আজকের পত্রিকা ডেস্ক
জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সশস্ত্র শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয় ১৯৫৬ সালে। গন্তব্য ছিল মিসরের সিনাই উপদ্বীপ ও গাজা উপত্যকা। সে সময় গাজাও মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মূলত, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল যৌথভাবে মিসরের সুয়েজ খালে আক্রমণ চালানোয় মধ্যস্থতাকারী বাহিনী হিসেবে জাতিসংঘের বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
আজ আবারও গাজায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলি নৃশংসতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ ৮০ তম সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় অনেকেই প্রশ্ন করছেন—জাতিসংঘ এখন গাজায় কী করতে পারে এবং কেন তারা আরও বেশি কিছু করছে না। সুয়েজ সংকটের সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি সঙ্গে সম্পূর্ণ একরকম না হলেও, জাতিসংঘের জরুরি বাহিনী মোতায়েনের অভিজ্ঞতা আজও শিক্ষা দেয়—জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আইন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ বলছেন, ‘এটি গণহত্যা।’ যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে গাজা যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের উদ্যোগে, সর্বশেষ শুক্রবারও। এসব প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য অবাধ সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
এর আগে, ১৯৫৬ সালেও নিরাপত্তা পরিষদ একইভাবে অচল হয়ে পড়েছিল। তখন আক্রমণকারী দুই দেশ—ব্রিটেন ও ফ্রান্স, যারা আবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য—ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। সেই অবস্থায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৫০ সালের ‘ইউনাইটিং ফর পিস’ প্রস্তাব কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটায় এবং শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে।
জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিরক্ষী মোতায়েন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা রাখে। তবে সাধারণ পরিষদও সঠিক সময়ে বিকল্প ভূমিকা রাখতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। সে বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ব্রিটিশ-ফরাসি-ইসরায়েলি আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন।
এ ছাড়া, জাতিসংঘে তখন ছিলেন এক সাহসী মহাসচিব—দাগ হ্যামারশোল্ড। তিনি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে তৎপর ছিলেন এবং তাঁদের রাজি করিয়েছিলেন শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে। মিসরও এই বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই গাজা সংকটকে আন্তর্জাতিকীকরণের পক্ষে নয়।
এই অবস্থায় ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘের উদ্যোগের আলোকে বর্তমানের জন্য মূল শিক্ষা হলো—জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটাতে পারে, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বুদ্ধিমত্তা থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত কার্যকারিতা নির্ভর করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপরেই।
গণহত্যা ঠেকানোর ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ইতিহাস খুবই বাজে। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ মার্টিন শ’ মিডল ইস্ট আই–কে বলেন, ‘এটি সর্বোচ্চ মাত্রায় মিশ্র একটি বিষয়।’ রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় গণহত্যার বিষয়টি জাতিসংঘ অনেক দেরিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে। রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কমান্ডার রোমিও ডালেয়ার বারবার সতর্ক করেছিলেন যে, গণহত্যা আসন্ন। কিন্তু জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আজ গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যে গর্ব করে বলেছেন, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ধ্বংস নতুন রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের পথ খুলে দিচ্ছে এবং গাজার পুনর্বাসন ঘটাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক জাতিসংঘের শীর্ষ তদন্ত সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে যে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট ও কর্তৃত্বপূর্ণ রায়। শ’ বলেন, এটি আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য গণহত্যা থেকে আলাদা। তিনি বলেন, ‘গাজার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ দেরি করছে না গণহত্যা স্বীকৃতিতে। বরং সমস্যা হলো যুক্তরাষ্ট্র কার্যত অংশগ্রহণ করছে—অস্ত্র দিয়ে, রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘ গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার দুটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, বড় কিংবা ছোট শক্তিধর দেশগুলো বিদেশে হস্তক্ষেপে অনিচ্ছুক থাকে। যেমন, ২০০০-এর দশকের শুরুতে দারফুরে সুদানি সরকার ও তাদের মিত্র জানজাওয়িদ অ-আরব জাতিগোষ্ঠীর ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই স্বীকার করেছিল যে গণহত্যা হচ্ছে—২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এরপর আগ্রহ হারায়। তারা হস্তক্ষেপে বাধা দেয়নি, কিন্তু সহায়তাও করেনি। এই অবস্থায় মনে হয়েছিল জাতিসংঘের জন্য এটি সঠিক সুযোগ। কিন্তু আফ্রিকান ইউনিয়ন ২০০৪ সালের শেষ দিকে কেবল কয়েকশ শান্তিরক্ষী পাঠায়। আর জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিক মিশন অনুমোদন দেয় ২০০৬ সালে, যখন হত্যাযজ্ঞ প্রায় থেমে আসছিল।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দ্রা নোভোসেলফ বলেন, ‘ব্যর্থ হয় জাতিসংঘ নয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলো। জাতিসংঘের হাতে নানা বিকল্প আছে—নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য ইচ্ছুক দেশগুলোকে নিয়ে জোট করতে পারে।’ কিন্তু সদস্য দেশগুলো যদি একমত না হতে পারে তাহলে কোনো
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের হামলা যতই বাড়ছে, বিশেষ করে গাজা সিটিতে ধ্বংসাত্মক আক্রমণের মধ্যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আগামী সপ্তাহে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন নিয়ে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগ। তাঁরা চান সদস্য রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিক।
নোভোসেলফ বলেন, ‘অবশ্যই গাজার বিষয়ে পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভেটো হুমকির কারণে। কিন্তু সাধারণ পরিষদও আছে। এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ওঠেনি। সাধারণ পরিষদ বিভক্ত।’
ইতিহাস বলে, বড় শক্তিধর দেশগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া গণহত্যায় জাতিসংঘের কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন। বসনিয়ার উদাহরণেই দেখা যায়। ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা হত্যাযজ্ঞের পর যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে। জাতিসংঘ তখন সার্বিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, কিন্তু মুসলিম বসনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারেনি।
পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বসনিয়ান মুসলিম ও ক্রোয়াট খ্রিষ্টানদের অস্ত্র দেওয়া শুরু করে। তারপর ন্যাটো জোট সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ম্যান্ডেট ব্যবহার করে। কাটো ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ডগ ব্যান্ডো বলেন, গাজায় দায় জাতিসংঘের নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। তারা রুয়ান্ডার গণহত্যা ঠেকাতে পারেনি, সুদানের হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে পারেনি, লাইবেরিয়ার গণহত্যাও ঠেকাতে পারেনি। তাই গাজাতেও ঠেকাতে পারবে না।’
ব্যান্ডোর মতে, ‘গাজার জন্য প্রায় পুরো দায় যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখে, অন্যদিকে জাতিসংঘকে কার্যকর হতে বাধা দেয়।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সশস্ত্র শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয় ১৯৫৬ সালে। গন্তব্য ছিল মিসরের সিনাই উপদ্বীপ ও গাজা উপত্যকা। সে সময় গাজাও মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মূলত, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল যৌথভাবে মিসরের সুয়েজ খালে আক্রমণ চালানোয় মধ্যস্থতাকারী বাহিনী হিসেবে জাতিসংঘের বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
আজ আবারও গাজায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলি নৃশংসতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ ৮০ তম সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় অনেকেই প্রশ্ন করছেন—জাতিসংঘ এখন গাজায় কী করতে পারে এবং কেন তারা আরও বেশি কিছু করছে না। সুয়েজ সংকটের সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি সঙ্গে সম্পূর্ণ একরকম না হলেও, জাতিসংঘের জরুরি বাহিনী মোতায়েনের অভিজ্ঞতা আজও শিক্ষা দেয়—জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আইন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ বলছেন, ‘এটি গণহত্যা।’ যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে গাজা যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের উদ্যোগে, সর্বশেষ শুক্রবারও। এসব প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য অবাধ সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
এর আগে, ১৯৫৬ সালেও নিরাপত্তা পরিষদ একইভাবে অচল হয়ে পড়েছিল। তখন আক্রমণকারী দুই দেশ—ব্রিটেন ও ফ্রান্স, যারা আবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য—ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। সেই অবস্থায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৫০ সালের ‘ইউনাইটিং ফর পিস’ প্রস্তাব কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটায় এবং শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে।
জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিরক্ষী মোতায়েন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা রাখে। তবে সাধারণ পরিষদও সঠিক সময়ে বিকল্প ভূমিকা রাখতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। সে বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ব্রিটিশ-ফরাসি-ইসরায়েলি আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন।
এ ছাড়া, জাতিসংঘে তখন ছিলেন এক সাহসী মহাসচিব—দাগ হ্যামারশোল্ড। তিনি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে তৎপর ছিলেন এবং তাঁদের রাজি করিয়েছিলেন শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে। মিসরও এই বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই গাজা সংকটকে আন্তর্জাতিকীকরণের পক্ষে নয়।
এই অবস্থায় ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘের উদ্যোগের আলোকে বর্তমানের জন্য মূল শিক্ষা হলো—জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটাতে পারে, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বুদ্ধিমত্তা থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত কার্যকারিতা নির্ভর করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপরেই।
গণহত্যা ঠেকানোর ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ইতিহাস খুবই বাজে। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ মার্টিন শ’ মিডল ইস্ট আই–কে বলেন, ‘এটি সর্বোচ্চ মাত্রায় মিশ্র একটি বিষয়।’ রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় গণহত্যার বিষয়টি জাতিসংঘ অনেক দেরিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে। রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কমান্ডার রোমিও ডালেয়ার বারবার সতর্ক করেছিলেন যে, গণহত্যা আসন্ন। কিন্তু জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আজ গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যে গর্ব করে বলেছেন, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ধ্বংস নতুন রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের পথ খুলে দিচ্ছে এবং গাজার পুনর্বাসন ঘটাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক জাতিসংঘের শীর্ষ তদন্ত সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে যে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট ও কর্তৃত্বপূর্ণ রায়। শ’ বলেন, এটি আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য গণহত্যা থেকে আলাদা। তিনি বলেন, ‘গাজার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ দেরি করছে না গণহত্যা স্বীকৃতিতে। বরং সমস্যা হলো যুক্তরাষ্ট্র কার্যত অংশগ্রহণ করছে—অস্ত্র দিয়ে, রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘ গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার দুটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, বড় কিংবা ছোট শক্তিধর দেশগুলো বিদেশে হস্তক্ষেপে অনিচ্ছুক থাকে। যেমন, ২০০০-এর দশকের শুরুতে দারফুরে সুদানি সরকার ও তাদের মিত্র জানজাওয়িদ অ-আরব জাতিগোষ্ঠীর ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই স্বীকার করেছিল যে গণহত্যা হচ্ছে—২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এরপর আগ্রহ হারায়। তারা হস্তক্ষেপে বাধা দেয়নি, কিন্তু সহায়তাও করেনি। এই অবস্থায় মনে হয়েছিল জাতিসংঘের জন্য এটি সঠিক সুযোগ। কিন্তু আফ্রিকান ইউনিয়ন ২০০৪ সালের শেষ দিকে কেবল কয়েকশ শান্তিরক্ষী পাঠায়। আর জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিক মিশন অনুমোদন দেয় ২০০৬ সালে, যখন হত্যাযজ্ঞ প্রায় থেমে আসছিল।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দ্রা নোভোসেলফ বলেন, ‘ব্যর্থ হয় জাতিসংঘ নয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলো। জাতিসংঘের হাতে নানা বিকল্প আছে—নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য ইচ্ছুক দেশগুলোকে নিয়ে জোট করতে পারে।’ কিন্তু সদস্য দেশগুলো যদি একমত না হতে পারে তাহলে কোনো
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের হামলা যতই বাড়ছে, বিশেষ করে গাজা সিটিতে ধ্বংসাত্মক আক্রমণের মধ্যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আগামী সপ্তাহে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন নিয়ে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগ। তাঁরা চান সদস্য রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিক।
নোভোসেলফ বলেন, ‘অবশ্যই গাজার বিষয়ে পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভেটো হুমকির কারণে। কিন্তু সাধারণ পরিষদও আছে। এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ওঠেনি। সাধারণ পরিষদ বিভক্ত।’
ইতিহাস বলে, বড় শক্তিধর দেশগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া গণহত্যায় জাতিসংঘের কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন। বসনিয়ার উদাহরণেই দেখা যায়। ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা হত্যাযজ্ঞের পর যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে। জাতিসংঘ তখন সার্বিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, কিন্তু মুসলিম বসনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারেনি।
পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বসনিয়ান মুসলিম ও ক্রোয়াট খ্রিষ্টানদের অস্ত্র দেওয়া শুরু করে। তারপর ন্যাটো জোট সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ম্যান্ডেট ব্যবহার করে। কাটো ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ডগ ব্যান্ডো বলেন, গাজায় দায় জাতিসংঘের নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। তারা রুয়ান্ডার গণহত্যা ঠেকাতে পারেনি, সুদানের হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে পারেনি, লাইবেরিয়ার গণহত্যাও ঠেকাতে পারেনি। তাই গাজাতেও ঠেকাতে পারবে না।’
ব্যান্ডোর মতে, ‘গাজার জন্য প্রায় পুরো দায় যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখে, অন্যদিকে জাতিসংঘকে কার্যকর হতে বাধা দেয়।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
সপ্তাহ খানেক আগেই ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ‘প্রধান মিত্র’ কাতারে হামলা চালায়। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলপন্থী ভাষ্যকারেরা হঠাৎ নজর ঘুরিয়ে নেন তুরস্কের দিকে। ওয়াশিংটনে ডানপন্থী থিংক ট্যাংক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন মন্তব্য করেন,
২ ঘণ্টা আগেআফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান প্রশাসনের ‘শরিয়াহ বিরোধী’ বই নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যমে ‘শুধু নারীদের লেখা বই’ নিষিদ্ধের খবর এলেও প্রকৃতপক্ষে নিষিদ্ধ বইয়ের অধিকাংশই পুরুষদের লেখা। তালেবান মূলত সালাফি মতবাদ ঘনিষ্ঠ বই-পুস্তক নিষিদ্ধে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও তারা
১ দিন আগেএ চুক্তি এমন এক সময় স্বাক্ষরিত হলো, যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। গাজায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং প্রায়শই প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরায়েলের হামলা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২ দিন আগেমার্কিন ইতিহাসবিদ ও ‘অ্যান্টিফা: দ্য অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট হ্যান্ডবুক’ বইয়ের লেখক মার্ক ব্রে বলেন, অ্যান্টিফা একটি রাজনৈতিক আদর্শ, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যেমন—নারীবাদী গোষ্ঠী আছে, কিন্তু নারীবাদ নিজে কোনো গোষ্ঠী নয়। যেকোনো গোষ্ঠী, যারা নিজেদের অ্যান্টিফা বলে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী
৩ দিন আগে