Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে জানেন না জেলেপাড়ার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ২০: ০৬
ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে জানেন না জেলেপাড়ার মানুষ

প্রতিদিনের মতো আজও সারা দিন সাগরে মাছ ধরেছেন সুনীল জলদাশ। বিকেলে মাছ নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন তিনি। পথে কথা হয় এই জেলের সঙ্গে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে; এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না তিনি। প্রশাসন থেকেও মাইকিং করে জানানো হয়নি বলে জানান সুনীল জলদাশ। 

সুনীল জলদাশের বাড়ি চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়াম এলাকায়। এই এলাকার নাম জেলেপাড়া। অন্তত দুই শতাধিক পরিবার থাকে এই এলাকায়। তাঁদের সবারই প্রধান পেশা সাগরে মাছ ধরা। এ জেলেপাড়ার পাশেই বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড় মোখা যে গতিতে আঘাত হানবে বলে আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, সে গতিতে আঘাত হানলে তাঁদের সবারই জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। 

সুনীল জলদাশ ২০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরছেন। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোখা আঘাত হানলে কোথায় যাব, সে বিষয়ে এখনো জানি না। প্রশাসনের কেউ মাইকিং করেনি। কোথায় যাব, সেটিও বলেনি।’ 

তিনি বলেন, ‘আশা করি কিছু হবে না। এর আগেও কয়েকটা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’ 

সাগরপাড়ে দোকান আছে মো. জুয়েলের। তাঁর বাড়িও জেলেপাড়া এলাকায়। সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। জুয়েলও জানেন না ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে। 

জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও তো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। পারে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। আর তো কিছু হয়নি। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোথায় যাব, যাওয়ার তো কোনো জায়গাও নেই।’ 

তবে কিছু কিছু জেলে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানেন। মো. রেজাউল করিম বাড়ি থেকে বের হয়ে সাগরপাড়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে নাকি ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানবে। তাই সাগরপাড়ের পরিস্থিতি বুঝতে এলাম। এখন তো সাগর স্বাভাবিক। তবে বাতাস বইছে।’ 

পতেঙ্গার আকমল আলী রোডে বেড়িবাঁধসংলগ্ন জেলেপাড়ায় গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে কারও ধারণা নেই। উৎকণ্ঠাও নেই। বরং তাঁরা ব্যস্ত তাঁদের নিত্যদিনের কাজে। কালকেও তাঁরা সাগরে যাবেন বলে জানান। 

সাগরপাড়ের বেড়িবাঁধ ঘেঁষা চার সন্তান নিয়ে থাকেন সুপ্রিয় জলদাশ। প্রতিদিনের মতো তিনি ব্যস্ত স্বামীর জাল ঠিক করতে। আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে কিছু হয়নি, এবারও হবে না। ঘূর্ণিঝড় যে আঘাত হানবে, সেটি আপনার কাছ থেকে শুনলাম।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলেও ঘরদোর ফেলে কোথায় যাব? চট্টগ্রাম শহরে থাকার মতো কোথাও জায়গা নেই। বেশি কষ্ট হলে বেড়িবাঁধের ওপর চলে যাব।’ 

জেলেপাড়ার আরেক বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘এক দিন মাছ না ধরলে কে খাওয়াবে। জায়গা-জমি বলতে সাগরই তো আছে। প্রশাসনের লোক নিয়ে গেলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব। অন্যথায় এখানেই থাকব।’ 

এদিকে মোখার প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরীর দামপাড়ায় শাখা কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়। 

নগরের ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড উপকূল এলাকা। কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী দাবি করেন, ‘মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের আছে।’ 

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোছাইন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা মাইকিং করা শুরু করেছি। পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও নিয়েছি, আমাদের সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত