Ajker Patrika

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন-ভারত ‘নয়া বন্ধুত্ব’ কি এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ১৫
ট্রাম্প ভারতকে চাপে রাখতে যে কৌশল নিয়েছেন তা কাটিয়ে উঠতে সির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফল হবেন কি মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প ভারতকে চাপে রাখতে যে কৌশল নিয়েছেন তা কাটিয়ে উঠতে সির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফল হবেন কি মোদি। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগে ভারতে অভাবনীয় অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় চীন কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করেছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সম্মানে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ নামে এক জনসভার আয়োজন করেছিলেন আহমেদাবাদে। মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে আয়োজিত ওই জনসভা ছিল ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফর। এই সফর দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্কের পথ খুলে দেয়। এটি মোদি ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও এক নতুন অধ্যায় শুরুর প্রদর্শনী ছিল।

এর কয়েক মাস পর, ২০২০ সালের জুনে ভারত-চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। হিমালয় অঞ্চলের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে নিহত হয় ভারতের ২০ সেনা। এরপর ভারত টিকটকসহ দুই শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। ভারত ও চীনের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কোয়াড জোটের (কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)—যেখানে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে—সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করে নয়াদিল্লি।

বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, বিশেষ করে—ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ কর আরোপ এবং দ্রুত ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কয়েক দশকে ওয়াশিংটনের গড়ে তোলা কূটনৈতিক ও কৌশলগত অর্জনগুলো ভেস্তে দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো

গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দিনের দিল্লি সফরে ওয়াং ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেন। হিমালয় সীমান্তে দুই দেশের চলমান বিরোধ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একে অপরকে ‘বিশ্বাস ও সহযোগিতা’ করা উচিত। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়তে কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হয়—সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও সীমান্ত বাণিজ্যে সুবিধা দেওয়া।

গত জুনে বেইজিং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের পবিত্র স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের কিছু অংশে ‘প্রাথমিক সমাধান’ খুঁজে দেখতেও দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে রূপ নেওয়া এই সীমান্ত সংকটই দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক উত্তেজনার কারণ।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মোদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এই আঞ্চলিক জোটকে অনেক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। চলতি মাসের শেষ দিকে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। সাত বছরের বেশি সময় পর এটিই হবে তাঁর প্রথম চীন সফর।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট সি আহ্বান জানান ভারত-চীন সম্পর্ককে ‘ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নাচের’ রূপ দেওয়ার জন্য। ড্রাগন ও হাতিকে এই দুই এশীয় পরাশক্তির প্রতীক ধরা হয়।

তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো সানা হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ভারত-চীনের বিভেদ দূর করার প্রচেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। গত অক্টোবরেই রাশিয়ার কাজানে মোদি ও সির মধ্যে বরফ গলানো বৈঠক হয়। এর আগে কয়েক বছর ধরে তাঁরা একে অপরকে এড়িয়ে চলছিলেন, এমনকি বহুপক্ষীয় সম্মেলনেও।

হাশমি বলেন, ‘তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতি আর পাকিস্তানের প্রতি তাঁর বাড়তি আনুকূল্যের কারণে ভারতের হাতে তেমন বিকল্প ছিল না। তাই তারা প্রতিপক্ষের সংখ্যা কমানোর পথে হাঁটছে, যার মধ্যে চীনও রয়েছে।’

এ বছর ট্রাম্প দুবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ওয়াশিংটনে আতিথ্য দিয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বিদেশি কোনো সেনাপ্রধানকে তিনি হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটেছে তাঁর মধ্যস্থতায়। যদিও নয়াদিল্লি বলে আসছে, ওয়াশিংটন কোনো ভূমিকা নেয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আলোকে দিল্লির ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে হাশমি বলেন, ‘বেইজিংয়ের জন্য এই উদ্যোগটা (ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করা) কৌশলগত, কিন্তু নয়াদিল্লির জন্য বিষয়টা এসেছে অনিশ্চয়তা আর পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে।’ হাশমি মনে করেন, হোয়াইট হাউস ‘নিশ্চিতভাবেই ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদারকে একঘরে করার চেষ্টা করছে’।

রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন, যা আগের ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের ওপর তিনি এমন শুল্ক দেননি। বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নতির গতি গত কয়েক মাসে অনেক বেড়েছে। এবার মনে হচ্ছে সম্পর্কের সত্যিকারের একটা পরিবর্তন ঘটছে, যা স্থায়ী হতে যাচ্ছে।’

নয়া এশীয় বাণিজ্য জোট?

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি হলে দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের ধাক্কা কিছুটা লাঘব করতে পারবে। চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার, সীমান্ত বাণিজ্যে সহজতা এবং যৌথ সরবরাহ চেইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সহায়ক হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মূলত ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়া এর জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঘাটতি, চীনের সঙ্গে তা প্রায় দ্বিগুণ।

এ বিষয়ে সানা হাশমি বলেছেন, চীন ভারতকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং ভারতীয় পণ্যের জন্য বাজার আরও খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমতে পারে। একই সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাও হ্রাস পাবে। চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।

হাশমি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পারা চীনের জন্য কৌশলগত দিক থেকেও বড় সাফল্য হবে। তাঁর মতে, ‘নয়াদিল্লি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ফলে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চীনকে প্রমাণ করতে সাহায্য করবে যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং তারাই বেশি নির্ভরযোগ্য।’

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ও ভারত-চীন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইভান লিদারেভ বলেন, ভারত ও চীন উভয় দেশেই এখন উপলব্ধি করছে, দ্বিপক্ষীয় টানাপোড়েনের কারণে ভূরাজনীতিতে তারা অনেক কিছু হারিয়েছে।

লিদারেভ বলেন, ‘চীন বুঝতে পেরেছে, তারা ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অনেক বেশি ঠেলে দিয়েছে। আর নয়াদিল্লি বুঝতে পারছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার জন্য বড় মূল্য চোকানোর বাস্তবতা বয়ে এনেছে।’ লিদারেভের মতে, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে এশিয়াকেন্দ্রিক বাণিজ্য জোট গঠনের সুযোগ আরও বাড়বে, যা ওয়াশিংটন থেকে স্বাধীন থাকবে।’

তবে হাশমি সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতসহ অনেক দেশ সরবরাহ চেইনে ঝুঁকি কমাতে কোনো একক উৎসের ওপর অতি নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চীনের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কার্যকর জবাব না দিলে সেই চেষ্টার ফল আসবে না। ভারতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে এই চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে।

হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সম্পর্কে নমনীয়তা এলেও তা আমূল বদলে দেবে না। প্রতিযোগিতা ও সংঘাত থাকবেই। শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তাড়াহুড়া করবে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের ওপর নির্ভরশীলতাও বহাল থাকবে।’

গুরুত্ব হারাচ্ছে কোয়াড

জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকেই ওয়াশিংটনে ভারতকে চীনের গণতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বারাক ওবামার ‘এশিয়ামুখী’ বা ‘pivot to Asia’ নীতিতে বেইজিংয়ের উত্থান ঠেকাতে দিল্লিকে কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর সেটি আরও স্পষ্ট হয় কোয়াড গঠনের মাধ্যমে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।

ওয়াশিংটনের কাছে কোয়াড ছিল—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মূল কেন্দ্র। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ, সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলার ঢালা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের বাইরে থেকেও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতকে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ধারণার ওপর। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে, কিন্তু কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না, কিংবা অন্য শক্তির বিরুদ্ধে আদর্শিক শিবিরে দাঁড়াবে না।

তবুও ওয়াশিংটনে ধরে নেওয়া হচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি দিল্লি ও বেইজিংয়ের পুরোনো অবিশ্বাস ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে বড় কৌশলগত স্তম্ভে পরিণত করবে। ভারতকে পাশে রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো দিল্লির মস্কোর প্রতি ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব নিয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করেনি। বিগত অর্ধশত ধরে রাশিয়া ভারতের অন্যতম বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ধরে রাখে।

কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সমীকরণ পাল্টে দিতে চাচ্ছে। তিনি চান ভারত স্পষ্টভাবে একপক্ষ বেছে নিক। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক কাউন্সেলর পিটার নাভারো ১৮ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক অযৌক্তিকতার দিকে মূলত চোখ বন্ধ করে ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন সেটির মোকাবিলা করছে...যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চায়, তবে তাকে সেভাবে আচরণ করতে হবে।’

অন্যদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, দিল্লি তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ছাড়বে না। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) চায়না স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বি আর দীপক বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় একঘরে করার পরিকল্পনা কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যদি দিল্লি উন্নয়ন অর্থায়ন, বহুপক্ষীয় সংস্কার, ডি-ডলারাইজেশন বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী গণতন্ত্র-জোট গড়ার বয়ানকে দুর্বল করবে। এতে চীনের বিকল্প বৈশ্বিক শৃঙ্খলা গঠনের প্রচেষ্টায় বৈধতা যুক্ত হবে।’

দীপক আরও বলেন, বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হলে ভারত কোয়াডে প্রকাশ্যে চীনবিরোধী অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। তখন কোয়াড হয়তো কঠোরভাবে চীনের মোকাবিলা না করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নেওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক লিদারেভ বলেন, ভারত-চীন পুনর্মিলন কোয়াডের ভেতরে জটিলতা তৈরি করবে। এতে পারস্পরিক আস্থা ও উদ্দেশ্যের স্পষ্টতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দীপকের মতে, কোয়াডের ‘কৌশলগত গুরুত্ব’ একেবারেই শেষ হয়ে যাবে না। সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা, উদীয়মান প্রযুক্তি, জলবায়ু সহযোগিতা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো যৌথ লক্ষ্যে এর প্রাসঙ্গিকতা টিকে থাকবে।

হাশমি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্প প্রথম দফায় কোয়াড শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। অথচ এখন তাঁর পদক্ষেপই এর ঐক্যকে দুর্বল করছে। তিনি বলেন, আপাতত প্রেসিডেন্টের কাছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল অগ্রাধিকার বলে মনে হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি পাল্টালে যুক্তরাষ্ট্র একেবারে নতুন এক আঞ্চলিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। তখন ভারতকে কোনো চীনবিরোধী জোটে যুক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে।

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত