।’

অন্য একটিতে লেখা, ‘আব্বু আম্মু তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। তোমাদের জন্য আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল মা। আমি কিচ্ছু পারলাম না। আব্বু আম্মু শুধু দোয়া করো যেন আমাকে মাফ করে দেন।’ আরও একটিতে লেখা, ‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি বিশ্বাস করো তোমরা। কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠলাম না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি মর্মান্তিক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে মৃত্যুর কোনো সঠিক কারণ আমরা জানতে পারিনি। পুলিশও আমাদের কোনো কিছু জানাতে পারেনি। হয়তো পরে আমরা জানতে পারব।’

নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ওড়না গলায় প্যাঁচানো অবস্থায় মরদেহ ঝুলছিল। এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। সোনিয়া চিরকুটে মরদেহের ময়নাতদন্ত না করার অনুরোধ জানিয়ে গেছে। পরিবারও সেটি চায়নি। তাই ময়নাতদন্ত করা হয়নি। মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত