আলম শাইন
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। আয়তন ১২৬ বর্গকিলোমিটার। হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায়। এই হাওর শুধু মিঠাপানির জলাভূমিই নয়; নয়নাভিরাম এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎসস্থল এই হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর কৃষিজ সম্পদ, মৎস্য আহরণ এবং পর্যটন খাতকে ঘিরে এলাকার সমাজ ব্যবস্থাপনাকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে। বিশেষ করে বর্ষার আগমনে হাওরে জলপ্লাবিত হলে মৎস্য আহরণের পাশাপাশি পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। পর্যটকেরা জলচর পাখির কলকাকলি আর হাওরের বুকে সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি দেখতে ছুটে আসেন দেশের দূরদূরান্ত থেকে, সে সুবাদে তাঁরা রাতযাপনও করেন হাউসবোটে। ফলে অতিরিক্ত চাপে হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এতে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে এবং স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক বিপর্যয়।
টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট বা ভাসমান রিসোর্ট পর্যটকদের জন্য একধরনের অভিনব আকর্ষণ। আধুনিক পর্যটনের এই আকর্ষণকে কেন্দ্র করেই হাউসবোটের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলছে হাওরের বুকে। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এই ধরনের যান্ত্রিক জলযানের উপস্থিতি অশুভ ইঙ্গিত বহন করে, যা সর্বসাধারণ বুঝতে সক্ষম হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টা বুঝলেও নগদ প্রাপ্তির কারণে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ততটা মাথা ঘামান না।
হাউসবোট চালুর পরে পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলেও টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রেক্ষাপটে ইকোসিস্টেম ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পরিবেশবাদীদের কাছে আধুনিক বিনোদনের ছদ্মবেশে বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে ধরা দিচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর একটি সংরক্ষিত এলাকা; ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রথম ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে এই হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রামসার কনভেনশনের আওতায় ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ইচ্ছে করলেও জনসাধারণ বা পর্যটক এখানে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন না; অথচ টাঙ্গুয়ায় ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীতটা। ডিজেলচালিত ইঞ্জিন, উচ্চ শব্দের জেনারেটর, গানবাজনা, বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা এবং মানব বর্জ্যের নিঃসরণ—সব মিলিয়ে হাউসবোটগুলো এক ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। যার প্রভাবে শুধু পানির গুণমান বা মাছের প্রজননেই বিঘ্ন ঘটছে না, হুমকির মুখে পড়েছে পরিযায়ী পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র।
টাঙ্গুয়া নিয়ে আইইউসিএন-এর ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, হাওরে ১৩৪ প্রজাতির মাছ, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২১৯ প্রজাতির দেশি ও বিদেশি পরিযায়ী পাখি, ২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ১০৪ প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার ছিল, যা বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখির সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৭৪টি। ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবসহ, প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন, ওয়ার্ল্ড বার্ড মনিটরিং ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত পাখিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪৯ প্রজাতির ৪৩ হাজার ৫১৬টি পাখির বিচরণ লক্ষ করেন। ওই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৭৭ শতাংশ দেশি ও পরিযায়ী পাখি এখন আর হাওরের ধারেকাছেও আসছে না। এতে করে আমরা হাওরের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের ইঙ্গিত পাচ্ছি।
আসলে পর্যটন খাতকে উৎসাহিত ও লাভবান করতে গিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরকে গলা টিপে ধরেছে সংশ্লিষ্টরা; ফলে হাওরের প্রাণপ্রদীপ এখন নিবু নিবু করছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে মৌসুমে হাওরে প্রতিদিন অবাধে দুই শতাধিক হাউসবোট চলাফেরা করছে। তাতে জেনারেটরের উচ্চ শব্দ, গানবাজনা এবং পর্যটকদের ব্যবহৃত পলিথিনসহ নানান বর্জ্য যত্রতত্র অপসারণের ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক সংকটে পড়েছে। অথচ টাঙ্গুয়ার হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা; তথাপিও অবাধে যাতায়াত করছে যান্ত্রিক জলযান; আর এরই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাউসবোট। যার ফলে উচ্চ শব্দের গানবাজনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের তীরবর্তী এলাকার মানুষজন এবং জলচর পাখিরা। এলাকার মানুষ কষ্টেসৃষ্টে বসবাস করলেও পাখিরা তা মানিয়ে নিতে পারছে না। ওরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাওর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে; তাতে হাওর এখন প্রায় পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মাছের অবস্থাও করুণ; ইঞ্জিনের পাখার ঘূর্ণায়নে ছোট মাছ ও রেণু পোনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের উৎপাদনও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় জেলেদের জীবন-জীবিকায়ও।
এ ছাড়া হাওরের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বলা যায়, অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাউসবোট চলাচলের ফলে হাওরের পরিবেশব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। বিষয়টা প্রশাসনের নজরে এলে সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাউসবোটের ওপর নীতিমালা তৈরি করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবু বোট ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করা সম্ভব হয়নি; আগের মতোই উচ্চ শব্দে গানবাজনা বাজিয়ে হাওরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি মানব বর্জ্য, পলিথিন ও অন্যান্য প্লাস্টিকসামগ্রী যত্রতত্র ফেলছেন। তাতে ক্রমেই টাঙ্গুয়ার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
এ ছাড়া বোটের ভেতরে মাদক সেবনের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন কিছু তরুণ পর্যটক। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বয়স্করা হাওর এলাকায় ভ্রমণে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, হিজড়াদের আগ্রাসন। পর্যটকেরা চাঁদা দিতে অপারগতা দেখালে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসেন দলবদ্ধ হিজড়ারা। তাতে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে হাওর ত্যাগ করেন, যা পর্যটন খাতের জন্য মারাত্মক হুমকিও বটে। সুতরাং হাউসবোট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চাঁদাবাজদের উপদ্রব থেকে পর্যটকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসবে পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—এই প্রত্যাশাই করছি আমরা।
লেখক:- কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। আয়তন ১২৬ বর্গকিলোমিটার। হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায়। এই হাওর শুধু মিঠাপানির জলাভূমিই নয়; নয়নাভিরাম এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎসস্থল এই হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর কৃষিজ সম্পদ, মৎস্য আহরণ এবং পর্যটন খাতকে ঘিরে এলাকার সমাজ ব্যবস্থাপনাকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে। বিশেষ করে বর্ষার আগমনে হাওরে জলপ্লাবিত হলে মৎস্য আহরণের পাশাপাশি পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। পর্যটকেরা জলচর পাখির কলকাকলি আর হাওরের বুকে সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি দেখতে ছুটে আসেন দেশের দূরদূরান্ত থেকে, সে সুবাদে তাঁরা রাতযাপনও করেন হাউসবোটে। ফলে অতিরিক্ত চাপে হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এতে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে এবং স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক বিপর্যয়।
টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট বা ভাসমান রিসোর্ট পর্যটকদের জন্য একধরনের অভিনব আকর্ষণ। আধুনিক পর্যটনের এই আকর্ষণকে কেন্দ্র করেই হাউসবোটের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলছে হাওরের বুকে। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এই ধরনের যান্ত্রিক জলযানের উপস্থিতি অশুভ ইঙ্গিত বহন করে, যা সর্বসাধারণ বুঝতে সক্ষম হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টা বুঝলেও নগদ প্রাপ্তির কারণে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ততটা মাথা ঘামান না।
হাউসবোট চালুর পরে পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলেও টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রেক্ষাপটে ইকোসিস্টেম ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পরিবেশবাদীদের কাছে আধুনিক বিনোদনের ছদ্মবেশে বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে ধরা দিচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর একটি সংরক্ষিত এলাকা; ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রথম ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে এই হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রামসার কনভেনশনের আওতায় ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ইচ্ছে করলেও জনসাধারণ বা পর্যটক এখানে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন না; অথচ টাঙ্গুয়ায় ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীতটা। ডিজেলচালিত ইঞ্জিন, উচ্চ শব্দের জেনারেটর, গানবাজনা, বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা এবং মানব বর্জ্যের নিঃসরণ—সব মিলিয়ে হাউসবোটগুলো এক ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। যার প্রভাবে শুধু পানির গুণমান বা মাছের প্রজননেই বিঘ্ন ঘটছে না, হুমকির মুখে পড়েছে পরিযায়ী পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র।
টাঙ্গুয়া নিয়ে আইইউসিএন-এর ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, হাওরে ১৩৪ প্রজাতির মাছ, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২১৯ প্রজাতির দেশি ও বিদেশি পরিযায়ী পাখি, ২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ১০৪ প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার ছিল, যা বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখির সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৭৪টি। ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবসহ, প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন, ওয়ার্ল্ড বার্ড মনিটরিং ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত পাখিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪৯ প্রজাতির ৪৩ হাজার ৫১৬টি পাখির বিচরণ লক্ষ করেন। ওই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৭৭ শতাংশ দেশি ও পরিযায়ী পাখি এখন আর হাওরের ধারেকাছেও আসছে না। এতে করে আমরা হাওরের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের ইঙ্গিত পাচ্ছি।
আসলে পর্যটন খাতকে উৎসাহিত ও লাভবান করতে গিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরকে গলা টিপে ধরেছে সংশ্লিষ্টরা; ফলে হাওরের প্রাণপ্রদীপ এখন নিবু নিবু করছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে মৌসুমে হাওরে প্রতিদিন অবাধে দুই শতাধিক হাউসবোট চলাফেরা করছে। তাতে জেনারেটরের উচ্চ শব্দ, গানবাজনা এবং পর্যটকদের ব্যবহৃত পলিথিনসহ নানান বর্জ্য যত্রতত্র অপসারণের ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক সংকটে পড়েছে। অথচ টাঙ্গুয়ার হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা; তথাপিও অবাধে যাতায়াত করছে যান্ত্রিক জলযান; আর এরই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাউসবোট। যার ফলে উচ্চ শব্দের গানবাজনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের তীরবর্তী এলাকার মানুষজন এবং জলচর পাখিরা। এলাকার মানুষ কষ্টেসৃষ্টে বসবাস করলেও পাখিরা তা মানিয়ে নিতে পারছে না। ওরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাওর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে; তাতে হাওর এখন প্রায় পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মাছের অবস্থাও করুণ; ইঞ্জিনের পাখার ঘূর্ণায়নে ছোট মাছ ও রেণু পোনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের উৎপাদনও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় জেলেদের জীবন-জীবিকায়ও।
এ ছাড়া হাওরের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বলা যায়, অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাউসবোট চলাচলের ফলে হাওরের পরিবেশব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। বিষয়টা প্রশাসনের নজরে এলে সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাউসবোটের ওপর নীতিমালা তৈরি করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবু বোট ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করা সম্ভব হয়নি; আগের মতোই উচ্চ শব্দে গানবাজনা বাজিয়ে হাওরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি মানব বর্জ্য, পলিথিন ও অন্যান্য প্লাস্টিকসামগ্রী যত্রতত্র ফেলছেন। তাতে ক্রমেই টাঙ্গুয়ার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
এ ছাড়া বোটের ভেতরে মাদক সেবনের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন কিছু তরুণ পর্যটক। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বয়স্করা হাওর এলাকায় ভ্রমণে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, হিজড়াদের আগ্রাসন। পর্যটকেরা চাঁদা দিতে অপারগতা দেখালে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসেন দলবদ্ধ হিজড়ারা। তাতে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে হাওর ত্যাগ করেন, যা পর্যটন খাতের জন্য মারাত্মক হুমকিও বটে। সুতরাং হাউসবোট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চাঁদাবাজদের উপদ্রব থেকে পর্যটকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসবে পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—এই প্রত্যাশাই করছি আমরা।
লেখক:- কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
বিতর্ক যাঁর নিত্যসঙ্গী, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যবসায়ী থেকে রাষ্ট্রনায়ক বনে যাওয়া আশি ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তি এমন সব কর্মকাণ্ড করছেন, যেগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টদের চর্চিত ধ্রুপদি সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান। ট্রাম্প এমন অনেক নীতি গ্রহণ করছেন, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র বা তাঁর ঘোষিত লক্ষ্যের
৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রাচীন পদ্ধতি আর ব্যবহার করছেন না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের খবর। জেলেরা এক ধরনের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এই ট্যাবলেট অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা, এটি পানিতে ফেললে জলে থাকা সব মাছ তো মারা যায়ই, সঙ্গে মাটির নিচের মাছগুলোও
৮ ঘণ্টা আগেচুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা—এই প্রবাদকে সত্যে পরিণত করেছেন জনৈক চোর। মাওলানা ভাসানী সেতুর সড়কবাতির তার চুরি করার পর এবার তিনি চুরি করেছেন শতাধিক রিফ্লেক্টর লাইট। পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২৫ আগস্ট, সোমবার আমরা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর তার চুরির প্রতিবেদন
৮ ঘণ্টা আগেনজরুলের মূল শক্তি ছিল তাঁর গতি এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কোমলে-কঠোরে গড়া ছিল তাঁর জীবন। তাই প্রেমের কবিতা, সাম্যের কবিতা, ইসলামি কবিতা কিংবা শ্যামা সংগীত, কোনোখানেই তিনি স্থির হয়ে দাঁড়াননি। যা কিছু সুন্দর, তার প্রতি আস্থা রেখেছেন আজীবন।
১ দিন আগে