Ajker Patrika

শুধু চলা নয়, থামতেও জানতে হয়

সম্পাদকীয়
শুধু চলা নয়, থামতেও জানতে হয়

চলার নামই নাকি জীবন। স্থবিরতা বা স্থিরতা কিংবা গতিহীনতা কেউ চায় না। কারণ তাতে বেঁচে থাকার পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে থামতে হয়। বিরতিহীন চলা নানা কারণেই ক্ষতিকর। থামা থেকেই চলার শক্তি আসে।

আমরা দুই পায়ে হাঁটি। দুটি পা যদি একসঙ্গে ফেলি, তবে হাঁটা হবে না— লাফালাফি হবে, বেশি দূর যাওয়া যাবে না। বাঁ পা থামিয়ে, ডান পা ফেলতে হয়। ডান পা চলার শক্তি পায়, থেমে থাকা বাঁ পা থেকে।

তাই এটা বলা যায় যে শক্তির উৎস হলো থামা। মানুষের মন জলের মতো। জল থামলে স্বচ্ছ হয়। মনও থামলে স্বচ্ছ হয়। থেমে থাকা জলে ঢিল দিলে প্রান্ত পর্যন্ত তরঙ্গ ছড়িয়ে যায়। স্রোতের মধ্যে ঢিল দিলে বোঝাই যায় না! মনও এমনই।

মনের শক্তি অনেক। কিন্তু থামার শক্তি অনন্ত। মনের চলা তো শুরু হয় থামতে পারার সামর্থ্য অর্জনের পর থেকে। থামা মানে একেবারে থেমে থাকা নয়, কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এবং তারপর আবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতে শুরু করা। ‘থামতে পারি’ মানে লক্ষ্য অতি নিকটে।

থামা মানেই হলো নীরবতার প্রতি সমর্পণ। এক শিক্ষাগুরু তাঁর শিষ্যদের থামতে শেখাতেন। হয়তো নাচগান হচ্ছে, হঠাৎ তিনি বলতেন ‘থামো’! যে যেভাবে আছে, সেভাবে থেমে যেত। কিছুক্ষণ পর আবার বলতেন ‘আরম্ভ’। সঙ্গে সঙ্গে আবার নাচগান শুরু হতো। এতে ছন্দপতন হতো না, আসলে নতুন ছন্দ তৈরি হতো। অনুসারী বা শিষ্যদের নিয়ে চলার পথে তিনি প্রতিনিয়ত কিন্তু হঠাৎ ‘থামা’র অনুশীলন করতেন।

নিজে থামার মাধ্যমে আমরা থামিয়ে দিতে পারি পুরো জগৎ। জ্ঞানপ্রাপ্তির সময় নাকি জগৎ থেমে যায়। হাঁটছি পথ ধরে। হঠাৎ ঝাঁকি দিয়ে থেমে যাই। দৌড়াচ্ছি, হঠাৎ থেমে যাই। কথা বলছি, হঠাৎ থেমে যাই। গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে যেমন ঝাঁকি লাগে, তেমনি হঠাৎ চলা থামিয়ে দিলে মনেও একটা ঝাঁকি লাগে। ধীরে ধীরে থামলে মন থামার জন্য প্রস্তুতি নেয়। হঠাৎ থেমে গেলে ‘মন’ও থেমে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর যদি কখনো মন থেমে যায়, তবে থেমে যাবে জগৎ।

থামা নিয়ে এত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, আমরা দেখছি—কিছু মানুষ শুরু করতে জানেন, কিন্তু থামতে জানেন না। তাঁদের চলার বেপরোয়া গতি অন্যের ক্ষতির কারণ হলেও তাঁরা থামতে চান না। কোনো কিছুতেই সীমা লঙ্ঘন করা উচিত নয়। সীমা ছাড়ালে বা বাড়াবাড়ি করলে সেটা শুধু নিজের জন্যই খারাপ হয় না, অন্যেরও বিপদ-বিপাকের কারণ হতে পারে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—
“শেষ কহে, ‘একদিন সব শেষ হবে,
হে আরম্ভ, বৃথা তব অহংকার তবে।’
আরম্ভ কহিল, ‘ভাই, যেথা শেষ হয়
সেইখানে পুনরায় আরম্ভ-উদয়।’”
চলা এবং থামা, আরম্ভ এবং শেষের এই চক্র অনুসরণ করতে পারা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত