Ajker Patrika

তারের পর বাতি

সম্পাদকীয়
তারের পর বাতি

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা—এই প্রবাদকে সত্যে পরিণত করেছেন জনৈক চোর। মাওলানা ভাসানী সেতুর সড়কবাতির তার চুরি করার পর এবার তিনি চুরি করেছেন শতাধিক রিফ্লেক্টর লাইট। পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২৫ আগস্ট, সোমবার আমরা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর তার চুরির প্রতিবেদন নিয়ে একটি সম্পাদকীয় ছেপেছিলাম। ২০ আগস্ট সেতু উদ্বোধনের পর তার চুরি হয়ে যায় ঠিক এর পরদিনই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যতই ঢিলেমি করুন না কেন, চোরের তো রয়েসয়ে বসে থাকার সময় নেই। তিনি তাঁর চুরির সম্পাদকীয়টি ছাপার আগেই হয়তো বাতি চুরির ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন। কারণ, ২৫ আগস্ট সকালে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

বাধ্য হয়েই কি চৌর্যশিল্পে দক্ষ তস্করকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিতে হবে এখন? অথচ এই প্রশংসা করা যেত সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণে জড়িত কর্তাব্যক্তিদের এবং নিরাপত্তার কাজে দায়িত্বরতদের—যদি তাঁরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতেন এবং চোর ধরতে পারতেন। আমরা এখনো জানি না, চোর একজন নাকি একাধিক ব্যক্তি, একই ব্যক্তি তার ও বাতি চুরি করেছেন নাকি ভিন্ন আরেকটি দল মহানন্দে তাঁদের কাজ সেরেছেন। এসব প্রশ্ন ছাপিয়ে সবচেয়ে জরুরি কথা হচ্ছে—চোর যে বা যাঁরাই হোন না কেন, ধরা পড়েনি।

এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন, পরপর দুইবার চুরির ঘটনা ঘটেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই গাফিলতির কারণে। বাতির অভাবে সন্ধ্যা হলে পুরো সেতু এবং দুই পারের কয়েক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক অন্ধকার হয়ে যায়। ফলে সেতুতে যানবাহন চলাচল তো বটেই, এলাকায়ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়। বৈদ্যুতিক তার চুরির পর দুই পাশে দিনে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা কি স্বাভাবিক ব্যাপার? কখনো কোথাও কোনো সেতুর বৈদ্যুতিক তার বা বাতি রক্ষা করার জন্য পুলিশ মোতায়েন করতে হবে কেন?

চোর যদি জেনে থাকেন, এই বাতি তাঁরই দেশের সম্পদ, কোনো না কোনোভাবে তাঁরই ভ্যাট-ট্যাক্সের পয়সায় গড়ে উঠেছে এমন শত শত সেতু-সড়ক-মহাসড়ক আর এসবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট, তাহলেও কি তিনি চুরি করতেন? এটা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়।

প্রথম চুরির পরও কেন সংশ্লিষ্ট কারও টনক নড়বে না, সেটাই প্রশ্ন। এই সময়টায় দিনের চেয়ে জরুরি ছিল রাতে পাহারা দেওয়া। কিন্তু রাতে চোরের চৌর্যশিল্প প্রকাশের সুযোগ করে দিয়ে কেউ পাহারায় থাকে না, এ কেমন কথা! দিনের বেলা চোর মহাশয় আরাম করে ঘুমাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।

দিনে ঘুমিয়ে থাকে নাগরিক সচেতনতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধও। কারণ, এসবের অভাবই কাউকে চোর হতে উদ্বুদ্ধ করে; মূর্খ ছিঁচকে চোরের পাশাপাশি সুশিক্ষিত বড় চোরও উৎপন্ন করে। পার্থক্য—কেউ বাতি চুরি করে আর কেউ পুরো সেতুই চুরি করে নিতে পারে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

সেজ ভাইয়ের চোখ উপড়ে ফেললেন অপর দুই ভাই, বাবাসহ আসামি ৮

রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত