ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে চতুর্থ দিনে অন্তত চারটি শহর দখল হয়ে গেছে। রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভে চলছে তুমুল লড়াই। দুই বৃহৎ শহর রক্ষায় লড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এ পর্যন্ত তিন শিশুসহ অন্তত ১৯৮ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও হতাহতের কথা স্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ৪ লাখে বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বেশির ভাগই প্রতিবেশী পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং সাধারণভাবে পশ্চিমজুড়ে ইউক্রেনীয়দের সমর্থন জানানো হচ্ছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে ইউক্রেনে সমরাস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বাহিনীকে ‘স্পেশাল অ্যালার্ট’ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ যে হঠাৎ করে হয়েছে এমন নয়। পুতিন তাঁর বাহিনীকে ইউক্রেনে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধ শুরু হয়। তবে কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছিল রাশিয়া।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নিন্দা জানায়। রাশিয়ার ব্যাংক, তেল শোধনাগার এবং সামরিক রপ্তানি লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ তাৎক্ষণিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ম্যারাথন জরুরি আলোচনায় বসে।
এই জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার গতি ও তাৎক্ষণিকতার বিষয়ে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছেন। সারা দেশে সংঘাত চাপিয়ে দেওয়া অন্য নিপীড়কদের প্রতি পশ্চিমের কখনো এভাবে ব্যাপকভিত্তিক ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে অনীহা লক্ষ্য করা যায়। কেন তারা এসব ক্ষেত্রে এমন নমনীয় অবস্থান নেওয়াকেই পছন্দ করেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্ব মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাঁদের প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের সশস্ত্র প্রতিরোধের নিন্দা না জানানোই শুধু নয়, একটি ‘সভ্য’ জাতির সঙ্গে কীভাবে এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে সে নিয়ে তাঁদের ভেতরের আতঙ্ক যেভাবে প্রকাশ করছেন—সেটিতে দ্বৈতনীতিরই নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
কিয়েভের সিবিএস নিউজের সিনিয়র সংবাদদাতা চার্লি ডি’আগাতা গত শুক্রবার বলেন: ‘এটি সেই রকম কোনো স্থান নয়, যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, যেখানে ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলেছে। এটি একটি তুলনামূলকভাবে সভ্য, তুলনামূলকভাবে ইউরোপীয়—এই শব্দগুলোকে আমারও খুব সাবধানে বেছে নিতে হচ্ছে—এমন শহর যেখানে আপনি এমন কিছু ঘটুক বলে আশা করবেন না।’
তাঁর এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে একই সঙ্গে উপহাস এবং ক্ষোভের জন্ম দেয়। অনেকে তাঁকে মনে করিয়ে দেন, কীভাবে তার বক্তব্যগুলো সংঘাত জর্জরিত অ-শ্বেতাঙ্গ, অ-ইউরোপীয় লোকদের মূলধারার মিডিয়ায় আরও অমানবিকরণে অবদান রাখছে।
গত শনিবার ইউক্রেনের সাবেক ডেপুটি জেনারেল প্রসিকিউটর ডেভিড সাকভারেলিডজে বিবিসিতে কথা বলেন। সাকভারেলিডজে বলেন, ‘এটা আমার জন্য খুবই আবেগের ব্যাপার। কারণ আমি দেখছি স্বর্ণকেশী এবং নীল চোখের ইউরোপীয় মানুষ প্রতিদিন পুতিনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাঁর হেলিকপ্টার ও রকেটের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছেন।’
ওই অনুষ্ঠানে বিবিসির উপস্থাপক ইউক্রেনের ওই সাবেক আমলার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি। আমি অবশ্যই আপনার আবেগকে সম্মান করি।’
এছাড়াও গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্কাই নিউজ মধ্য ইউক্রেনীয় শহর ডিনিপ্রোর একটি ভিডিও সম্প্রচার করে। ভিডিওতে মোলোটভ ককটেল তৈরি দেখানো হয়। সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়, কীভাবে এই বিস্ফোরক ডিভাইসটি যানবাহনের সঙ্গে ভালোভাবে আটকে রাখা যায়।
টুইটারে এই ভিডিওর নিচে একজন কমেন্ট করেন, ‘আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মূলধারার পশ্চিমা মিডিয়া মোলোটভ ককটেল তৈরি করে বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিরোধকারী লোকদের কত সুন্দরভাবে কভারেজ দেয়। যদি তাঁরা ইয়েমেন বা ফিলিস্তিনের বাদামি ত্বকের মানুষ হতেন তবে তাঁরা মার্কিন-ইসরায়েল বা মার্কিন-সৌদি ড্রোন হামলার যোগ্য সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হতেন।’
ফ্রান্সের সর্বাধিক সম্প্রচারিত ক্যাবল নিউজ চ্যানেল বিএফএম টিভিতে সাংবাদিক ফিলিপ কোরবে বলেন: ‘আমরা এখানে পুতিন সমর্থিত সিরীয় সরকারের বোমা হামলা থেকে পালিয়ে আসা সিরীয়দের কথা বলছি না, আমরা আমাদের মতো দেখতে গাড়িতে করে ইউরোপীয়দের (দেশ ছেড়ে) চলে যাওয়ার কথা বলছি। যাঁরা তাঁদের জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছেন।’
ব্রিটিশ সাংবাদিক ড্যানিয়েল হ্যানান দ্য টেলিগ্রাফের একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেটি নিয়েও অনলাইনে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ওই নিবন্ধে ড্যানিয়েল লিখেছিলেন, যুদ্ধ এখন আর শুধু ‘দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে’ হয় না।
ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরাও ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিজীবী’ এবং ‘ইউরোপীয়’—এ ধরনের পরিভাষা ব্যবহার করছেন। এ কারণেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়াকে সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁরা। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী এবং শরণার্থীদের ব্যাপারে সেসব ভীতির কথা পশ্চিমা সরকারগুলো বারবার বলে আসছে ইউক্রেনীয়দের ক্ষেত্রে তার কোনো ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন যথার্থভাবেই বলেছেন, ‘ত্বকই পাসপোর্ট …একে বলা যেতে পারে এপিডার্মাল সিটিজেনশিপ (চর্মগত নাগরিকত্ব)!’
ফরাসি পার্লামেন্টের সদস্য জ্যঁ-লুই বোরল্যাঙ্গেস একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা হবেন “একটি উত্তম মানের, বুদ্ধিবৃত্তিক অভিবাসন”, যার সুবিধা আমরা নিতে পারব।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে উদারপন্থী মিডিয়াগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা সংকট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ১৯৯০-এর দশকে বসনিয়ার যুদ্ধ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের সংঘাতের মতো তুলনামূলকভাবে এই মহাদেশের সাম্প্রতিক সংঘাতের কথা ভুলিয়ে দিতে পারে এ সংঘাত। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সংঘাত ১৯৬০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
এ ধরনের সাধারণীকরণ কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে ছিল না। যেমনটি বলা যেতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বযুদ্ধ যুগের পর ইউরোপ তাদের পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলোতে অনেক যুদ্ধ রপ্তানি করেছে। কিছু পশ্চিমা ভাষ্যকারও ইউক্রেনীয়দের দৃঢ়তা এবং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রশংসা এমনভাবে করছেন, যেন অন্য কোনো জাতি বা মানবগোষ্ঠী এর আগে এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি।
ক্রাউডসোর্সিং এবং কিয়েভের সামরিক বাহিনীকে অর্থায়নের জন্য অনলাইনে অনুদান সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া বা অর্থ লেনদেনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত হওয়ার মতো বাধা মুখে না পড়ার ঘটনাকে অনেক সমালোচক পশ্চিমাদের ভণ্ডামি বলেই উল্লেখ করছেন।
একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার আয়োজনগুলো থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া এবং অন্য দখলদারদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ সম্প্রসারিত করার আহ্বান না জানানোকে দ্বৈতনীতি বলেই চিহ্নিত করা যায়।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি অবরোধ কোনো অপরাধ নয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) আরোপের দাবিতে শুধু হওয়া আন্দোলনকে পশ্চিমা সরকারগুলো প্রায়শই ইহুদিবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ক্রীড়া ইভেন্ট থেকে রাশিয়াকে বয়কট করাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইসরায়েলি দূতাবাস থেকে স্পনসরশিপ নেওয়ার কারণে গত মাসে সিডনি সাংস্কৃতিক উৎসব বয়কটের সমালোচনা করেছেন।
পশ্চিমাদের এমন দুইমুখো আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ক্লডিয়া ওয়েবে টুইট করেছেন, তারাই সত্যিকার অর্থে ইউক্রেনীয়দের ব্যাপারে সহমর্মী বলে বিবেচিত হবেন যাঁরা সব (দেশের) শরণার্থীকে দুই হাত প্রসারিত করে বুকে টেনে নেবেন। স্বাগত জানাবে। কিন্তু হচ্ছেটা কী? আসলে তাঁরা ভান করছেন।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে চতুর্থ দিনে অন্তত চারটি শহর দখল হয়ে গেছে। রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভে চলছে তুমুল লড়াই। দুই বৃহৎ শহর রক্ষায় লড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এ পর্যন্ত তিন শিশুসহ অন্তত ১৯৮ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও হতাহতের কথা স্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ৪ লাখে বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বেশির ভাগই প্রতিবেশী পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং সাধারণভাবে পশ্চিমজুড়ে ইউক্রেনীয়দের সমর্থন জানানো হচ্ছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে ইউক্রেনে সমরাস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বাহিনীকে ‘স্পেশাল অ্যালার্ট’ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ যে হঠাৎ করে হয়েছে এমন নয়। পুতিন তাঁর বাহিনীকে ইউক্রেনে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধ শুরু হয়। তবে কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছিল রাশিয়া।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নিন্দা জানায়। রাশিয়ার ব্যাংক, তেল শোধনাগার এবং সামরিক রপ্তানি লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ তাৎক্ষণিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ম্যারাথন জরুরি আলোচনায় বসে।
এই জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার গতি ও তাৎক্ষণিকতার বিষয়ে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছেন। সারা দেশে সংঘাত চাপিয়ে দেওয়া অন্য নিপীড়কদের প্রতি পশ্চিমের কখনো এভাবে ব্যাপকভিত্তিক ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে অনীহা লক্ষ্য করা যায়। কেন তারা এসব ক্ষেত্রে এমন নমনীয় অবস্থান নেওয়াকেই পছন্দ করেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্ব মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাঁদের প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের সশস্ত্র প্রতিরোধের নিন্দা না জানানোই শুধু নয়, একটি ‘সভ্য’ জাতির সঙ্গে কীভাবে এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে সে নিয়ে তাঁদের ভেতরের আতঙ্ক যেভাবে প্রকাশ করছেন—সেটিতে দ্বৈতনীতিরই নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
কিয়েভের সিবিএস নিউজের সিনিয়র সংবাদদাতা চার্লি ডি’আগাতা গত শুক্রবার বলেন: ‘এটি সেই রকম কোনো স্থান নয়, যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, যেখানে ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলেছে। এটি একটি তুলনামূলকভাবে সভ্য, তুলনামূলকভাবে ইউরোপীয়—এই শব্দগুলোকে আমারও খুব সাবধানে বেছে নিতে হচ্ছে—এমন শহর যেখানে আপনি এমন কিছু ঘটুক বলে আশা করবেন না।’
তাঁর এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে একই সঙ্গে উপহাস এবং ক্ষোভের জন্ম দেয়। অনেকে তাঁকে মনে করিয়ে দেন, কীভাবে তার বক্তব্যগুলো সংঘাত জর্জরিত অ-শ্বেতাঙ্গ, অ-ইউরোপীয় লোকদের মূলধারার মিডিয়ায় আরও অমানবিকরণে অবদান রাখছে।
গত শনিবার ইউক্রেনের সাবেক ডেপুটি জেনারেল প্রসিকিউটর ডেভিড সাকভারেলিডজে বিবিসিতে কথা বলেন। সাকভারেলিডজে বলেন, ‘এটা আমার জন্য খুবই আবেগের ব্যাপার। কারণ আমি দেখছি স্বর্ণকেশী এবং নীল চোখের ইউরোপীয় মানুষ প্রতিদিন পুতিনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাঁর হেলিকপ্টার ও রকেটের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছেন।’
ওই অনুষ্ঠানে বিবিসির উপস্থাপক ইউক্রেনের ওই সাবেক আমলার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি। আমি অবশ্যই আপনার আবেগকে সম্মান করি।’
এছাড়াও গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্কাই নিউজ মধ্য ইউক্রেনীয় শহর ডিনিপ্রোর একটি ভিডিও সম্প্রচার করে। ভিডিওতে মোলোটভ ককটেল তৈরি দেখানো হয়। সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়, কীভাবে এই বিস্ফোরক ডিভাইসটি যানবাহনের সঙ্গে ভালোভাবে আটকে রাখা যায়।
টুইটারে এই ভিডিওর নিচে একজন কমেন্ট করেন, ‘আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মূলধারার পশ্চিমা মিডিয়া মোলোটভ ককটেল তৈরি করে বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিরোধকারী লোকদের কত সুন্দরভাবে কভারেজ দেয়। যদি তাঁরা ইয়েমেন বা ফিলিস্তিনের বাদামি ত্বকের মানুষ হতেন তবে তাঁরা মার্কিন-ইসরায়েল বা মার্কিন-সৌদি ড্রোন হামলার যোগ্য সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হতেন।’
ফ্রান্সের সর্বাধিক সম্প্রচারিত ক্যাবল নিউজ চ্যানেল বিএফএম টিভিতে সাংবাদিক ফিলিপ কোরবে বলেন: ‘আমরা এখানে পুতিন সমর্থিত সিরীয় সরকারের বোমা হামলা থেকে পালিয়ে আসা সিরীয়দের কথা বলছি না, আমরা আমাদের মতো দেখতে গাড়িতে করে ইউরোপীয়দের (দেশ ছেড়ে) চলে যাওয়ার কথা বলছি। যাঁরা তাঁদের জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছেন।’
ব্রিটিশ সাংবাদিক ড্যানিয়েল হ্যানান দ্য টেলিগ্রাফের একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেটি নিয়েও অনলাইনে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ওই নিবন্ধে ড্যানিয়েল লিখেছিলেন, যুদ্ধ এখন আর শুধু ‘দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে’ হয় না।
ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরাও ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিজীবী’ এবং ‘ইউরোপীয়’—এ ধরনের পরিভাষা ব্যবহার করছেন। এ কারণেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়াকে সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁরা। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী এবং শরণার্থীদের ব্যাপারে সেসব ভীতির কথা পশ্চিমা সরকারগুলো বারবার বলে আসছে ইউক্রেনীয়দের ক্ষেত্রে তার কোনো ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন যথার্থভাবেই বলেছেন, ‘ত্বকই পাসপোর্ট …একে বলা যেতে পারে এপিডার্মাল সিটিজেনশিপ (চর্মগত নাগরিকত্ব)!’
ফরাসি পার্লামেন্টের সদস্য জ্যঁ-লুই বোরল্যাঙ্গেস একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা হবেন “একটি উত্তম মানের, বুদ্ধিবৃত্তিক অভিবাসন”, যার সুবিধা আমরা নিতে পারব।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে উদারপন্থী মিডিয়াগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা সংকট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ১৯৯০-এর দশকে বসনিয়ার যুদ্ধ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের সংঘাতের মতো তুলনামূলকভাবে এই মহাদেশের সাম্প্রতিক সংঘাতের কথা ভুলিয়ে দিতে পারে এ সংঘাত। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সংঘাত ১৯৬০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
এ ধরনের সাধারণীকরণ কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে ছিল না। যেমনটি বলা যেতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বযুদ্ধ যুগের পর ইউরোপ তাদের পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলোতে অনেক যুদ্ধ রপ্তানি করেছে। কিছু পশ্চিমা ভাষ্যকারও ইউক্রেনীয়দের দৃঢ়তা এবং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রশংসা এমনভাবে করছেন, যেন অন্য কোনো জাতি বা মানবগোষ্ঠী এর আগে এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি।
ক্রাউডসোর্সিং এবং কিয়েভের সামরিক বাহিনীকে অর্থায়নের জন্য অনলাইনে অনুদান সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া বা অর্থ লেনদেনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত হওয়ার মতো বাধা মুখে না পড়ার ঘটনাকে অনেক সমালোচক পশ্চিমাদের ভণ্ডামি বলেই উল্লেখ করছেন।
একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার আয়োজনগুলো থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া এবং অন্য দখলদারদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ সম্প্রসারিত করার আহ্বান না জানানোকে দ্বৈতনীতি বলেই চিহ্নিত করা যায়।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি অবরোধ কোনো অপরাধ নয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) আরোপের দাবিতে শুধু হওয়া আন্দোলনকে পশ্চিমা সরকারগুলো প্রায়শই ইহুদিবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ক্রীড়া ইভেন্ট থেকে রাশিয়াকে বয়কট করাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইসরায়েলি দূতাবাস থেকে স্পনসরশিপ নেওয়ার কারণে গত মাসে সিডনি সাংস্কৃতিক উৎসব বয়কটের সমালোচনা করেছেন।
পশ্চিমাদের এমন দুইমুখো আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ক্লডিয়া ওয়েবে টুইট করেছেন, তারাই সত্যিকার অর্থে ইউক্রেনীয়দের ব্যাপারে সহমর্মী বলে বিবেচিত হবেন যাঁরা সব (দেশের) শরণার্থীকে দুই হাত প্রসারিত করে বুকে টেনে নেবেন। স্বাগত জানাবে। কিন্তু হচ্ছেটা কী? আসলে তাঁরা ভান করছেন।’
কিন্তু আরাকান আর্মি এখনো সেই অর্থে সিতওয়ে ও কায়াকফিউতে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়নি। কিন্তু কেন? এর পেছনে রয়েছে তিনটি কৌশলগত কারণ—কায়াকফিউতে চীনের বড় বিনিয়োগ, সিতওয়েতে ভারতের বিনিয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের কাছে রাজনৈতিক বৈধতা ও শাসন কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এএ–এর অগ্রাধিকার।
৭ ঘণ্টা আগেআগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
১০ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পশ্চিমা বিশ্বে লবিস্ট নিয়োগের ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে বিশ্বের অন্য দেশগুলো নিজ স্বার্থ উদ্ধারে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে প্রায়ই লবিং ফার্ম নিয়োগ দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে খবর এসেছে, বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টায় বিপুল...
১২ ঘণ্টা আগেবিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে