Ajker Patrika

ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছি—ট্রাম্পের এ দাবি কতটুকু সত্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করছেন না, বরং তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত ছয়টি যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছেন। গত সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ছয়টি যুদ্ধ শেষ করেছি। ভারত-পাকিস্তানসহ আরও বড় বড় জায়গার যুদ্ধ থামিয়েছি।’

হোয়াইট হাউসও এক বিবৃতিতে ট্রাম্পকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, ইসরায়েল-ইরান, ভারত-পাকিস্তান, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর মধ্যে সমঝোতা করিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর প্রথম মেয়াদে সই হওয়া ইসরায়েল-আরব রাষ্ট্রগুলোর আব্রাহাম চুক্তিকেও এতে যুক্ত করা হয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্পের এসব দাবি কতটা সত্য? অতিরঞ্জিত নাকি বাস্তব সাফল্য? বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এ বক্তব্য অনেকটাই অতিরঞ্জিত। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো স্থায়ী শান্তি চুক্তি নয়, বরং সাময়িক যুদ্ধবিরতি। যেমন—ইরান-ইসরায়েলের ক্ষেত্রে এখনো প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একইভাবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের সময়েই আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে একটি শান্তি ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়েছে, তবে সাংবিধানিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে জটিল আলোচনা এখনো বাকি। এটি সম্পূর্ণ শান্তি চুক্তি নয়।

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, তিনি গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ থামিয়েছেন, তবে এটি একটি ভঙ্গুর চুক্তি। ভারত ওয়াশিংটনের মূল ভূমিকা পালনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, চুক্তিটি কাশ্মীর নিয়ে মূল বিরোধের সমাধান করেনি, যা তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কারণ হয়েছে।

ট্রাম্পের সময়ে রুয়ান্ডা-কঙ্গো সীমান্ত স্বীকৃতি ও মিলিশিয়াদের নিরস্ত্র করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে মূল রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করায় সংঘাতের দ্রুত অবসানের সম্ভাবনা নেই।

ট্রাম্প নীল নদের একটি বাঁধ নিয়ে বিরোধ মিসর-ইথিওপিয়ার মধ্যে মীমাংসার কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো বাধ্যতামূলক চুক্তি এখনো হয়নি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সার্বিয়া-কসোভো অর্থনৈতিক স্বাভাবিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কসোভো সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার ১৭ বছর পরেও তাদের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ট্রাম্প যা করেছেন সেটা কেবল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা প্রাথমিক সমঝোতা, স্থায়ী শান্তি নয়। তবে একেবারে হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্রে তিনি কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। যেমন—ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘাত প্রশমনে তাঁর মধ্যস্থতা সহায়ক হয়েছে, যদিও ভারত ট্রাম্পের এ ভূমিকা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। এ ছাড়া আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ থামাতেও ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ছিল।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ। এর একটি বড় প্রমাণ ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। ট্রাম্পের দাবি, তিনি এ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি ফরেন পলিসির একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সম্ভবত চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে ইরানের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ শুরু করবে। এমনও হতে পারে, হয়তো চলতি আগস্টের শেষে এ যুদ্ধ শুরু করতে পারে তেল আবিব। ইরানও এমন আক্রমণের আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে আসলে শান্তিচুক্তি হয়নি। এটি কেবল একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়েছে।

ট্রাম্প স্পষ্টতই এসব সাফল্যকে সামনে এনে নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন দাবি ‘ক্লাসিক ট্রাম্পিয়ান হাইপারবোল’ বা অতিশয়োক্তি। তাঁর দল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য দ্রুত জয় তুলে নিতে বিশ্বজুড়ে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করছে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত থেকে শুরু করে পাকিস্তানও তাঁকে শান্তির নায়ক হিসেবে প্রশংসা করেছে।

তবে সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প অনেক ক্ষেত্রে শুধু অস্থায়ী সমাধান করেছেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেননি। কসোভো-সার্বিয়া, মিসর-ইথিওপিয়া কিংবা রুয়ান্ডা-কঙ্গোর মতো জায়গায় এখনো গভীর সমস্যা রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সর্বশেষ ইউক্রেন নিয়েও কি ট্রাম্প একইভাবে অস্থায়ী কোনো ডিল করবেন, না দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে হাঁটবেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের যৌন সহিংসতার প্রসঙ্গ জাতিসংঘে তুললেন ভারতীয় দূত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত