Ajker Patrika

শেরপুরে চার বছরে আত্মহত্যায় প্রাণ গেছে ৭৯ জনের, চলতি বছরেই ১২

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)
শেরপুরে চার বছরে আত্মহত্যায় প্রাণ গেছে ৭৯ জনের, চলতি বছরেই ১২

আত্মহত্যা একটি মানসিক ব্যাধি। চিকিৎসকেরা আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। পৃথিবীতে কিছু কিছু সময় কিছু জায়গায় আত্মহত্যার বৈধতা ছিল। প্রাচীন রোমে আত্মহত্যা প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত ছিল। তবে সেটাও নির্দিষ্ট কারণে করা যেত। সামরিক পরাজয়ের মোকাবিলা করার জন্য এটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বলে তখন মনে করা হতো। রোমে কিছু আত্মহত্যার কারণ যেমন- গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক মৃত্যু, অন্যের জীবন বাঁচাতে, অন্যের জীবন রক্ষা করার জন্য, শোকের ফলে, ধর্ষণের জন্য লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে, শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, সামরিক পরাজয়ের মতো অসহিষ্ণু পরিস্থিতিতে থেকে অব্যাহতি বা অপরাধমূলক সাধনা সাধারণ বিষয় ছিল।

কিন্তু এটা নিয়ে নানান জটিলতা দেখা দেওয়ায় আত্মহত্যাকে অবৈধ করা হয়। প্রাচীন এথেন্সে যদি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের অনুমোদন ব্যতিরেকে আত্মহত্যা করত তাহলে তাকে সাধারণ কবরস্থানের করব দেওয়া হতো না। তাকে সমাহিত করা হতো শহরের বাইরে অবস্থিত কোন জায়গায়, শুধু তাই নয় তাঁর জন্য কোন স্মৃতিফলক ও ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না।  

এরপরও পৃথিবীতে থেমে থাকেনি আত্মহত্যার ঘটনা। যেটা এখনও চলমান। বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রায়ই ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা। তথ্য মতে, ২০১৮ সালে উপজেলাটিতে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২৪ জন। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ জনে। ২০২০ সালে  এই প্রবণতা কমে দাঁড়ায় ১৫ জনে। আবার ২০২১ সালে চলতি আগস্ট পর্যন্ত এই সংখ্যা ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছেন বৃদ্ধ, কিশোর, নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি ও পেশার মানুষ।  

মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পারিবারিক কলহ, বিয়ে ভেঙে যাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারা, অর্থনৈতিক সংকট, মাদকসহ বিভিন্ন কারণে এই আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটেছে। এই আত্মহত্যাগুলো অধিকাংশই হয়েছে গলায় রশি বা ওড়না পেঁচিয়ে, বিষ বা গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে হতাশা, ক্ষোভ, ব্যক্তিত্বে আঘাত এবং সর্বোপরি আত্মরক্ষার পদ্ধতি না জানার কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ৩ আগস্ট গাড়িদহ ইউনিয়নের ছোট ফুল বাড়ি গ্রামের মৃত পিয়াস উদ্দিনের ছেলে দিনমজুর পলাশ (৪৫) গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে আত্মহত্যা করেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়। ১৮ জুলাই মির্জাপুর ইউনিয়নে উত্তরপাড়া গ্রামে নিজ শয়ন ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ভ্যান চালক আজিজুর রহমান (৬৫)। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি ৷ এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং আত্মহত্যা করেন বলে নিহতের পরিবার জানিয়েছে।  

১৬ জুলাই উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নে নাই শিমুল গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান রকি (২২) বিষপান আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনার ২ মাস পূর্বে রকি প্রেম করে বিয়ে করেন। এর পর থেকেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। স্বামী আত্মহত্যা করায় স্ত্রী আরিফা নিজেও ঘরের ভেতর গিয়ে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে তাদের পরিবার থেকে বলা হয়েছে। ২৪ জুন ভবানীপুর ইউনিয়নের আটাইল গ্রামে স্বামীর ওপর অভিমান করে গৃহবধূ আদুরী খাতুন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে বলে নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। 

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়েটিক সোশ্যাল ওয়ার্কার বিভাগের ডাক্তার বোরহান উদ্দিন হায়দার মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিভিন্ন কারণে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। নৈরাজ্যকর অবস্থার কারণে আত্মহত্যা করে। দেশের বর্তমান অবস্থার কারণেও আত্মহত্যা করে। 

বোরহান উদ্দিন বলেন, মূলত আত্মরক্ষার পদ্ধতি না জানার কারণে আত্মহত্যা করে। অনির্ধারিত কারণে আত্মহত্যা চলে আসে। বর্তমান সময়ে সবাই আইসোলেটেড হয়ে আছি।এই সময়ে মানুষ অবসাদে ভুগছেন। এ কারণে আত্মহত্যাগুলো ঘটছে। এমন সময় পরিবার পরিবেশ শান্ত রাখতে হবে। কারও মনের ওপরে জোর দেওয়া যাবে না।    

এছাড়াও ২১ জুন সকালে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের হাতিগাড়া গ্রামে শ্রীমতি সুন্দরী তাঁতি (৫৫) নামের এক আদিবাসী গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বামীর ওপর অভিমান করে ওই নারী ঘরের তীরের সঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। ২৫মে কুসুম্বী ইউনিয়নের গোসাইবাড়ী কলোনি গ্রামের স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করার পরে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন গৃহবধূ ময়না বেগম (৪৫)। ৫মে গাড়িদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে আত্মহত্যা করেন রোকেয়া বেগম (৪৮)। ছেলের বউয়ের ওপর অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। একই  ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে  গত ১১ মার্চ ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ২ সন্তানের জননী মাসুমা আকতার ববিতা (৩৫)।

এদিকে খামারকান্দি ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে গত ৭ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন মনোয়ারা খাতুন (৪৫)। ছেলের বউয়ের সঙ্গে বিবাদের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে বলে নিহতের পরিবার জানিয়েছিলেন। পরকীয়ার সন্দেহ ২০ মার্চ সুঘাট ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ সাবিনা বেগম (৩০)। একই ইউনিয়নের ফুলজোড় মধ্যপাড়া গ্রামে ৫ মার্চ ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে নববধূ সুমাইয়া আক্তার মিতু (২০)। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে বলে নিহতের স্বজনরা জানান।

চকখানপুর দত্তপাড়া গ্রামে হিন্দু পাড়ায় ১৩ জানুয়ারি  শম্পা বালা (১৬) বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে পরদিন ১৪ জানুয়ারি ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটে বলে নিহতের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। 

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু সায়েম মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে। গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীনতাই আত্মহত্যার প্রধান কারণ। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এবং সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তা ছাড়া মাদকাসক্তি, অপরাধবোধ, অন্যের প্ররোচনা, অশিক্ষা, অতিদারিদ্রতা, দাম্পত্য কলহ, প্রেমে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে।  

মোহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, বর্তমানে করোনার কারণে সবাই ঘরবন্দী। এই সময়ে মানুষ অবসাদে ভুগছে। পরিবারের সঙ্গে একটু ঝামেলা হলেও মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা চলে আসছে। সেই কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা কমছে না। 

এই সময়ে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পরিবারই পারে আত্মহত্যা কমাতে। তাই পরিবারের উচিৎ সকল সদস্যের দিকে খেয়াল রাখা বলেন মোহাম্মদ আবু সায়েম। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত