আব্দুর রহমান
আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেথপ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেথপ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একসময় ‘বর্ণবাদী’, ‘অরাজকতার রেসিপি’ এবং গাজা নিয়ে ‘অযৌক্তিক কল্পনা’ পোষণকারী ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল। তবু গত মাসে এক অবিশ্বাস্য ফোনকল হামাসকে এই বিশ্বাসে রাজি করিয়েছে যে, যুদ্ধের জিম্মিদের সবাইকে ছেড়ে দিলেও...
৪ ঘণ্টা আগেকাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যে একটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ সুবিধা (Air Force Facility) নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ঘোষণা দেন।
১৯ ঘণ্টা আগেআফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর এটি তালেবানের সবচেয়ে বড় কোনো উচ্চপর্যায়ের সফর। মুত্তাকি তাঁর আট দিনের অবস্থানকালে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।
২ দিন আগেহামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র ত্যাগ করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গোষ্ঠীটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে ছাড় দিতে পারে। থিংক ট্যাংক ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লভাট বলেন, ‘অস্ত্র পরিত্যাগের বিষয়ে হামাসের অবস্থান সবচেয়ে...
২ দিন আগে