Ajker Patrika

টিকার আগে দৌড়াচ্ছে ভাইরাস

টিকার আগে দৌড়াচ্ছে ভাইরাস

ঢাকা: দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করে দেবে ধনী দেশগুলো। সদ্য সমাপ্ত জি–৭ সম্মেলনে এমন প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক দেরি করে ফেলেছেন তাঁরা। আর টিকার সংকট মেটাতে এটি মোটেও যথেষ্ট নয়। ব্যাপকভাবে টিকা প্রয়োগে ব্যর্থ দেশগুলোতে যেভাবে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটছে তাতে সহসাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। কারণ এসব দেশে টিকাদান কর্মসূচিকে ছাড়িয়ে গেছে ভাইরাসের বিস্তার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছে, কোভিড টিকা কর্মসূচির চেয়েও দ্রুত এগোচ্ছে করোনাভাইরাস। জি–৭ গ্রুপ সম্মেলনে যে ১০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেটিও টিকার সংকট মেটাতে যথেষ্ট নয়। এ নিয়ে সংস্থার প্রধান ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, এটি একটি বড় সহায়তা, কিন্তু আমাদের আরও প্রয়োজন। এখন বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ ব্যবস্থার চেয়ে মহামারি দ্রুত এগোচ্ছে।

গেব্রেয়াসুস বলেন, খুবই সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস যেসব দেশে প্রত্যেক দিন ১০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, সেখানে টিকা প্রয়োজন বেশি। তাঁদের এখনই টিকার দরকার। আগামী বছর নয়।

বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও সতর্ক করে বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোটের প্রতিশ্রুতি অনেক দেরিতে এসেছে। বরাদ্দও কম। বিশ্বের এখন ১ হাজার ১০০ কোটির বেশি ডোজ টিকা দরকার। অথচ জি–৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা শতকোটি ডোজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উন্নত দেশগুলোতে টিকা প্রয়োগের গতি প্রত্যাশা ছুঁয়েছে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোর অনেকে টিকা পায়নি। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, জি–৭ দেশগুলোতে দিনে ৭৩ ডোজ টিকা পেলে দরিদ্র দেশে পাচ্ছে একজন।

জি–৭ গ্রুপের প্রতিশ্রুত টিকার অনেকখানিই বিতরণ হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হলো কোভ্যাক্স। টিকা বিতরণে সমতা নিশ্চিত করতেই এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। কোভ্যাক্সের আওতায় এরই মধ্যে ১৩১টি দেশে ৮ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চাইছে, আগামী বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় জি–৭ সম্মেলনের আগেই বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে। এ নিয়ে সংস্থার প্রধান বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ১১০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। জি–৭ এবং জি–২০ গ্রুপ এটি বাস্তবায়ন করতে পারে।

এদিকে জি–৭ গ্রুপের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস। সংস্থাটির কর্মকর্তা হু ইউয়ান কিয়ং বলেন, অনুদানের প্রকৃত সংখ্যাটি সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করতে হবে। তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে কত সময় লাগবে এবং এর প্রভাব কী হবে সেটিও যাচাই করে দেখতে হবে।

বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ মহামারি নিয়ে লড়াই করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে জি–৭। সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক তদারকি বাড়িয়ে ১০০ দিনের কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরি এবং এর লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ নিয়ে জেনেভার গ্লোবাল হেলথ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চেয়ারম্যান ইলোনা কিকবাস বলেন, যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তাঁরা বরাদ্দ বাড়াবেন তখনই আমি এটি বিশ্বাস করব। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, টিকার সংকট মেটাতে পেটেন্ট উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।

এদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) করোনার টিকা এবং অন্যান্য মেডিকেল যন্ত্রপাতির মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ স্থগিত করার জন্য পুরোদমে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বৈষম্য নীতি বিভাগের প্রধান ম্যাক্স লসন বলেন, জি–৭ নেতারা বলেছেন যে, এই বছরের শেষ নাগাদ পুরো বিশ্বের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে চান তাঁরা। কিন্তু তাঁদের কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, তাঁরা একচেটিয়া ব্যবসা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট সংরক্ষণ করতেই বেশি আগ্রহী।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অরুণা কাশ্যপ বলেন, ভ্যাকসিন তৈরির জন্য শুধু দাতব্য সংস্থার অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয়। বৈশ্বিক মেধাস্বত্বে সাময়িকভাবে ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে জি–৭ নেতাদের সমর্থনই বুঝিয়ে দিচ্ছে বর্তমান অবস্থা কতটা মারাত্মক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এর সহযোগীরা করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে অর্থায়নের দিকে গুরুত্ব আরোপেরও আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভ্যাকসিন, চিকিৎসা এবং পরীক্ষার জন্য চলতি বছর আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। এটি বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের মাত্র ১ শতাংশ। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে এই ১ শতাংশ বহন করার সক্ষমতা রাখি। এতে অনেক মানুষের জীবন বেঁচে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...