Ajker Patrika

কেউ কথা রাখেনি

সম্পাদকীয়
কেউ কথা রাখেনি

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কবিতায় বলেছেন, ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’—এমন অবস্থা এখন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ৯টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। গজারিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা ফুলদী নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য ২৩ বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও সেখানে কোনো কাজেরই অগ্রগতি হয়নি। ফলে উপজেলা শহরের সঙ্গে গ্রামগুলোর বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে।

৫ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু দুই যুগের বেশি সময় পার হলেও এখনো সেই ভিত্তিপ্রস্তরের ফলকটিই কেবল সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ২৩ বছরে একাধিক সরকারের পরিবর্তন হয়েছে, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বহু মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু গজারিয়ার ৯টি গ্রামের মানুষের জন্য সেতুর কাজটি শুরুই হয়নি।

ফুলদী নদীর ওপর সেতু না থাকায় এই বিপুলসংখ্যক মানুষ যাতায়াতের জন্য ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। গাদাগাদি করে নদী পারাপার হতে গিয়ে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। আর সময়ের তো ব্যাপার আছেই। গ্রামের অন্য প্রান্তে গজারিয়া পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়, গজারিয়া পাইলট গার্লস স্কুল, বাতেনিয়া আলিম মাদ্রাসা ও মাথাভাঙ্গা মহিলা আলিম মাদ্রাসা অবস্থিত। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। শুধু শিক্ষার্থী নয়, এলাকার সাধারণ জনগণকেও দরকারি কাজে নদীর অপর প্রান্ত উপজেলা সদরে নদী পার হয়েই যেতে হয়। মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, নদীর এক পাশে ফায়ার সার্ভিস অফিস থাকা সত্ত্বেও আগুন লাগলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। এই একটি উদাহরণই প্রমাণ করে যে সেতুর অনুপস্থিতি কেবল সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নয়, এটি জরুরি জনসেবা কার্যক্রমেও বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে।

দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই স্পষ্ট করে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কোনো অগ্রগতি না থাকাটা কেবল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নামান্তর নয়, এটি স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনকেও উপেক্ষা করছে। যখন রাজনৈতিক নেতারা এই সেতুটিকে ‘গজারিয়াবাসীর প্রাণের দাবি’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে এই প্রাণের দাবি পূরণে দীর্ঘ ২৩ বছর কেন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলো না?

ফুলদী নদীর ওপরে একটি সেতু নির্মাণ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়াবাসীর জন্য কেবল একটি অবকাঠামো নয়, এটা তাদের জীবনের অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আশ্বাস নয়, অতিদ্রুত সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ। অর্ধলক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়। গজারিয়াবাসীর এই দুঃখ দূর করার দায়িত্ব সরকারের। নাকে তেল দিয়ে না ঘুমিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল যেন গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে, সেটাই এলাকাবাসীর চাওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত