Ajker Patrika

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় দখলের উৎসব চলছেই

  • জোয়ার-ভাটার স্থান থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত দোকান ও স্থাপনা নিষিদ্ধ
  • পরিবেশের শর্ত সাপেক্ষে দোকানের অনুমতি দেওয়া হয়: জেলা প্রশাসন
  • ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চিঠি
  • আন্দোলনের হুঁশিয়ারি পরিবেশবাদীদের
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে জনপ্রিয় স্পটগুলোয় দখলের ঘটনা বেশি ঘটছে। সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে সারিবদ্ধভাবে বসানো টংদোকান। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে জনপ্রিয় স্পটগুলোয় দখলের ঘটনা বেশি ঘটছে। সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে সারিবদ্ধভাবে বসানো টংদোকান। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পর্যটন শহর কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতকে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। এ-সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, সৈকতের জোয়ার-ভাটার স্থান থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন কেউ মানছে না। সৈকতে বসছে শত শত দোকান ও স্থাপনা। এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সৈকতের সৌন্দর্য ও নির্জনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে সৈকতের বালিয়াড়ি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক শৈথিল্যের সুযোগে গত এক বছরে এই অবস্থা হয়েছে। এ সময়ে কক্সবাজার শহর-সংলগ্ন নাজিরারটেক, সুগন্ধা, কলাতলী এবং কিছুটা দূরের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে দোকানসহ কয়েক শ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সৈকতের জনপ্রিয় স্পটগুলোয় বেশি দখলের ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা সরালেও অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো পুনরায় স্থাপন করা হচ্ছে।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শহরের লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সৈকতের বালিয়াড়িতে বসানো দোকানপাট, চেয়ার-ছাতা, ভ্রাম্যমাণ হকারসহ পর্যটন সেবার বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় জেলা প্রশাসনের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমতি রয়েছে। একইভাবে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতের পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর অনুমতি দিয়ে আসছে।

সরকারি বিভিন্ন দপ্তরও আইন উপেক্ষা করে বালিয়াড়িতে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব পদে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়। তাঁর বদলির আদেশ আসার পরপরই গত রোববার সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে শতাধিক টংঘর বসানোর চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি সৈকতের অন্যান্য পয়েন্টেও বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। ভ্রাম্যমাণ হিসেবে তৈরি অনেক দোকানের চাকা সৈকতের বালুতে দাবিয়ে দেওয়ায় তা স্থায়ী স্থাপনার রূপ নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকতের লাবণী, সিগাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে ১ হাজার ৪০০ চেয়ার-ছাতার (কিটকট) অনুমোদন ছিল। গত তিন মাসে আরও ৬০০ চেয়ার-ছাতার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সময়ে ২০০-এর মতো ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এভাবে অনুমতি নিয়ে সৈকতের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় হঠাৎ করে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা বেড়েছে। রোববার থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে বসানো একই ধরনের শতাধিক টংঘরের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সৈকত দখলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রসৈকতে শত শত দোকান স্থাপন করা হয়েছে, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর। জেলা প্রশাসন ইসিএ এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ অনুসরণ না করে লাইসেন্স দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। চিঠিতে সৈকতে আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে বসানো দোকান উচ্ছেদ ও লাইসেন্স বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে থাকা দুই শতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে। বছরে দু-একবার এই ধরনের অভিযান হলেও নতুন নতুন কৌশলে দখলদারেরা সৈকতে দোকানপাট বসায়। সর্বশেষ রোববার সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর পাশে বালিয়াড়ি ও ঝাউবন দখল করে বেশ কিছু দোকান বসানোর চেষ্টা করা হয়। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এতে বাধা দেয়।

ইসিএ এলাকায় দোকানপাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, সৈকতের বালিয়াড়িতে দোকানপাট বসানোর সুযোগ নেই। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্রে সৈকতের বালিয়াড়ি এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন জায়গায় দোকান না বসানোর শর্ত রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, বালিয়াড়িতে বসানোর জন্য আনা টংদোকানগুলো মালিকদের নিজ উদোগে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশবাদীদের দাবি

সমুদ্রসৈকতের ইসিএ এলাকা দখলমুক্ত করতে দুই সচিবসহ সরকারি আট কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আট কর্মকর্তা হলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক।

সৈকতের ইসিএ এলাকায় গড়ে তোলা সব ধরনের স্থাপনা অবিলম্বে সরানোর দাবি জানিয়েছে পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন। শিগগির প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আমরা কক্সবাজারবাসী, কক্সবাজার সোসাইটি ও কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘ইসিএ আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সৈকতের বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হোক। না হয় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শুটিং স্পটে মডেলকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পরিচালকসহ ৩ জনের নামে মামলা

জাতিসংঘে ইসরায়েলকে তুলোধুনো করলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট, মাথায় চুমু দিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন সোহেল তাজ, ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর থেকে

মামুনের কথা অসংগতিপূর্ণ, আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: পুলিশ

অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল স্থগিতের দাবি সাদা দলের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত