Ajker Patrika

বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়তে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান সিপিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে সিপিবির কংগ্রেসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে সিপিবির কংগ্রেসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় শোষণ ও বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি তাদের ত্রয়োদশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

আজ রোববার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে কংগ্রেসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে এ রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। তিনি জানান, রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে—রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে লেনিনীয় নীতি অনুসরণ করে পার্টিকে সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বিপ্লবী ধারার শক্তিশালী গণসংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি নির্বাচনী সংগ্রামের জন্য সিপিবিকে দক্ষ ও উপযুক্ত করে তুলতে হবে। দেশে লুটেরা বুর্জোয়া ধারার মেরুকরণের বাইরে একটি বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে শক্তির ভারসাম্য নিয়ে আসার ঐতিহাসিক প্রয়োজন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

রাজনৈতিক প্রস্তাবে আরও বলা হয়, লুটেরা শাসকশ্রেণিকে পরাজিত করে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক জনগণের অনুকূলে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন না হলে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির প্রগতিমুখী মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এর জন্য সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করা দরকার। তাই এই পরিবর্তনকে সব সময়ের জন্য মূল কাজ ও সংগ্রাম হিসেবে গণ্য করতে হবে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশবাসীর সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার আলোকে গণমুখী, প্রগতিশীল, জাতীয় স্বার্থের অনুকূল, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও বিপ্লবী ধারার বিকল্প কর্মসূচি উত্থাপন ও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।

সাম্প্রদায়িকতা, সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপদ, রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করার চেষ্টা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টাকে গুরুতর বিপদ হিসেবে উল্লেখ করে সিপিবিকে এসব বিপদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে আপসহীন, দায়িত্বশীল ও নেতৃত্বের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়, কমিউনিস্ট পার্টি সব দেশপ্রেমিক জনগণকে পুঁজিবাদের নিষ্ঠুর শোষণ ও অপশাসন, গণতন্ত্রের পথে বাধা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুটি-রুজি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের দাবি আদায়ের জন্য ব্যবস্থা বদলের জন্য বিভিন্ন দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত হয়ে তীব্র গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

সমাজকে বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যেতে হলে গুণগত ও পরিমাণগত দিক থেকে শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পিত কর্মকৌশল গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হবে।

কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির জাগরণ এবং উত্থান ঘটানোর এই প্রচেষ্টায় শামিল হতে দলটি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক প্রস্তাবের ওপর সারা দেশের ৪৫ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন এবং এরপর প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।

দলটির নেতারা আরও জানান, রাজনৈতিক প্রস্তাবের পর গঠনতন্ত্র সংশোধন, ক্রেডেনশিয়াল রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন, অডিট কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন এবং কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন করা হবে। আগামীকাল সোমবার সব রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন শেষে কন্ট্রোল কমিশন, কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত