Ajker Patrika

স্মরণ

দস্যু বনহুর, অন্তরালে রোমেনা আফাজ

গনেশ দাস, বগুড়া 
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১৫: ৩৯
রোমেনা আফাজ পাঠাগার। ছবি: সংগৃহীত
রোমেনা আফাজ পাঠাগার। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার একটি সড়কের নাম রোমেনা আফাজ সড়ক। কে এই রোমেনা আফাজ? এ যুগের মানুষ তাঁকে খুব একটা না চিনলেও ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন এবং যাঁদের ‘আউট বই’ পড়ার অভ্যাস ছিল, তাঁরা ঠিকই চেনেন তাঁকে।

‘ধ্বংস পাহাড়’ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজ প্রকাশ শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে। ‘দস্যু বনহুর’ সিরিজের প্রথম প্রকাশ তার এক বছর আগে, ১৯৬৫ সালে। এই সিরিজ লিখেছিলেন রোমেনা আফাজ।

১৩৮টি বইয়ের জনপ্রিয় সিরিজ ছিল সেটি। একদিকে মাসুদ রানার দাপট, অন্যদিকে দস্যু বনহুরের রোমাঞ্চকর ডাকাতির কাহিনি সে সময় বাংলা ভাষার পাঠকদের রোমাঞ্চিত করে রেখেছিল। এই বিপুল জনপ্রিয়তার পরেও যেন অন্তরালে চলে গেছেন তিনি। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিন নীরবে কেটে যায়। দস্যু বনহুরের মতো জনপ্রিয় সিরিজই তিনি লেখেননি; লিখেছিলেন উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতাসহ আড়াই শ বই। দস্যু বনহুর সিরিজ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।

এ ছাড়া তিনি লিখেছিলেন ১২ পর্বের ‘দস্যুরানী’ সিরিজ। এই সিরিজের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। নাম ‘রক্তে আঁকা ম্যাপ’। এটি তাঁর সাহিত্যিক জীবনেরও প্রথম বই। বগুড়ার ‘সাহিত্য কুঠির’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা সেই বই প্রকাশ করেছিল।

শুধু কি তাই? রোমেনা আফাজের লেখা উপন্যাস থেকে তৈরি করা হয়েছিল ছয়টি চলচ্চিত্র। সেগুলো হলো ‘কাগজের নৌকা’, ‘মোমের আলো’, ‘মায়ার সংসার’, ‘মধুমিতা’, ‘মাটির মানুষ’ ও ‘দস্যু বনহুর’। বাংলা ভাষার কোনো নারী লেখকের জীবনে সম্ভবত এতটা জনপ্রিয়তা কখনো আসেনি।

পুলিশ অফিসার বাবার পেশাগত অভিজ্ঞতা শুনে ক্রাইম ফিকশন ও থ্রিলার লেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রোমেনা খাতুন খুকি।

‘দস্যু বনহুর’। ছবি: সংগৃহীত
‘দস্যু বনহুর’। ছবি: সংগৃহীত

কাজেম উদ্দিন ও আছিয়া খাতুন দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান হিসেবে রোমেনা আফাজ জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর, বগুড়ার শেরপুরে। ব্রিটিশ ভারতে কাজেম উদ্দিন কলকাতার একটি থানায় পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করতেন। ৯ বছর বয়সে রোমেনার লেখা ‘বাংলার চাষী’ নামের একটি ছড়া প্রকাশিত হয় কলকাতার ‘মোহাম্মদী’ পত্রিকায়। সেই শুরু। পরিণত বয়সে তিনি লিখে গেছেন অসংখ্য বই। ১১-১২ বছর বয়সে তিনি বাবার সঙ্গে চলে আসেন বগুড়ার শেরপুরে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এখনকার শাজাহানপুর থানার ফুলকোর্ট গ্রামের চিকিৎসক আফাজ উল্লাহর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রোমেনা। বিয়ের পর তাঁর নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যোগ করে তিনি পরিচিতি পান রোমেনা আফাজ নামে। ১৯৬০ সালের দিকে স্বামীর সঙ্গে তিনি চলে আসেন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায়। সেই বাড়িতে প্রায় ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ১২ জুন মারা যান তিনি।

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় রোমেনা আফাজের বাড়িতে এখন কেউ বসবাস করেন না। সাত ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন অনেক আগে। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের মধ্যে ছোট ছেলে মন্তেজার রহমান আঞ্জু বগুড়া শহরে বসবাস করেন। অন্য ছেলেমেয়েদের কেউ কানাডা, কেউ আমেরিকায় প্রবাসজীবন কাটাচ্ছেন।

রোমেনা আফাজের নাতনি উম্মে ফাতেমা লিসা জানান, বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার বাড়িটি ‘রোমেনা আফাজ স্মৃতিঘর’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে বই ছাড়াও রোমেনার ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত হয়েছে। তবে বছরখানেক আগে বগুড়া জেলা পরিষদের সহযোগিতায় পাঠাগারটি আলতাফুনেচ্ছা খেলার মাঠসংলগ্ন একটি ক্লাবে স্থানান্তর করা হয়। বগুড়া পৌরসভা রোমেনা আফাজের সম্মানে তাঁর বাড়ির সামনের সড়কটির নামকরণ করে ‘রোমেনা আফাজ সড়ক’ হিসেবে।

২০১০ সালে রোমেনা আফাজ স্বাধীনতা পুরস্কার পান। এর বাইরে জীবদ্দশায় ২৭টি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

‘আমেরিকা যুদ্ধে জড়ালে ইরানের হাতে অনেক বিকল্প আছে’

‘ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যায় নয়, গুণে বিশ্বাসী ইরান, ইসরায়েল এবার আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখবে’

আরেকটি ‘সাইকস-পিকট তন্ত্র’ মানব না, কিসের হুঁশিয়ারি দিলেন এরদোয়ান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত