নৈতিকতা

হজ আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন। পার্থিব বিলাসিতা-জৌলুশ থেকে মুক্ত হয়ে এক জোড়া সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে বায়তুল্লাহ থেকে সাফা-মারওয়া, আরাফাতের ময়দান থেকে মিনা-মুজদালিফায় উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানোই হজের প্রধান নির্দেশনা।

মানবসন্তান নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিভিন্নভাবে সম্পদ জমা করে। তারা বৈধ ও অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে। কিন্তু যারা এ সম্পদ জমা করে, তারা তা ভোগ করতে পারে না।

আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ কেটেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়।

বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা ধরন। এসবের কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। অসহায় হয়ে পড়ে বিপদগ্রস্ত মানুষেরা। কোরআনের ভাষায়, এসব মহান আল্লাহর পরীক্ষা।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সব নবী-রাসুলের নেতা ও সর্দার। সারা বিশ্বের মুমিন মুসলমানরা তাঁর উম্মত। উম্মত হিসেবে আমাদের তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’

হজ ব্যক্তিগত আর্থিক ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ করা হয়। এর আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অপরিসীম। হজের সময়টি এমন এক মৌসুম, যার আগমনে গোটা মুসলিম উম্মাহ নতুন প্রত্যয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

হিজরি সনের একাদশ মাস জিলকদ। কোরআনে বর্ণিত সম্মানিত চার মাসের একটি। আরবি ‘জুলকাআদাহ’ শব্দ থেকেই জিলকদ শব্দটি এসেছে। এর অর্থ বসা, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি।

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যখন মানুষ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন তা সমাধানকল্পে পরিবারের সদস্য অথবা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হয়। আর তাঁরা সাধ্যানুযায়ী তা সমাধানের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মেহমানদারি অনুপম মানবিক গুণাবলির একটি। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও পরবর্তী নবীদের সুন্নত এটি। আমাদের মহানবী (সা.) ছিলেন অতিথিপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক সাহাবি মেহমানকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়ানোর জন্য চেরাগের সলতে ঠিক করার অজুহাতে তা নিভিয়ে দিয়েছিলেন, যেন নিজে না খেয়ে মেহমানকে খাওয়াতে পারেন; কারণ খাবার ছিল

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সর্বোত্তম মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উপভোগের জন্য জানা-অজানা অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। প্রথমত, মানুষ যদি নিজের দেহ নিয়ে চিন্তা করে এবং তার দুই চোখ দিয়ে যত কিছু দেখতে পায় তা নিয়ে গবেষণা করে, তবে তারা কোনোভাবেই আল্লাহ তাআলার প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারে না।

আল্লাহর বিধান নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ ইত্যাদি মানলে যেমন তা ইবাদত হবে, তেমনি মানুষের সেবা করলে তা-ও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর যথাযথ সওয়াব পাওয়া যাবে।

মানবিক গুণসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ধৈর্য ও সহনশীলতা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় রোধে ধৈর্য ও সহনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম।

জীবনসংগ্রাম করাই মানুষের বৈশিষ্ট্য। এ সংগ্রামে কেউ জয়লাভ করে সুখী হয়, আবার কেউ পরাজিত হয়ে দুঃখ পায়। মানবজীবনে সুখ-দুঃখ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তবে দুঃখ-সুখ কারও জীবনে চিরস্থায়ী নয়।

তওবা অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। পরিভাষায় কোনো পাপকাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসাকে তওবা বলে। মানবজীবনে তওবার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তওবার মাধ্যমেই কেবল আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।

জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। জাকাতের অর্থ বৃদ্ধি হওয়া ও পবিত্র করা। পরিভাষায়, জীবনযাত্রা নির্বাহের পর কারও কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিক্রম করলে ওই সম্পদ থেকে আড়াই শতাংশ হারে অর্থ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে দেওয়াকে জাকাত বলে।

সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। সালামের মাধ্যমে মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। সালাম ইসলামের নিদর্শন। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।

মানবজীবনে বিনয়-নম্রতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নম্রতা সহজেই বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দূর করে। তাই ইসলাম মানুষকে নম্র আচরণের প্রতি উৎসাহিত করে। নম্র আচরণের জন্য আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-এর প্রশংসা করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন।